বিশ্বব্যাপী দুর্বল সংকেত, মূল্যস্ফীতি এবং ত্রৈমাসিক ফলাফলের অনিশ্চয়তায় সেনসেক্স ১০৪৯ পয়েন্ট হ্রাস পায়। নিফটি ৩৪৫ পয়েন্ট পিছিয়ে যায়। বিনিয়োগকারীদের ১২ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি। শীর্ষ লাভবানদের মধ্যে এক্সিস ব্যাংক।
বন্ধ ঘণ্টা: বিশ্ববাজারে দুর্বল প্রবণতা এবং দেশীয় পর্যায়ে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে সোমবার (১৩ জানুয়ারি) ভারতীয় শেয়ারবাজারে ব্যাপক পতন ঘটে। বসে সেনসেক্স এবং এনএসই নিফটি দুটিই দিনব্যাপী কারোবারে লাল চিহ্ন বজায় রাখে।
সেনসেক্স এবং নিফটিতে ব্যাপক পতন
সপ্তাহের প্রথম ব্যবসায়িক দিনে, বসে সেনসেক্স ৮৪৪ পয়েন্টের পতনের সাথে ৭৬,৫৩৫.২৪ পয়েন্টে উন্মুক্ত হয়। দিনভরের ব্যবসায় এটি ১১২৯ পয়েন্ট পর্যন্ত নেমে আসে এবং অবশেষে ১০৪৯ পয়েন্ট অথবা ১.৩৬% হ্রাসের সাথে ৭৬,৩৩০ পয়েন্টে বন্ধ হয়।
এদিকে, নিফটি ৫০ও পতনের সাথে উন্মুক্ত হয় এবং ৩৮৪ পয়েন্ট পর্যন্ত নিচে নেমে আসে। অবশেষে এটি ৩৪৫.৫৫ পয়েন্ট বা ১.৪৭% হ্রাসের সাথে ২৩,০৮৫.৯৫ পয়েন্টে বন্ধ হয়।
শীর্ষ ক্ষতিগ্রস্ত: এই শেয়ারগুলিতে পতন
সেনসেক্সের ৩০টি কোম্পানির মধ্যে জোমেটোর শেয়ার ৬% এর বেশি হ্রাস পেয়ে বন্ধ হয়। এর পাশাপাশি, পাওয়ার গ্রিড, অ্যাডানি পোর্টস, টাটা স্টিল, এনটিপিসি, টাটা মোটার্স, মহিন্দ্রা অ্যান্ড মহিন্দ্রা, এশিয়ান পেইন্টস, এইচডিএফসি ব্যাংক, বাজাজ ফাইন্যান্স এবং কোটাক মহিন্দ্রা ব্যাংক এও পতন লক্ষ্য করা যায়।
শীর্ষ লাভবান: এই শেয়ারগুলিতে উন্নতি
তবে কিছু শেয়ার সবুজ চিহ্ন বজায় রেখে বন্ধ হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে এক্সিস ব্যাংক, ইন্ডাস ইন্ড ব্যাংক, টাটা কনসাল্টেন্সি সার্ভিসেস এবং হিন্দুস্তান ইউনিলীবরের শেয়ার।
বাজারে পতনের চারটি বড় কারণ
- বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বিক্রি: ডলার সূচকে শক্তিশালীতা এবং টাকায় হ্রাসের কারণে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা लगातार घरेलू বাজার থেকে অর্থ প্রত্যাহার করছে।
- দুর্বল ত্রৈমাসিক ফলাফলের আশঙ্কা: দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের দুর্বল ফলাফলের পর তৃতীয় ত্রৈমাসিক সম্পর্কে অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বৃদ্ধি করছে।
- আমেরিকার শক্তিশালী কর্মসংস্থানের তথ্য: আমেরিকায় কর্মসংস্থানের শক্তিশালী তথ্য ব্যাংক সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা কমিয়ে দিয়েছে, যার ফলে বাজারের মনোভাব প্রভাবিত হয়েছে।
- ব্রেন্ট ক্রুড এবং টাকার হ্রাস: ব্রেন্ট ক্রুড ৮১ ডলার প্রতি ব্যারেল পর্যন্ত পৌঁছেছে, এবং টাকায় দুর্বলতার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের ১২ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি
সোমবারের পতনের ফলে বসে-লিক্ত কোম্পানিগুলির মোট বাজার মূল্য ৪,২১,২৯,৯০০ কোটি টাকায় নেমে আসে। শুক্রবার এটি ছিল ৪,২৯,৬৭,৮৩৫ কোটি টাকা। এইভাবে, বিনিয়োগকারীরা ১২ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতির শিকার হয়েছেন।
বিশ্ববাজারের অবস্থা
এশিয়ার বাজারগুলোতেও পতনের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার কসপি, হংকংয়ের হ্যাংসেং এবং চীনের শাংহাই কম্পোজিট লাল চিহ্ন বজায় রেখেছে। জাপানের বাজার ছুটির কারণে বন্ধ ছিল।
শুক্রবার আমেরিকার বাজারগুলোতেও পতন লক্ষ্য করা গিয়েছিল। Dow Jones ১.৬৩%, S&P ৫০০ ১.৫৪% এবং Nasdaq ১.৬৩% হ্রাসের সাথে বন্ধ হয়।
শুক্রবার বাজারের কর্মক্ষমতা
শুক্রবার বসে সেনসেক্স ২৪১.৩০ পয়েন্ট বা ০.৩১% হ্রাস পেয়ে ৭৭,৩৭৮.৯১ পয়েন্টে বন্ধ হয়। এদিকে, নিফটি ৫০ ৯৫ পয়েন্ট বা ০.৪% হ্রাসের সাথে ২৩,৪৩১ পয়েন্টে বন্ধ হয়।
বাজারের জন্য আগামী কী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ত্রৈমাসিক ফলাফল স্পষ্ট না হওয়া এবং বিশ্ববাজারে স্থিতিশীলতা না আসা পর্যন্ত ভারতীয় বাজারে উত্থান-পতন অব্যাহত থাকতে পারে। বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সাথে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।