লাইফ ইন্সুরেন্স পলিসির সারেন্ডার ভ্যালুতে বড় পরিবর্তন

🎧 Listen in Audio
0:00

নতুন ব্যবস্থার অধীনে LIC (লাইফ ইন্সুরেন্স কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া) এবং অন্যান্য বীমা কোম্পানির পলিসির সারেন্ডার ভ্যালু সংক্রান্ত বড় পরিবর্তন করা হয়েছে।

ভারতীয় জীবন বীমা নিগম (LIC) এবং অন্যান্য বীমা কোম্পানির পলিসি মাঝপথে ছাড়ার লক্ষ লক্ষ গ্রাহকের জন্য স্বস্তির সংবাদ এসেছে। বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা IRDAI (ভারতীয় বীমা নিয়ন্ত্রক এবং উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) সারেন্ডার ভ্যালু সংক্রান্ত নিয়মাবলীতে বড় পরিবর্তন করেছে, যার ফলে পলিসিধারীরা আগের তুলনায় অনেক বেশি অর্থ ফেরত পাবে। নতুন নিয়ম 1 অক্টোবর 2024 থেকে কার্যকর হবে এবং এটি কেবলমাত্র নতুন জারি পলিসিতে প্রযোজ্য হবে।

কী হল সারেন্ডার ভ্যালু

যখন কোনও বীমাধারক তার পলিসি মেয়াদপূর্তির আগেই ছাড়েন, তখন বীমা কোম্পানি যত টাকা ফেরত দেয়, তাকেই সারেন্ডার ভ্যালু বলে। এই অর্থ অনেকগুলি বিষয়ের উপর নির্ভর করে, যেমন কত বছর প্রিমিয়াম দেওয়া হয়েছে, পলিসির ধরণ কী এবং মোট বীমাঙ্কিত পরিমাণ কত। আগের নিয়ম অনুযায়ী, গ্রাহক যদি পলিসি শুরু হওয়ার প্রথম কয়েক বছরের মধ্যেই সারেন্ডার করতেন, তাহলে তিনি খুব কম অর্থ বা কখনও কখনও কিছুই পেতেন না।

কী হল নতুন পরিবর্তন

IRDAI এখন সমস্ত এন্ডোমেন্ট বীমা পলিসিতে বিশেষ সারেন্ডার ভ্যালু (SSV) প্রয়োগ করার নির্দেশ দিয়েছে। এর সরাসরি অর্থ হল, কোনও গ্রাহক যদি তার পলিসি মাঝপথে ছাড়েন, তাহলে আগের তুলনায় 20 থেকে 30 শতাংশ পর্যন্ত বেশি অর্থ পাবেন। গ্রাহকদের সুরক্ষা এবং বীমাকে আরও স্বচ্ছ করার উদ্দেশ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রথম দুই বছরে পলিসি সারেন্ডার করলে গ্রাহক কোনও অর্থ পেতেন না। কিন্তু নতুন নিয়ম অনুযায়ী এক বছর পর থেকেই আংশিক অর্থ পাওয়ার সুবিধা শুরু হবে। এর ফলে যারা কোনও কারণে পলিসি দীর্ঘ সময় ধরে চালিয়ে যেতে পারেন না তাদের বিশেষ স্বস্তি মিলবে।

কত টাকা পাওয়া যাবে

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, যদি কেউ চার বছর প্রিমিয়াম দেওয়ার পরে পলিসি সারেন্ডার করেন, তাহলে এখন তিনি প্রায় 3.1 লক্ষ টাকা পর্যন্ত পেতে পারেন, যেখানে আগে এই অর্থ প্রায় 2.4 লক্ষ টাকা ছিল। একইভাবে, গ্রাহক যদি কেবলমাত্র এক বছর প্রিমিয়াম দিয়ে থাকেন, তাহলে এখন তিনি 62,000 টাকা পর্যন্ত পেতে পারেন, যেখানে পুরোনো নিয়ম অনুযায়ী এক বছরে সারেন্ডার করলে কিছুই পাওয়া যেত না।

কীভাবে হবে সারেন্ডার ভ্যালুর হিসাব

IRDAI সারেন্ডার ভ্যালু গণনার জন্য একটি নতুন সূত্র নির্ধারণ করেছে। এখন এটি 10 বছরের সরকারি বন্ডের সুদের হারকে ভিত্তি করে করা হবে, যাতে বীমা কোম্পানি সর্বোচ্চ 0.50 শতাংশ অতিরিক্ত মার্জিন যোগ করতে পারে। এই পরিবর্তনের ফলে গণনা প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ এবং বাজার ভিত্তিক হবে।

নতুন সূত্র কেবলমাত্র নিয়মিত প্রিমিয়াম পলিসি নয়, একক প্রিমিয়াম এবং পাঁচ বছরের কম মেয়াদী পলিসিতেও প্রযোজ্য হবে। এই পদক্ষেপটি তাদের জন্য আরও লাভজনক হবে যারা অল্প মেয়াদী বীমা পরিকল্পনায় বিনিয়োগ করে।

কে কে লাভবান হবে

এই পরিবর্তন 1 অক্টোবর 2024-এর পর ক্রয় করা সমস্ত নতুন বীমা পলিসিতে প্রযোজ্য হবে। এর অর্থ হল, পুরোনো বা আগে থেকে জারি পলিসিতে পুরোনো নিয়মই প্রযোজ্য থাকবে। সুতরাং, যারা বীমা কেনার পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য 2024 সালের অক্টোবরের পর পলিসি নেওয়া লাভজনক হতে পারে নতুন নিয়মের সুবিধা নেওয়ার জন্য।

সারেন্ডার প্রক্রিয়া কী

আপনি যদি আপনার পলিসি সারেন্ডার করতে চান, তাহলে প্রথমে আপনাকে LIC-এর ওয়েবসাইটে গিয়ে সারেন্ডার ভ্যালু ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে হবে, যাতে আপনি জানতে পারবেন সারেন্ডার করলে কত টাকা পাবেন। এরপর নিকটবর্তী LIC শাখায় গিয়ে ফর্ম 5074 পূরণ করতে হবে। সাথে সাথে KYC, পলিসি বন্ড এবং ব্যাংকের বিস্তারিত তথ্য সহ সমস্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক।

বিকল্প: পেইড-আপ পলিসি

পলিসি সারেন্ডার করার আগে আরও একটি বিকল্প আছে পেইড-আপ পলিসি। আপনি যদি পলিসি কয়েক বছর ধরে নিয়মিত চালিয়ে এসেছেন, কিন্তু এখন আর প্রিমিয়াম দিতে পারছেন না, তাহলে আপনি এটিকে পেইড-আপ মোডে রূপান্তর করতে পারেন। এর ফলে আপনার পলিসি চালু থাকবে এবং মেয়াদপূর্তিতে কিছু অর্থ পাওয়া যাবে। যদিও এতে বীমাঙ্কিত পরিমাণ কমে যায়, কিন্তু এটি পুরোপুরি সারেন্ডার করার চেয়ে ভালো বিকল্প হতে পারে।

কেন পরিবর্তন প্রয়োজন ছিল

গত কয়েক বছরে হাজার হাজার বীমাধারক সময়ের আগেই তাদের পলিসি বন্ধ করে দিয়েছে এবং তার বিনিময়ে তারা খুব কম টাকা পেয়েছে, যার ফলে গ্রাহকরা অসন্তুষ্ট ছিলেন। IRDAI-এর মত, বীমা পণ্য গ্রাহক-অনুকূল এবং স্বচ্ছ করা প্রয়োজন। এটাই কারণ সারেন্ডার ভ্যালুকে স্পষ্ট এবং লাভজনক করার জন্য নতুন নিয়ম প্রয়োগ করা হয়েছে।

তদুপরি, নতুন নিয়ম গ্রাহকদের আগে থেকেই জানিয়ে দেবে যে, যদি তারা মাঝপথে পলিসি ছাড়েন, তাহলে তারা কত টাকা পাবেন। এই স্বচ্ছতা বীমা শিল্পে গ্রাহকদের আস্থা বাড়াবে এবং দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে।

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন

বীমা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপটি গ্রাহকদের স্বার্থে একটি বড় উন্নতি। আগে সারেন্ডার করলে গ্রাহক তার বিনিয়োগের খুবই অল্প অংশ ফেরত পেত, যার ফলে বীমাকে ক্ষতির ব্যবসা মনে করা হত। এখন নতুন নিয়মের ফলে এই ধারণা পরিবর্তন হবে এবং আরও অনেকে বীমা পণ্যের দিকে আকৃষ্ট হবে।

আর্থিক পরামর্শদাতাদের পরামর্শ হল, পলিসি সারেন্ডার করার আগে সবসময় আপনার বীমা এজেন্ট বা আর্থিক পরামর্শদাতার সাথে পরামর্শ করুন এবং সমস্ত বিকল্প সাবধানে বুঝুন।

Leave a comment