সোশ্যাল মিডিয়ার চকচকে আলোর আড়ালে লুকিয়ে থাকা অন্ধকার আরও একটা যুবক জীবন গ্রাস করে নিল। ২৪শে এপ্রিল ২৩ বছর বয়সী সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার মিশা আগ্রওয়াল আত্মহত্যা করেন, আর এই খবর শুধু তার ভক্তদের নয়, সমগ্র ডিজিটাল জগতকেই কাঁপিয়ে তুলেছে।
মিশা আগ্রওয়ালের আত্মহত্যা: সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার মিশা আগ্রওয়ালের মৃত্যুর খবর তার ভক্ত ও পরিবারের মধ্যে গভীর শোকের সৃষ্টি করেছে। ২৪শে এপ্রিল তার মৃত্যু হয়, এবং ২৬শে এপ্রিল তার বোন একটি পোস্টের মাধ্যমে এই মর্মান্তিক ঘটনার কথা জানিয়েছেন। যদিও প্রথমে মিশার মৃত্যুর কারণ প্রকাশ করা হয়নি, কিন্তু এখন তার বোন আরেকটি পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছেন যে মিশা ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন এবং এটাই তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ।
মিশা আগ্রওয়ালের বোন ইনস্টাগ্রামে একটি ভাবুক পোস্ট শেয়ার করেছেন, যেখানে মিশার ফোনের ওয়ালপেপার দেখানো হয়েছে, যাতে তার ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল এবং ১ মিলিয়ন ফলোয়ার্স দেখা যাচ্ছে। এই পোস্টের মাধ্যমে বোন বলেছেন যে মিশার একমাত্র লক্ষ্য ছিল সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলোয়ার্স বাড়ানো, কিন্তু সে বুঝতে পারেনি যে ইনস্টাগ্রাম আসল জীবন নয় এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া ফলোয়ার্স আসল ভালোবাসা হতে পারে না।
ইনস্টাগ্রাম জীবনের কারণ, ফের মৃত্যুর কারণ
মিশা আগ্রওয়াল, যিনি ইনস্টাগ্রামে লক্ষ লক্ষ ফলোয়ার্স নিয়ে একজন উঠতি ডিজিটাল ক্রিয়েটর ছিলেন, তার জীবনের সম্পূর্ণ কেন্দ্র করে তুলেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়াকে। তার বোনের মতে, মিশার একমাত্র লক্ষ্য ছিল ১ মিলিয়ন ফলোয়ার্স পেতে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় স্থায়ী পরিচয় তৈরি করা। তার মোবাইলের ওয়ালপেপারও ছিল তার ইনস্টা প্রোফাইল, যা দেখায় যে সে এই ডিজিটাল পরিচয়ে কতটা গুরুত্ব দিত।
কিন্তু এপ্রিল মাসে তার ফলোয়ার্সের সংখ্যা কমতে শুরু করে, যা মিশাকে ভেঙে দিয়েছিল। সে নিজেকে ব্যর্থ মনে করতে শুরু করে এবং তার ভবিষ্যৎ নিয়ে ভীত থাকত। বোনের মতে, সে প্রায়শই কেঁদে কেঁদে বলত, যদি ফলোয়ার্স কমে যায় তাহলে আমি কি করব?
বোন বুঝিয়েছিলেন, কিন্তু...
মিশার বোন তাকে বারবার বুঝিয়েছিলেন যে ইনস্টাগ্রাম জীবনের একটি ছোট অংশ, সম্পূর্ণ গল্প নয়। সে তাকে তার এলএলবি ডিগ্রি, পিসিএস-জে-র প্রস্তুতি এবং তার ভেতরের আসল প্রতিভার কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার নেশা এবং পরিচয় হারানোর ভয় এতটাই প্রবল হয়ে উঠেছিল যে মিশা নিজেকে বাঁচাতে পারেনি।
২৬শে এপ্রিল, যা মিশার জন্মদিন ছিল, সেদিনই তার বোন সোশ্যাল মিডিয়ায় তার মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। পোস্টে লেখা ছিল ইনস্টাগ্রাম কোনও আসল জীবন নয় এবং ফলোয়ার্স আসল ভালোবাসা নয়। এটি ছিল একটি আবেগময় আহ্বান, বিশেষ করে সেই যুবকদের জন্য যারা তাদের আত্ম-মূল্যকে শুধু লাইক এবং ফলোয়ার্সের সংখ্যার সাথে যুক্ত করে।
শুধু ইনস্টাগ্রামের কারণে কি মৃত্যু?
যদিও মিশার বোন ইনস্টাগ্রাম থেকে উদ্ভূত ডিপ্রেশনকে আত্মহত্যার প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করেছেন, তবে গল্প এখানেই শেষ হয় না। মিশার এক বন্ধু কমেন্ট করে এই মর্মান্তিক ঘটনার পিছনে আরও একটি সম্ভাব্য কারণের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তার মতে, মিশা সম্ভবত কোনও ব্যক্তিগত ট্রমার মধ্যে দিয়েও যাচ্ছিলেন। বন্ধুটি লিখেছেন যে মিশা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন এবং তিনি বিশ্বাস করতেন যে তিনি তার লক্ষ্য অর্জন করবেন। তাই জরুরি যে পরিবার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি আত্মহত্যার তদন্ত গভীরভাবে করবে।
মিশা আগ্রওয়ালের মর্মান্তিক মৃত্যু আবারও এই প্রশ্ন তুলে ধরেছে যে, আজকের যুবক কি সোশ্যাল মিডিয়ার মিথ্যা আলোর পিছনে তার আসল পরিচয় হারাচ্ছে? কি আমরা ‘লাইক’ এবং ‘ফলোয়ার্স’-কে আমাদের আত্মসম্মানের ভিত্তি করে তুলেছি?