ট্রাম্পের ২৭% শুল্ক: ভারতের ইলেকট্রনিক্স ও গহনা শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত, ফার্মা ও বস্ত্রে স্বস্তি

🎧 Listen in Audio
0:00

ট্রাম্প ভারত থেকে আমদানি পণ্যের উপর ২৭% শুল্ক আরোপ করেছেন, যার ফলে ইলেকট্রনিক্স ও গহনা শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কিন্তু ফার্মা ও বস্ত্র শিল্প কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে। ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তিতে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ভারত-মার্কিন বাণিজ্য: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত থেকে আমদানি করা সকল পণ্যের উপর ২৭% নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারতের অনেক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, অন্যদিকে কিছু খাত উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সিদ্ধান্ত ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ককে দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবিত করতে পারে।

ভারত-মার্কিন বাণিজ্য: ভারত কী কিনে এবং কী বিক্রি করে?

ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রধানত ওষুধ, টেলিযোগাযোগ সরঞ্জাম, রত্ন ও আভূষণ, পেট্রোলিয়াম পণ্য, সোনা এবং সুতি বস্ত্র রপ্তানি করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারত থেকে এই পণ্যগুলির প্রচুর পরিমাণে ক্রয় করে, যার ফলে ভারতীয় কোম্পানিগুলি ব্যাপক লাভবান হয়। অন্যদিকে, ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কাঁচা তেল, কয়লা, পেট্রোলিয়াম পণ্য, ইলেকট্রনিক মেশিনারি এবং মহাকাশ সংক্রান্ত সরঞ্জাম আমদানি করে। উভয় দেশের বাণিজ্য ভারসাম্যে সবসময়ই অসমতা বিদ্যমান, কারণ ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বেশি রপ্তানি করে এবং সেখান থেকে কম আমদানি করে।

কোন শিল্পগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে?

এই নতুন করের সবচেয়ে বড় প্রভাব ভারতীয় ইলেকট্রনিক্স এবং রত্ন-আভূষণ শিল্পের উপর পড়তে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর ভারত থেকে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের ইলেকট্রনিক্স এবং ৯ বিলিয়ন ডলারের গহনা ও রত্ন ক্রয় করে। আগে এই পণ্যগুলির উপর কর কম ছিল, কিন্তু এখন ২৭% কর আরোপের ফলে ভারতীয় কোম্পানিগুলির জন্য মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতা করা কঠিন হতে পারে। এর ফলে রপ্তানি কমতে পারে এবং হাজার হাজার কর্মসংস্থান ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।

তবে, অটো পার্টস এবং অ্যালুমিনিয়াম শিল্প এই নতুন কর থেকে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে, কারণ এগুলি ২৭% শুল্কের আওতায় আসেনি। তবে, এগুলির উপর ইতিমধ্যেই ২৫% আলাদা কর প্রযোজ্য, যা এই খাতগুলির জন্য ইতিমধ্যেই একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিদ্যমান।

কোন পণ্যগুলি শুল্কমুক্ত?

ফার্মা ও শক্তি পণ্য এই নতুন কর থেকে ছাড় পেয়েছে। ভারত প্রতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারের ফার্মা ও শক্তি পণ্য রপ্তানি করে। তবে, ট্রাম্প প্রশাসন আগে এগুলির উপরও কর আরোপের কথা বলেছিল, যার ফলে ভবিষ্যতে এগুলির উপরও শুল্ক বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।

এছাড়াও, আরও কিছু পণ্য এই নতুন কর থেকে ছাড় পেয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে তামা, সেমিকন্ডাক্টর, কাঠ এবং মূল্যবান ধাতু। শক্তি এবং খনিজ সংক্রান্ত কিছু পণ্য, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাওয়া যায় না, সেগুলিও এই করের বাইরে রাখা হয়েছে।

ভারতীয় বস্ত্র শিল্প কি উপকৃত হবে?

ভারতের বস্ত্র শিল্প এই সিদ্ধান্তের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরিবর্তে উপকৃত হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ এবং চীন থেকে আসা কাপড়ের উপর প্রচুর পরিমাণে কর আরোপ করেছে, যার মধ্যে ভিয়েতনামের উপর ৪৬%, বাংলাদেশের উপর ৩৭% এবং চীনের উপর ৩৪% কর অন্তর্ভুক্ত। এর তুলনায় ভারতের উপর কম কর আরোপ করা হয়েছে, যার ফলে ভারতীয় বস্ত্র শিল্প মার্কিন বাজারে আরও বেশি সুযোগ পেতে পারে।

তবে, ভারতীয় বস্ত্র শিল্পের অবদান দেশের জিডিপিতে মাত্র ২%, যখন বাংলাদেশের জন্য এটি ১১% এবং ভিয়েতনামের জন্য ১৫%। সুতরাং, এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারত লাভবান হলেও এর ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রভাব সীমিত থাকবে।

অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতের অবস্থা কেমন?

ভারত সরকার এই নতুন করের প্রভাব বিশ্লেষণ করছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, এই সিদ্ধান্ত ভারতের জন্য সম্পূর্ণ ক্ষতিকারক নয়, বরং এর প্রভাব মিশ্রিত হবে। কিছু খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অন্যদিকে কিছু খাত লাভবান হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশের উপর এর চেয়েও বেশি কর আরোপ করেছে। চীনের উপর ৩৪%, জাপানের উপর ২৪%, থাইল্যান্ডের উপর ৩৬%, মালয়েশিয়ার উপর ২৪%, তাইওয়ানের উপর ৩২% এবং দক্ষিণ কোরিয়ার উপর ২৫% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ভিয়েতনাম সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কারণ তার পণ্যের উপর ৪৬% কর আরোপ করা হয়েছে। এই দেশগুলির উপর বেশি কর আরোপের ফলে ভারতীয় কোম্পানিগুলি মার্কিন বাজারে তাদের অংশীদারিত্ব বাড়ানোর সুযোগ পেতে পারে।

Leave a comment