বিশেষজ্ঞদের মতে, আধার ভিত্তিক যাচাইয়ের এই উদ্যোগ সরকারের ডিজিটাল ইন্ডিয়া অভিযানকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধির দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
দেশে আয়কর ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ ও ডিজিটাল করার দিকে সরকার আরও একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর বোর্ড অর্থাৎ সিবিডিটি প্যান কার্ড তৈরির নিয়মাবলীতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে গিয়ে ১ জুলাই ২০২৫ থেকে নতুন প্রবিধান কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছে। এই নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখন নতুন প্যান কার্ড তৈরির জন্য আধার নম্বর এবং তার ইলেকট্রনিক যাচাই বাধ্যতামূলক হবে।
এখন পর্যন্ত প্যান কার্ডের জন্য আধার বাধ্যতামূলক ছিল না, কিন্তু এই পরিবর্তনের পর কোন ব্যক্তিই আধার নম্বর ছাড়া স্থায়ী অ্যাকাউন্ট নম্বর পাবেন না। এই নিয়ম কেবল কর প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনবে না, কর ফাঁকি এবং জাল প্যান কার্ড তৈরির মতো অনিয়মগুলিতেও নিয়ন্ত্রণ আনবে।
নতুন নিয়ম কী
১ জুলাই ২০২৫ থেকে নতুন প্যান কার্ড তৈরির জন্য এখন আধার নম্বর দেওয়া বাধ্যতামূলক হবে। কেবল আধার নম্বর দেওয়াই যথেষ্ট নয়, বরং তার ইলেকট্রনিক যাচাইও প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ, যখন আপনি অনলাইনে বা অফলাইনে প্যান কার্ডের জন্য আবেদন করবেন, তখন আপনার আধারের বায়োমেট্রিক অথবা ওটিপি ভিত্তিক যাচাই করা হবে। যদি আধার যাচাই না হয়, তাহলে প্যান কার্ডের জন্য আবেদন প্রত্যাখ্যাত হবে।
এখন পর্যন্ত কী ব্যবস্থা ছিল
এখন পর্যন্ত প্যান কার্ড তৈরির জন্য আধার বাধ্যতামূলক ছিল না। কোন ব্যক্তিই ভোটার আইডি, পাসপোর্ট অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্সের মতো বৈধ পরিচয়পত্রের সাথে জন্মনিবন্ধন দেখিয়ে প্যান কার্ড তৈরি করতে পারতেন। কিন্তু নতুন নিয়ম অনুযায়ী, আধার ছাড়া প্যান কার্ড জারি করা হবে না।
সরকার কেন এই পদক্ষেপ নিয়েছে
সিবিডিটি এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতে, এই পদক্ষেপ ডিজিটালকরণকে গতি দেওয়ার পাশাপাশি কর পালন নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে অনেক সময় কর ফাঁকির জন্য একজন ব্যক্তির নামে অনেক প্যান কার্ড তৈরি করা হয়। কিছু লোক জাল পরিচয় দেখিয়েও প্যান কার্ড তৈরি করে এবং তার ভুল ব্যবহার করে। কিন্তু আধার বাধ্যতামূলক হওয়ার পর থেকে এই ধরনের অনিয়ম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।
বর্তমান প্যান কার্ডধারীদের জন্য কী হবে
এই নতুন নিয়ম তাদের জন্য যারা প্রথমবার প্যান কার্ড তৈরি করছে। বর্তমান প্যান ধারীদের জন্য এখন পর্যন্ত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম কার্যকর আছে। তাদের ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে তাদের প্যান কার্ড আধারের সাথে লিঙ্ক করানো বাধ্যতামূলক হবে। যদি কোন ব্যক্তি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই কাজ না করে, তাহলে তার প্যান কার্ড নিষ্ক্রিয় ঘোষণা করা হবে।
নিষ্ক্রিয় প্যান কার্ডের অর্থ হল ব্যক্তিটি এটি ব্যবহার করতে পারবে না ব্যাংকিং সেবায়, না কর রিটার্ন জমা দিতে পারবে। তবে সরকার এবার কোনো বিলম্ব ফি ছাড়াই প্যান এবং আধারকে সংযুক্ত করার চূড়ান্ত সময়সীমা দিয়েছে।
জাল প্যানে থাকবে রোধ
একটি বড় উদ্বেগ এটাও ছিল যে অনেক লোক জাল পরিচয়ের সাহায্যে একাধিক প্যান কার্ড তৈরি করে। তারপর তা মানি লন্ডারিং, হাওয়ালা অথবা বেনামী সম্পত্তির মতো কাজে ব্যবহার করা হয়। এখন আধার ভিত্তিক যাচাইয়ের কারণে এটা অসম্ভব হয়ে যাবে, কারণ এক আধার নম্বর দিয়ে কেবলমাত্র একটি প্যান তৈরি করা যাবে।
আয়কর আইন অনুযায়ী কোন ব্যক্তির একাধিক প্যান কার্ড থাকতে পারে না। যদি কোন ব্যক্তির দুই বা তার বেশি প্যান কার্ড পাওয়া যায়, তাহলে তার উপর দশ হাজার টাকা জরিমানা করা যেতে পারে।
ট্যাক্স ফাইলিংয়ে হবে সুবিধা
নতুন নিয়ম ট্যাক্স প্রদানের প্রক্রিয়াকেও সহজ করবে। যখন প্যান কার্ড এবং আধার একে অপরের সাথে লিঙ্ক হবে এবং আধার যাচাই করা হবে, তখন ট্যাক্স প্রদানের সময় পরিচয় যাচাইয়ে কোন সমস্যা হবে না। এতে আয়কর বিভাগের পক্ষেও ট্যাক্সপেয়ারদের প্রোফাইলিং করা সহজ হবে এবং ট্যাক্স রিটার্ন প্রক্রিয়ায় ত্বরাণী আসবে।
ডিজিটালকরণের দিকে বড় পদক্ষেপ
সরকার ক্রমাগত ডিজিটাল ইন্ডিয়ার দিকে কাজ করছে এবং আয়কর বিভাগও এই চিন্তাভাবনার আলোকে নিজের প্রক্রিয়াগুলিকে ডিজিটালভাবে পরিবর্তন করছে। আধারের মাধ্যমে প্যান জারি করা এবং তার ইলেকট্রনিক যাচাই বাধ্যতামূলক করা এই দিকে নেওয়া পদক্ষেপ। এতে দালালদের ভূমিকা শেষ হবে এবং নাগরিকরা সরকারি সেবা সরাসরি এবং নিরাপদে পাবেন।
কে প্যানের জন্য আবেদন করতে পারে
সরকারের পক্ষ থেকে এটা স্পষ্ট করা হয়েছে যে প্যান কার্ডের জন্য সেই ব্যক্তিই আবেদন করতে পারবে যার আধার নম্বর আছে। এর জন্য আধার নম্বর প্যান আবেদন ফর্মে দিতে হবে এবং ওটিপি অথবা বায়োমেট্রিকের মাধ্যমে তা যাচাই করতে হবে। যাদের সন্তানদের আধার নেই, তাদের জন্য অভিভাবকের মাধ্যমে আধার নম্বর জমা দেওয়ার সুযোগ থাকবে।
আধার-প্যান লিঙ্কিং-এর সুবিধা
যারা আগে থেকে প্যান তৈরি করেছেন, তাদের জন্যও আধারের সাথে লিঙ্কিং প্রয়োজন। এটি করার ফলে ট্যাক্স ফাইলিংয়ের সময় ওটিপি ভিত্তিক যাচাই সহজে হয়। এছাড়াও, ভবিষ্যতে যেকোনো ব্যাংকিং বা আর্থিক সেবায় পরিচয় প্রমাণ হিসেবে আধার-প্যান জুটিকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন
আর্থিক বিষয়ের সংশ্লিষ্টদের মতে, এই পরিবর্তন সময়ের দাবি। যেভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে, সেই সাথে কর প্রশাসনেও প্রযুক্তির সমন্বিত ব্যবহার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, এই নিয়ম সৎ ট্যাক্সপেয়ারদের জন্য সহায়ক এবং কর ফাঁকি রোধের জন্য কার্যকর অস্ত্র হতে পারে।
নাগরিকদের জন্য পরামর্শ
যদি আপনি প্যান কার্ড তৈরির কথা ভাবছেন, তাহলে ১ জুলাই ২০২৫-এর পর আধার নম্বর প্রস্তুত রাখুন। যদি আগে থেকেই আধার তৈরি করা হয়ে থাকে, তাহলে নিশ্চিত হোন যে তা আপডেট হয়েছে এবং তাতে থাকা তথ্য সঠিক। যদি আগে থেকে প্যান কার্ড তৈরি হয়ে থাকে, তাহলে সময়মতো আধারের সাথে লিঙ্ক করে নিন যাতে কোন সমস্যায় পড়তে না হয়।
