২০২৪ সালের ১৫ই ডিসেম্বর সঙ্গীত জগৎ এক অমূল্য রত্ন হারালো। তবলার জাদুকর, ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি এনে দেওয়া উস্তাদ জাকির হুসেন আর আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তাঁর সঙ্গীত সাধনা ও সুরের প্রতিধ্বনি যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবে।
সঙ্গীতের ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উস্তাদ
১৯৫১ সালের ৯ই মার্চ মহারাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী জাকির হুসেন ছিলেন ভারতীয় তবলা বাদনের এক জীবন্ত প্রতীক। তাঁর পিতা, মহান তবলা বাদক উস্তাদ আল্লা রাক্খা, তাঁকে সঙ্গীতের সূক্ষ্মতা শেখিয়েছিলেন এবং কম বয়স থেকেই জাকির সাহেব নিজের প্রতিভার প্রকাশ করেছিলেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি তবলা বাদনের জগতে পদার্পণ করেন এবং তাঁর জাদুকর আঙ্গুলের স্পর্শে সঙ্গীতপ্রেমীদের মুগ্ধ করেছিলেন।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের পরিচয়
জাকির হুসেন কেবল ভারতেই নয়, পুরো বিশ্বে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। ১৯৭৩ সালে তাঁর প্রথম অ্যালবাম ‘লিভিং ইন দ্য ম্যাটেরিয়াল ওয়ার্ল্ড’ প্রকাশিত হয়, যা তাঁকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি এনে দেয়। ১৯৭৯ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি অনেক খ্যাতনামা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন এবং তবলার বাদনের সুরকে বিশ্ব মঞ্চে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
তিনি ইয়ো-ইয়ো মা, জন ম্যাকলাফ্লিন, মিকি হার্ট এবং আরও অনেক दिग्गज সঙ্গীতশিল্পীর সাথে মিলে নতুন পরীক্ষানিরীক্ষা করেছেন এবং ভারতীয় সঙ্গীতকে ফিউশন জগতেও একটি আলাদা স্থান দিয়েছেন। তাঁর অনন্য শৈলী ও উদ্যম তবলা বাদনে একটি নতুন পরিচয় এনে দিয়েছে।
সম্মান ও অর্জন
• পদ্মশ্রী (১৯৮৮): ৩৭ বছর বয়সে এই সম্মান পেয়েছিলেন তিনি, যা তাঁকে সবচেয়ে কনিষ্ঠ পুরস্কৃত শিল্পী করে তোলে।
• পদ্মভূষণ (২০০২): ভারতীয় সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের জন্য।
• গ্র্যামি পুরস্কার (১৯৯২ এবং ২০০৯): ভারতীয় সঙ্গীতকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পরিচিতি দানের জন্য।
• পদ্মবিভূষণ (২০২৩): রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু কর্তৃক সঙ্গীতে অবদানের জন্য সম্মানিত।
সঙ্গীতের ঐতিহ্য অমর থাকবে
জাকির হুসেন কেবল একজন তবলা বাদক ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন সঙ্গীতের এক জীবন্ত রূপ। তাঁর প্রতিটি ধাপ, প্রতিটি ছন্দ, এবং প্রতিটি বন্ধিশে ছিল একটি গল্প, একটি অনুভূতি। আজ যদিও তিনি আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাঁর সৃষ্ট সুর, তাঁর তবলার ধাপ এবং তাঁর সঙ্গীত সাধনা সর্বদা সঙ্গীতপ্রেমীদের অন্তরে জীবন্ত থাকবে।
তাঁর স্মৃতি ও সঙ্গীতের এই অমর ঐতিহ্যকে শ্রদ্ধাঞ্জলি।