১২৮ বছর বয়সে পরলোক গমন করলেন পদ্মশ্রী সম্মানিত যোগ গুরু বাবা শিবানন্দ

🎧 Listen in Audio
0:00

বাবা শিবানন্দ সারাজীবন যোগ সাধনা, সাধারণ খাদ্য এবং যোগী জীবনযাপনকে আঁকড়ে ধরেছিলেন। প্রতিটি নির্বাচনে বারাণসী গিয়ে ভোট দিতেন। সম্প্রতি প্রয়াগরাজ কুম্ভমেলায় তিনি সংগম স্নানও করেছিলেন।

বারাণসী | দেশের সবচেয়ে বৃদ্ধ যোগ গুরু এবং পদ্মশ্রী সম্মানিত সাধু বাবা শিবানন্দ শনিবার রাত ৮:৪৫ মিনিটে বারাণসীতে পরলোক গমন করেছেন। ১২৮ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বাবা শিবানন্দ গত তিন দিন ধরে বিএইচইউ (BHU)-এর স্যার সুন্দরলাল হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, যেখানে তাঁর শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। বয়সজনিত শারীরিক সমস্যার কারণে চিকিৎসকদের পুরো দল চিকিৎসায় ব্যস্ত ছিল, কিন্তু তাঁর অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি।

সাধারণ জীবন, উচ্চ চিন্তাধারা—যোগই ছিল জীবনযাপন

বাবা শিবানন্দের পুরো জীবন যোগ, সংযম এবং সাধারণতাকে উৎসর্গ করা ছিল। তিনি প্রতিদিন ব্রহ্মমুহূর্তে উঠে কঠিন যোগাসন এবং ধ্যান করতেন। তাঁর খাদ্য ছিল সীমিত, সাধারণ এবং সেদ্ধ। তিনি ভাত খেতেন না এবং বলতেন—“ইচ্ছাই দুঃখের কারণ।” তিনি সারাজীবন ব্রহ্মচর্য পালন করেছিলেন এবং নিজেকে ঈশ্বর এবং সাধনার প্রতি উৎসর্গ করেছিলেন।

শৈশবে ক্ষুধার কবলে পরিবার

শিবানন্দ বাবার জন্ম ৮ আগস্ট ১৮৯৬ সালে তৎকালীন বঙ্গের শ্রীহাট্টী (বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থিত) এ একটি অত্যন্ত দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে হয়েছিল। ছয় বছর বয়সে তাঁর বাবা-মা এবং বোন ক্ষুধার কারণে মারা যান। এরপর তাঁকে নবদ্বীপের সাধু বাবা ঔঁকারানন্দ গোস্বামীর অভিভাবকত্বে সোপর্দ করা হয়, সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর আধ্যাত্মিক জীবন।

স্কুলে যাননি, তবুও প্রবাহিত ইংরেজি বলতে পারতেন

শিক্ষার কোনও আনুষ্ঠানিক ডিগ্রি না থাকা সত্ত্বেও বাবা শিবানন্দ প্রবাহিত ইংরেজি বলতে পারতেন। তিনি সবকিছু তাঁর গুরুজনের কাছ থেকে শিখেছিলেন। তাঁর বক্তব্যে জীবনের সারমর্ম, অভিজ্ঞতা এবং গভীরতা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হতো। তিনি বলে যেতেন, "আসক্তি থেকেই মোহ, মোহ থেকেই দুঃখ, এবং দুঃখ থেকেই বিপথগামিতা জন্ম নেয়।"

পদ্মশ্রী সম্মানে জাতীয় স্বীকৃতি

২১ মার্চ, ২০২২ সালে রাষ্ট্রপতি ভবনে আয়োজিত পদ্ম সম্মান অনুষ্ঠানে বাবা শিবানন্দকে 'পদ্মশ্রী' সম্মানে ভূষিত করা হয়। তিনি খালি পায়ে (barefoot) রাষ্ট্রপতি ভবনে উপস্থিত হন। যখন তাঁকে সম্মান প্রদান করা হয়, তখন তিনি হাঁটুতে বসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ জানান। এই দৃশ্য সমগ্র দেশের জন্য অনুভূতিপূর্ণ ছিল। প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজেই তাঁর আসন থেকে উঠে বাবা শিবানন্দের সম্মানে নতিবন্ধন করেন।

প্রতিটি নির্বাচনে বারাণসী এসে ভোট দিতেন

যেখানেই থাকুক না কেন, বাবা শিবানন্দ নির্বাচনের দিন বিশেষভাবে বারাণসী এসে তাঁর ভোটাধিকার অবশ্যই প্রয়োগ করতেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল যে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য প্রত্যেক নাগরিকের অংশগ্রহণ জরুরি।

মহাকুম্ভে নিয়েছিলেন শেষ স্নান

২০২৪ সালের প্রয়াগরাজ কুম্ভমেলায় তিনি পবিত্র সংগমে স্নান করে আস্থার নিমজ্জন করেছিলেন। তিনি শিবভক্ত ছিলেন এবং প্রতিদিন রুদ্রাভিষেক, জপ এবং যোগ সাধনায় নিমগ্ন থাকতেন। তাঁর কথা ছিল শিবের ভক্তি থেকেই দেহ, মন এবং আত্মার শুদ্ধিকরণ হয়।

হরিশ্চন্দ্র ঘাটে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া

বাবা শিবানন্দের আশ্রম বারাণসীর দুর্গাকুণ্ড এলাকায় অবস্থিত কবির নগরে। সেখান থেকেই তাঁর শেষযাত্রা বের হয় এবং হরিশ্চন্দ্র ঘাটে বিধিপূর্বক তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। শেষযাত্রায় অসংখ্য ভক্ত, সাধু-সন্ত এবং স্থানীয় নাগরিক উপস্থিত ছিলেন।

Leave a comment