চৈত্র নবরাত্রি ও হিন্দু নববর্ষের পবিত্র সংগম: হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, প্রতি বছর চৈত্র শুক্ল প্রতিপদা থেকে নতুন সংবৎসরের আরম্ভ হয়। ২০২৫ সালে এই শুভ দিনটি ৩০ মার্চ পড়বে, যখন চৈত্র নবরাত্রিও আরম্ভ হবে। এই দিনে মা দুর্গার পূজার সাথে সাথে নববর্ষেরও শুরু হয়। কিন্তু, হিন্দু নববর্ষের গণনা কেন শুধুমাত্র চৈত্র নবরাত্রি থেকেই করা হয়? এর পিছনে অনেক ধর্মীয়, জ্যোতিষীয় এবং পৌরাণিক রহস্য লুকিয়ে আছে। আসুন, এই গূঢ় সত্যটি বুঝে নেই।
পৌরাণিক দৃষ্টিভঙ্গি: যখন সৃষ্টির হয়েছিল আরম্ভ
পৌরাণিক গ্রন্থ অনুযায়ী, চৈত্র শুক্ল প্রতিপদা তিথিতেই ভগবান ব্রহ্মা সৃষ্টির রচনা আরম্ভ করেছিলেন। দেবী পুরাণে উল্লেখ আছে যে এই দিনে আদিশক্তি ত্রিদেব – ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহেশকে তাদের কর্মের দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন। এই দিন থেকে সৃষ্টির পরিচালনা আরম্ভ হয়েছিল, তাই এটিকে নববর্ষের প্রথম দিন বলে মনে করা হয়।
জ্যোতিষীয় গুরুত্ব: শক্তি ও নবজীবনের সংযোগ
চৈত্র মাসে সূর্য উত্তরায়ণে প্রবেশ করেছে, যার ফলে পরিবেশে ইতিবাচক শক্তির প্রবাহ বেড়ে যায়। এই সময় দিনগুলি দীর্ঘ হতে থাকে, গাছপালায় নতুন পাতা আসে, ক্ষেতের ফসল পেকে ওঠে এবং প্রকৃতি নবজীবনে পূর্ণ হয়ে ওঠে। এই সময়টিকে যে কোন নতুন কাজের শুভারম্ভের জন্য শ্রেষ্ঠ বলে মনে করা হয়।
চৈত্র নবরাত্রি: শক্তি উপাসনার দিব্য কাল
চৈত্র নবরাত্রিকে শক্তি সাধনার বিশেষ কাল বলে মনে করা হয়। নয় দিন ধরে ভক্তগণ মা দুর্গার বিভিন্ন রূপের আরাধনা করেন। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, যখন ব্রহ্মা দেব সৃষ্টির রচনা করছিলেন, তখন তিনি দেবী দুর্গার উপাসনা করেছিলেন, যার ফলে তিনি এই কাজে সফল হয়েছিলেন। এ কারণেই নববর্ষের শুরু শক্তি আরাধনার সাথে করা হয়।
ভারতে হিন্দু নববর্ষের বিভিন্ন রূপ
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে হিন্দু নববর্ষকে বিভিন্ন নামে উদযাপন করা হয়:
গুড়ি পড়ওয়া (মহারাষ্ট্র)
উগাদি (অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্ণাটক)
চেটি চাঁদ (সিন্ধি সম্প্রদায়)
বিক্রম সংবৎ (উত্তর ভারত)
পয়লা বৈশাখ (বাংলা)
এই সমস্ত উৎসবের প্রধান উদ্দেশ্য হল নববর্ষের স্বাগত জানানো এবং দেবদেবীদের আরাধনা করা।
হিন্দু নববর্ষ: একটি আধ্যাত্মিক বার্তা
হিন্দু নববর্ষ কেবল একটি তিথি নয়, বরং এটি আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং আধ্যাত্মিক চেতনার প্রতীক। এটি আমাদের শেখায় যে প্রতিটি নতুন বছর একটি নতুন সূচনার সুযোগ, এবং আমাদের জীবনকে ইতিবাচকতা, শক্তি এবং নতুন প্রতিজ্ঞা দিয়ে পূর্ণ করতে হবে। ৩০ মার্চ ২০২৫ সালে যখন চৈত্র নবরাত্রি আরম্ভ হবে, তখন হিন্দু নববর্ষও আরম্ভ হবে। এই পবিত্র উপলক্ষে মা দুর্গার আরাধনা করুন এবং নতুন বছরটি শ্রদ্ধা, ভক্তি এবং আধ্যাত্মিক শুদ্ধতার সাথে উদযাপন করুন।