জাতীয় মহাসড়ক ঘোষণার প্রক্রিয়া ধীর করার সরকারের পরিকল্পনা

জাতীয় মহাসড়ক ঘোষণার প্রক্রিয়া ধীর করার সরকারের পরিকল্পনা
🎧 Listen in Audio
0:00

সরকার এখন রাজ্য মহাসড়কগুলিকে জাতীয় মহাসড়ক ঘোষণা করার প্রক্রিয়া ধীর করার পরিকল্পনা করছে। এর অর্থ হল ভবিষ্যতে কোনও রাজ্যের সড়ককে জাতীয় মহাসড়কের মর্যাদা দেওয়ার জন্য আগের তুলনায় অনেক বেশি সময় লাগতে পারে।

রাজ্য মহাসড়ক এবং জাতীয় মহাসড়ক: দেশের সড়ক নেটওয়ার্ক নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার একটি বড় পরিবর্তন আনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত যে নীতি রাজ্য মহাসড়ককে সরাসরি জাতীয় মহাসড়কে রূপান্তরিত করার ছিল, তাতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এখন রাজ্য সরকারগুলিকে তাদের রাজ্য মহাসড়কের রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে, কিন্তু তাদের জাতীয় মহাসড়কের মর্যাদা দেওয়া হবে না। সরকারের এই নতুন কৌশলের প্রভাব সাধারণ মানুষের ভ্রমণ এবং রাজ্যের সড়ক উন্নয়ন পরিকল্পনার উপরও দেখা যাবে।

এখন রাজ্য মহাসড়ককে জাতীয় মহাসড়ক করার গতি ধীর হবে

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রণালয় এখন রাজ্য স্তরের সড়কগুলিকে সরাসরি জাতীয় মহাসড়ক ঘোষণা করার পরিবর্তে, রাজ্যগুলিকে উৎসাহিত করবে যাতে তারা নিজেরাই তাদের রাজ্য মহাসড়কের উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করে। এর পিছনে কারণ হল দেশে ইতিমধ্যেই একটি বিশাল জাতীয় মহাসড়ক নেটওয়ার্ক তৈরি হয়ে গেছে। এখন নতুন গ্রিনফিল্ড মহাসড়ক, মাল্টিমোডাল সংযোগ এবং লজিস্টিক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেই সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন যে তারা জুলাই মাসের শেষের মধ্যে এমন একটি নীতি প্রণয়ন করবে যার মাধ্যমে রাজ্যের ভিতরে মহাসড়ক প্রকল্প এবং ছোট ছোট বন্দরগুলির সাথে সংযোগ উন্নত করা যাবে। এতে একদিকে রাজ্যের ভূমিকা বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে কেন্দ্রের উপর পড়া আর্থিক চাপও কমবে।

এখন পর্যন্ত রেকর্ড এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি

গত ১১ বছরে কেন্দ্রীয় সরকার প্রায় ৫৫,০০০ কিলোমিটার রাজ্য মহাসড়ককে জাতীয় মহাসড়ক ঘোষণা করেছে। এভাবে এখন দেশে মোট জাতীয় মহাসড়ক নেটওয়ার্ক ১.৪৬ লক্ষ কিলোমিটারেরও বেশি হয়ে গেছে। সরকার এটিকে তার বড় সাফল্য বলে মনে করে কারণ এর প্রভাব দেশের লজিস্টিক্স ব্যয়, সংযোগ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর স্পষ্ট দেখা যায়।

কিন্তু এখন যখন এই নেটওয়ার্ক একটি পরিপক্ক অবস্থায় পৌঁছেছে, তখন সরকারের অগ্রাধিকার নতুন সড়ক নির্মাণ এবং বিদ্যমান জাতীয় মহাসড়কের সম্প্রসারণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের দিকে ঘুরছে।

আগে এবং এখন নীতিতে পার্থক্য

এখন পর্যন্ত যে নীতি ছিল, তার অধীনে, রাজ্য সরকার যদি কোনও রাজ্য মহাসড়ককে জাতীয় মহাসড়কে রূপান্তরিত করার প্রস্তাব দেয় এবং তা প্রযুক্তিগত ও কৌশলগতভাবে উপযুক্ত মনে করা হয়, তাহলে কেন্দ্র তাকে জাতীয় মহাসড়ক ঘোষণা করে দিত। এতে সড়কের রক্ষণাবেক্ষণ, প্রশস্তকরণ এবং উন্নয়নের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের হয়ে যেত।

কিন্তু এখন নতুন নীতি অনুযায়ী, রাজ্যকে নিজের সড়কের যত্ন নিজেই নিতে হবে। কেন্দ্র কেবলমাত্র আর্থিক সাহায্য সরবরাহ করবে। এতে রাজ্য স্তরে পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন এবং তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব বৃদ্ধি পাবে।

মানুষের উপর কী প্রভাব পড়বে

  • স্থানীয় সংযোগ উন্নত হবে: এখন রাজ্য সরকারগুলো তাদের নিজ নিজ মহাসড়ক নেটওয়ার্ককে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে উন্নত করবে। এতে গ্রামীণ ও ছোট শহরগুলির সংযোগ উন্নত হতে পারে।
  • সড়ক উন্নয়ন পরিকল্পনায় ত্বরণ: রাজ্যগুলিকে কেন্দ্র থেকে সরাসরি আর্থিক সাহায্য পাওয়ায় তারা তাদের রোড ইনফ্রাস্ট্রাকচার দ্রুত সংস্কার করতে সক্ষম হবে। এতে ট্রাফিকের সমস্যা এবং ভ্রমণের সময় কমতে পারে।
  • গ্রিনফিল্ড মহাসড়কের সম্প্রসারণ: কেন্দ্র এখন পুরোপুরি নতুন মহাসড়ক নেটওয়ার্ক, যেমন গ্রিনফিল্ড প্রকল্পগুলির উপর মনোযোগ দেবে। এই মহাসড়কগুলি নতুন স্থান দিয়ে যাবে এবং উন্নত সংযোগ স্থাপন করবে এবং নতুন শিল্প এলাকা উন্নয়নে সহায়ক হবে।
  • রাজ্যের দায়িত্ব বৃদ্ধি পাবে: এখন রাজ্য সরকারগুলিকে তাদের নিজস্ব স্তরে প্রকল্প তৈরি করতে হবে, বাজেট বরাদ্দ করতে হবে এবং মান নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এতে তাদের জবাবদিহিতাও বৃদ্ধি পাবে।
  • ভ্রমণের সুবিধায় পরিবর্তন: সাধারণ মানুষ এই পরিবর্তন দ্রুত অনুভব করবে না, তবে দীর্ঘমেয়াদে রাজ্যের সড়কের অবস্থার উন্নতি হলে ভ্রমণ করা সহজ, নিরাপদ এবং দ্রুত হবে।

রাজ্য সরকারের ভূমিকা হবে নির্ণায়ক

নতুন ব্যবস্থার অধীনে রাজ্য সরকারগুলিকে সড়কের পরিকল্পনা, তহবিল ব্যবস্থাপনা এবং নির্মাণ প্রক্রিয়া নিজেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তা সরবরাহ করবে, কিন্তু কাজের দায়িত্ব রাজ্যের হবে।

এই পরিবর্তন একদিকে রাজ্যগুলিকে আত্মনির্ভরশীল করবে, অন্যদিকে কেন্দ্রের কাছে এমন সুযোগ থাকবে যাতে জাতীয় স্তরের সড়ক এবং লজিস্টিক্স নেটওয়ার্ক আরও শক্তিশালী করা যায়।

লজিস্টিক্স ক্ষেত্রে লাভ হবে

সড়ক নেটওয়ার্কের দ্বৈত উন্নয়ন মডেল থেকে লজিস্টিক্স শিল্পও উপকৃত হবে। যেখানে রাজ্য তাদের এলাকায় সংযোগ বৃদ্ধি করবে, সেখানে কেন্দ্র জাতীয় পর্যায়ে পরিবহন করিডোর এবং লজিস্টিক্স হাবের উন্নয়ন করবে। এতে মাল পরিবহনের ব্যয় কমবে এবং সময়ও বাঁচবে।

নতুন গ্রিনফিল্ড প্রকল্পের দিকে ঝোঁক

সরকারের এখন প্রধান মনোযোগ গ্রিনফিল্ড এক্সপ্রেসওয়ে, শিল্প করিডোর এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলের সাথে সংযুক্ত মহাসড়কের উপর থাকবে। এর জন্য দিল্লি-মুম্বাই এক্সপ্রেসওয়ে, গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে, ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডোর ইত্যাদি পরিকল্পনার উপর কাজ চলছে। এগুলি দিয়ে কেবল অর্থনীতিকে গতি পাবে না, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলও যুক্ত হবে।

সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ

  • রাজ্যের আর্থিক অবস্থা: সব রাজ্যের আর্থিক সামর্থ্য সমান নয়। কিছু রাজ্যের জন্য তাদের মহাসড়ক উন্নত করা একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
  • প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব: সড়ক নির্মাণ এবং তত্ত্বাবধানের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত দক্ষতা সব রাজ্যের কাছে নেই।
  • কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয়: পরিকল্পনাগুলি সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে সমন্বয় অত্যন্ত প্রয়োজন। কোথাও মতবিরোধ বা বিলম্ব না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে।

Leave a comment