উচ্চতম ন্যায়ালয়: জয়পুর টাউন হল বিবাদে রাজস্থান সরকারকে নোটিস

উচ্চতম ন্যায়ালয়: জয়পুর টাউন হল বিবাদে রাজস্থান সরকারকে নোটিস
🎧 Listen in Audio
0:00

উচ্চতম ন्याয়ালয় জয়পুরের টাউন হল বিবাদে রাজস্থান সরকারকে নোটিস জারি করেছে। আদালত বলেছে, যদি রাজপরিবারের দাবি মেনে নেওয়া হয়, তাহলে সমগ্র জয়পুর তাদের হয়ে যাবে। দুই মাস পর আবার এই মামলার শুনানি হবে।

উচ্চতম ন্যায়ালয়: জয়পুরের ঐতিহাসিক টাউন হলের মালিকানাধিকার নিয়ে জয়পুর রাজপরিবার এবং রাজস্থান সরকারের মধ্যে চলা আইনি লড়াই উচ্চতম ন্যায়ালয়ে পৌঁছেছে। রাজমাता পদ্মিনী দেবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চতম ন্যায়ালয় রাজ্য সরকারকে নোটিস জারি করেছে। আদালত মন্তব্য করে বলেছে, যদি রাজপরিবারের দাবি মেনে নেওয়া হয়, তাহলে "সমগ্র জয়পুর তাদের হয়ে যাবে"। এই বিবাদের কেন্দ্রবিন্দুতে ১৯৪৯ সালের একটি চুক্তি, যার অধীনে টাউন হল এবং কিছু অন্যান্য সম্পত্তি সরকারি ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছিল।

উচ্চতম ন্যায়ালয়ের শুনানি: বিবাদ তীব্রতর হয়েছে

জয়পুরের প্রতিষ্ঠিত টাউন হল (পুরাতন বিধানসভা) নিয়ে চলা বিবাদে সোমবার উচ্চতম ন্যায়ালয়ে গুরুত্বপূর্ণ শুনানি হয়েছে। জয়পুর রাজপরিবারের সদস্যরা, যাদের মধ্যে প্রধানত রাজমাটা পদ্মিনী দেবী, রাজস্থান সরকারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আবেদনে বলা হয়েছে, টাউন হল এবং কিছু অন্যান্য সম্পত্তি মূলত জয়পুর রাজপরিবারের ছিল, যার উপর সরকার অবৈধভাবে দখল করেছে।

রাজপরিবারের পক্ষ থেকে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হরিশ সালাভে যুক্তি দিয়ে বলেছেন, এই মামলা আইনি জটিলতায় পরিপূর্ণ। তিনি সংবিধানের ৩৬২ ও ৩৬৩ অনুচ্ছেদের উল্লেখ করেছেন, যেখানে প্রাক্তন রাজবংশী এবং শাসকদের বিশেষ অধিকারের কথা বলা হয়েছে। সালাভে বলেছেন, এই সম্পত্তি নিয়ে ১৯৪৯ সালে একটি চুক্তি হয়েছিল, যা জয়পুর এবং বিষ্ণুপুরের মতো শাসকদের মধ্যে হয়েছিল, ভারত সরকার সে সময় পক্ষ ছিল না।

এর প্রেক্ষিতে উচ্চতম ন্যায়ালয় তীব্র মন্তব্য করে বলেছে, "তাহলে কি আপনারা বলতে চাইছেন যে ভারত সঙ্ঘের এর সাথে কোনো সম্পর্ক নেই? যদি তাই হয়, তাহলে সমগ্র জয়পুর আপনাদের হয়ে যাবে। যদি আমরা আপনাদের দাবি মেনে নেই, তাহলে রাজস্থানের প্রত্যেক রাজবংশী তাদের সম্পত্তির উপর দাবি জানাতে পারবে।" আদালত স্পষ্ট করে বলেছে, সংবিধানের ৩৬৩ অনুচ্ছেদের উল্লেখ সত্ত্বেও, এই মামলা সম্পূর্ণ স্পষ্ট নয়।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতম ন্যায়ালয়ে আবেদন

এই মামলায় রাজস্থান হাইকোর্ট ইতিমধ্যেই সরকারের পক্ষে রায় দিয়েছে। হাইকোর্ট টাউন হল সহ চারটি প্রধান ভবনকে সরকারি সম্পত্তি ঘোষণা করেছে। রাজপরিবার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতম ন্যায়ালয়ে আবেদন করেছে।

উচ্চতম ন্যায়ালয় রাজ্য সরকারকে নোটিস জারি করেছে এবং বলেছে, যতক্ষণ পর্যন্ত মামলা বিচারাধীন রয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সরকার কোনো পদক্ষেপ নেবে না। এর প্রেক্ষিতে রাজস্থান সরকারের আইনজীবী উত্তর দেওয়ার জন্য ছয় সপ্তাহ সময় চেয়েছে। আদালত বলেছে, পরবর্তী শুনানি দুই মাস পর হবে।

শেষ পর্যন্ত টাউন হল বিবাদ কি?

জয়পুরের টাউন হল, যা একটি ঐতিহাসিক ঐতিহ্য, পূর্বে রাজপরিবারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ১৯৪৯ সালে মহারাজা সওয়াই মানসিংহ দ্বিতীয় এবং ভারত সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছিল, যার অধীনে টাউন হল সহ কিছু সম্পত্তি ব্যবহারের জন্য সরকারকে দেওয়া হয়েছিল।

সমস্যা তখন শুরু হয় যখন ২০২২ সালে রাজস্থান সরকার টাউন হলকে জাদুঘরে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্তের রাজপরিবার তীব্র বিরোধিতা করে। রাজমাটা পদ্মিনী দেবী এবং অন্যান্য সদস্যরা দাবি করেছেন, এই সম্পত্তি অস্থায়ীভাবে সরকারকে দেওয়া হয়েছিল এবং এখন সরকার তা স্থায়ীভাবে দখল করতে চাইছে।

২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত অনেক নোটিস এবং অভিযোগ পাঠানো হয়েছে, কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। শেষ পর্যন্ত রাজপরিবার সিভিল আদালতে মামলা দায়ের করে এবং সম্পত্তির উপর দখল বন্ধ করার, বর্তমান অবস্থা বজায় রাখার এবং ক্ষতিপূরণের দাবি করে।

রাজ্য সরকার ৩৬৩ অনুচ্ছেদের উল্লেখ করে আবেদন খারিজ করার দাবি করে, যা ট্রায়াল কোর্ট প্রত্যাখ্যান করে। পরে হাইকোর্ট ট্রায়াল কোর্টের রায় উল্টে রাজ্য সরকারের পক্ষে রায় দেয়।

আইনি জটিলতা: ৩৬২ ও ৩৬৩ অনুচ্ছেদের গুরুত্ব কি?

রাজপরিবারের আইনজীবী হরিশ সালাভে সংবিধানের ৩৬২ ও ৩৬৩ অনুচ্ছেদের উল্লেখ করেছেন। ৩৬২ অনুচ্ছেদে প্রাক্তন রাজবংশীদের বিশেষ অধিকারের কথা বলা হয়েছে, আর ৩৬৩ অনুচ্ছেদের অধীনে প্রাক্তন রাজ্যের সাথে সম্পর্কিত বিবাদ সরাসরি উচ্চতম ন্যায়ালয়ে লড়াই করা যায়। সালাভের বক্তব্য, ১৯৪৯ সালে জয়পুর এবং বিষ্ণুপুরের মতো রাজবংশীদের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল, সেগুলি আইনিভাবে বৈধ এবং তার সম্মান করা উচিত।

আদালত এ ব্যাপারে বলেছে, যদি ভারত সরকারকে এই চুক্তিতে পক্ষ বলে না মনে করা হয়, তাহলে প্রত্যেক রাজ্য তাদের দাবি নিয়ে সামনে আসবে। এতে দেশে সম্পত্তি বিবাদের বন্যা বয়ে যেতে পারে।

Leave a comment