অнил কাপুরের জন্মদিন ২৪শে ডিসেম্বর পালিত হয়। অনিল কাপুর বলিউডে তাঁর অভিনয় যাত্রা শুরু করেন ১৯৭৯ সালে, উমেশ মেহরার ছবি 'হামারে তুমহারে' দিয়ে। এই ছবিতে তিনি সহ-অভিনেতার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। এরপর, তিনি 'হাম পাঁচ' (১৯৮০) এবং 'শক্তি' (১৯৮২) এর মতো ছবিতেও কাজ করেন। যদিও, ১৯৮৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি 'ও সাত দিন' থেকে তিনি পরিচিতি লাভ করেন, যেখানে তিনি প্রথম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। এই ছবিতে তাঁর স্বাভাবিক অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করেছিল।
কেরিয়ারের শুরুতে অনিল দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমাতেও কাজ করেছেন। তিনি তেলুগু সিনেমা 'বংশ বৃক্ষম' এবং মণিরত্নমের কন্নড় সিনেমা 'পল্লবী অনুপল্লবী'-তে অভিনয় করেন। ১৯৮৪ সালে যশ চোপড়ার ছবি 'মশাল'-এ তাঁর শক্তিশালী অভিনয় তাঁকে একজন অসাধারণ অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।
স্টারডমের শিখরে
১৯৮৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি 'মেরি জং'-এ একজন তরুণ আইনজীবীর ভূমিকায় অনিল কাপুর নতুন পরিচিতি পান। এরপর তিনি একের পর এক হিট ছবি উপহার দেন, যেমন - 'কর্মা', 'মি. ইন্ডিয়া', 'তেজাব', 'রাম লখন', 'বেটা', 'বিরাসত' এবং 'নায়ক'। এর মধ্যে 'মি. ইন্ডিয়া' এবং 'তেজাব' তাঁকে সুপারস্টারের খ্যাতি এনে দেয়। তাঁর প্রতিটি ছবিতে তাঁর প্রাণশক্তি, স্বতন্ত্র ভঙ্গি এবং চমৎকার অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।
ব্যক্তিগত জীবন
অнил কাপুরের জন্ম মুম্বাইয়ের তিলক নগরে। তিনি বিখ্যাত প্রযোজক সুরিন্দর কাপুরের ছেলে। তাঁর বড় ভাই বনি কাপুর একজন স্বনামধন্য প্রযোজক, এবং ছোট ভাই সঞ্জয় কাপুরও অভিনেতা।
১৯৮৪ সালে অনিল কাপুর সুনিতা কাপুরকে বিয়ে করেন। তাঁদের তিন সন্তান রয়েছে—সোনম কাপুর (অভিনেত্রী), রিয়া কাপুর (প্রযোজক), এবং হর্ষবর্ধন কাপুর (অভিনেতা)। কাপুর পরিবার ভারতীয় সিনেমায় তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র এবং ভূমিকা
· অнил কাপুর ১৯৮০ থেকে ২০২০-এর দশক পর্যন্ত প্রতিটি সময়েই নিজের আলাদা পরিচিতি তৈরি করেছেন।
· 'তেজাব' (১৯৮৮): মুন্নার ভূমিকায় তিনি তাঁর আবেগপূর্ণ গভীরতা দেখিয়েছেন।
· 'মি. ইন্ডিয়া' (১৯৮৭): অরুণ ভার্মার চরিত্র ভারতীয় সিনেমার একটি মাইলফলক।
· 'বেটা' (১৯৯২): এই সিনেমার জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছিলেন।
· 'বিরাসত' (১৯৯৭): গ্রামীণ পটভূমিতে তাঁর অভিনয় সমালোচকদের দ্বারাও প্রশংসিত হয়েছিল।
· 'নায়ক' (২০০১): একজন সাধারণ মানুষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকায় তাঁর অভিনয় আজও স্মরণীয়।
· 'স্লামডগ মিলিয়নিয়ার' (২০০৮): এতে তিনি আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশংসা পান।
পুরস্কার এবং স্বীকৃতি
· ২০০১: সেরা অভিনেতা (পুকর)
· ২০০৮: স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ড (গান্ধী মাই ফাদার)
· ১৯৮৫: সেরা সহ-অভিনেতা (মশাল)
· ১৯৮৯: সেরা অভিনেতা (তেজাব)
· ১৯৯৩: সেরা অভিনেতা (বেটা)
'এভারগ্রীন' খেতাব
চার দশকের কর্মজীবনে অনিল কাপুর নিজেকে সবসময় প্রাসঙ্গিক রেখেছেন। তাঁর প্রাণশক্তি এবং ফিটনেস আজও তাঁকে বলিউডের 'এভারগ্রীন হিরো' করে রেখেছে। ২০১৫ সালে 'দিল ধড়কনে দো' এবং 'মুবারকান' (২০১৭) এর মতো ছবিতে তিনি তাঁর বহুমুখী প্রতিভার প্রমাণ দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক পরিচিতি
অнил কাপুর হলিউডেও নিজের ছাপ রেখেছেন। ২০০৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত 'স্লামডগ মিলিয়নিয়ার' তাঁকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দিয়েছে। এছাড়াও, তিনি টেলিভিশন সিরিজ '২৪'-এর ভারতীয় সংস্করণে প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, যা বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছিল।
অнил কাপুর শুধু একজন অভিনেতাই নন, ভারতীয় সিনেমার একজন প্রতীক। তাঁর প্রতিটি সিনেমায় নতুন কিছু দেখার মতো থাকে। চার দশকের বেশি সময় ধরে তিনি তাঁর পরিশ্রম ও নিষ্ঠা দিয়ে নিজেকে একজন 'এভারগ্রীন' তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর কর্মজীবন এবং জীবন আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা।
```