শীতলা অষ্টমীর ব্রতের গুরুত্ব: শীতলা অষ্টমী, যাকে বসৌড়াও বলা হয়, হিন্দু ধর্মে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই ব্রত চৈত্র কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমী তিথিতে পালিত হয়। এই দিনে মাতা শীতলার বিধিপূর্বক পূজা করলে ব্যক্তি নিরোগী জীবনের আশীর্বাদ লাভ করে। বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনে মাতার উপাসনা করলে ছোটখাটো রোগ এবং ত্বকের অন্যান্য রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
শীতলা অষ্টমী ২০২৫: তিথি এবং শুভ মুহূর্ত
এই বছর শীতলা অষ্টমী ২২ মার্চ ২০২৫ তারিখে পালিত হবে। পঞ্জিকার অনুসারে, চৈত্র কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমী তিথির আরম্ভ ২২ মার্চ প্রাতঃ ৪:২৩ টায় এবং এটি ২৩ মার্চ প্রাতঃ ৫:২৩ টায় শেষ হবে। শীতলা মাতার পূজার শুভ মুহূর্ত প্রাতঃ ৬:৪১ টা থেকে সায়ং ৬:৫০ টা পর্যন্ত থাকবে।
বসৌড়া ব্রতের প্রথা এবং বাঁশি ভোজনের গুরুত্ব
শীতলা অষ্টমীর দিন ঘরে চুলা জ্বালানো নিষিদ্ধ বলে মনে করা হয়। তাই এই ব্রতের সবচেয়ে বিশেষ ব্যাপার হল এই দিনে মাতা শীতলাকে বাঁশি ভোজনের ভোগ দেওয়া হয়। এই প্রথার পিছনে একটি বিশেষ বিশ্বাস রয়েছে যে মাতা শীতলাকে ঠান্ডা জিনিস বেশি প্রিয়, তাই এই দিনে গরম তাজা খাবার রান্নার পরিবর্তে একদিন আগে অর্থাৎ সপ্তমী তিথিতে খাবার তৈরি করা হয় এবং অষ্টমী তিথিতে সেই খাবারই মাতাকে অর্পণ করা হয়। এই খাবারে চাল, গুড়, দই, বাজরার রুটি এবং মিষ্টি পিঠা প্রধানত অন্তর্ভুক্ত থাকে।
শীতলা মাতার পূজা বিধি
• প্রাতঃ স্নান করে পরিষ্কার বস্ত্র পরিধান করুন, শীতলা মাতার ধ্যান করুন
• মাতা শীতলার প্রতিমা বা ছবির সামনে প্রদীপ জ্বালান।
• ফুল, চাল, হলুদ এবং রোলী দিয়ে মাতার পূজা করুন।
• মাতা শীতলাকে বাঁশি ভোজনের ভোগ দিন, যাতে প্রধানত পুড়ি, চাল, মিষ্টি পিঠা ইত্যাদি থাকে।
• কথার বর্ণনা করুন এবং পরিবারের সকল সদস্যের সাথে মাতার আশীর্বাদ গ্রহণ করুন।
শীতলা অষ্টমীর ধার্মিক এবং বৈজ্ঞানিক দিক
ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, শীতলা মাতাকে বাঁশি ভোজন অর্পণ করলে তিনি প্রসন্ন হন এবং তাঁর ভক্তদের রোগ থেকে রক্ষা করেন। অন্যদিকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এই প্রথার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে যে পুরোনো সময়ে ছোটখাটো রোগ এবং ত্বকের রোগ থেকে বাঁচার জন্য পরিচ্ছন্নতা এবং ঠান্ডা খাবারের উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হত। এ কারণেই এই দিনে বাঁশি ভোজন গ্রহণ এবং পরিচ্ছন্নতার বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার প্রথা গড়ে উঠেছে।
শীতলা অষ্টমীর লোকপ্রিয়তা
শীতলা অষ্টমী বিশেষ করে উত্তর ভারত, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট এবং হরিয়ানায় ব্যাপক উৎসাহের সাথে পালিত হয়। এটি বিভিন্ন অঞ্চলে বসৌড়া, বুড়ো বসৌড়া এবং বসিয়ৌরা নামেও পরিচিত। এই দিনে ঘরে ঘরে মাতা শীতলার পূজা করা হয় এবং সকল ভক্তগণ দেবীর কাছে তাদের পরিবারের কল্যাণ ও সুস্বাস্থ্যের কামনা করেন।
শীতলা অষ্টমী কেবলমাত্র একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি স্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্নতা এবং প্রথার একটি অনন্য সংমিশ্রণ। এই দিনে মাতা শীতলার পূজা করলে ভক্তরা কেবলমাত্র আধ্যাত্মিক শান্তিই পান না, বরং তাদের স্বাস্থ্যের রক্ষাও হয়। এই পবিত্র দিনে মাতা শীতলার কৃপা লাভের জন্য পূর্ণ শ্রদ্ধাভরে ব্রত ও পূজা করা হয়।