GTL Infrastructure-এর শেয়ারের অসাধারণ উত্থান: দুই দিনে ৪২% লাভ!

🎧 Listen in Audio
0:00

GTL Infrastructure-এর শেয়ারের দামে সম্প্রতি অসাধারণ উত্থান লক্ষ্য করা গেছে। গত দুই দিনে এই পেনি স্টক প্রায় ৪২% বৃদ্ধি পেয়েছে।

নয়া দিল্লি: শেয়ার বাজারে মাঝে মাঝে এমন সুযোগ আসে যখন একটি সস্তা এবং উপেক্ষিত শেয়ার হঠাৎ করেই বিনিয়োগকারীদের জন্য সোনার ডিম পাড়া মুরগি হয়ে ওঠে। এমনই এক দৃশ্য বর্তমানে GTL Infrastructure-এর শেয়ারে দেখা যাচ্ছে। মাত্র দুই দিনে এই শেয়ার প্রায় ৪২% লাভ করে বিনিয়োগকারীদের চমকে দিয়েছে। যারা দুই দিন আগে ৫০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন, তাদের অর্থ এখন বেড়ে প্রায় ৭১,০০০ টাকা হয়েছে। এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে শেয়ার যতই সস্তা হোক না কেন, সঠিক সময়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের চমৎকার রিটার্ন দিতে পারে।

GTL Infrastructure কি এবং কেন এটি আলোচনায়?

GTL Infrastructure একটি টেলিযোগাযোগ টাওয়ার কোম্পানি, যা দেশজুড়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক কোম্পানিগুলিকে টাওয়ারের সুবিধা প্রদান করে। যদিও কোম্পানিটি গত কয়েক বছর ধরে আর্থিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে গেছে, তবে সম্প্রতি এর শেয়ারের হঠাৎ উত্থান এটিকে আলোচনায় নিয়ে এসেছে।

গত দুই দিনে এই শেয়ারের দাম প্রায় ১.৫ টাকা থেকে বেড়ে ২.১৬ টাকায় পৌঁছেছে। BSE-তে এই শেয়ার বৃহস্পতিবার ১৮.৭% বৃদ্ধির সাথে ২.১৬ টাকায় পৌঁছেছে। অন্যদিকে NSE-তে এর ৬৬ কোটিরও বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এই শেয়ার নিয়ে প্রচুর উৎসাহ রয়েছে।

দুই দিনে ৪২% রিটার্ন: কীভাবে এটি সম্ভব হলো?

বুধবার শেয়ারটি ১২.৫% লাভ করে দিনের শেষে ১.৮২ টাকায় বন্ধ হয়। বৃহস্পতিবার এটি ১.৯৩ টাকায় খোলে এবং মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে ২.১৬ টাকায় পৌঁছে যায়। এই বৃদ্ধি অবাক করা ছিল কারণ কোম্পানি থেকে কোনো বিশেষ সংবাদ বা ঘোষণা করা হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে এই বৃদ্ধি প্রযুক্তিগত কারণ এবং অনুমানের উপর ভিত্তি করে হয়েছে। শেয়ারটি তার সকল প্রধান সিম্পল মুভিং অ্যাভারেজ (SMA)-এর উপরে লেনদেন করছে, যার ফলে প্রযুক্তিগত সূচকগুলিতে শক্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এছাড়াও, মোমেন্টাম ইন্ডিকেটর এবং রিলেটিভ স্ট্রেংথ ইন্ডেক্স (RSI) যে প্রযুক্তিগত সূচকগুলি এই দিকে ইঙ্গিত করছে যে বর্তমানে শেয়ারে শক্তি অব্যাহত থাকতে পারে।

৫G ইনফ্রাস্ট্রাকচার সংক্রান্ত প্রত্যাশা

GTL ইনফ্রার উত্থানের পিছনে একটি বড় কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে যে দেশে ৫G নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার এবং টেলিযোগাযোগ কোম্পানিগুলি গ্রামে গ্রামে ৫G নেটওয়ার্ক পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিনিয়োগ করছে। GTL-এর মতো ইনফ্রাস্ট্রাকচার কোম্পানিগুলি এতে ব্যাপক লাভ পেতে পারে।

৫G-র জন্য টাওয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন, যার ফলে GTL-এর মতো টাওয়ার সরবরাহকারী কোম্পানিগুলি নতুন চুক্তি পেতে পারে। এই আশায় অনেক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী এই শেয়ারে তাদের মূলধন বিনিয়োগ করছে, যার ফলে লেনদেনের পরিমাণে অসাধারণ বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে।

বাজারের মেজাজ: ক্ষুদ্র কোম্পানিগুলিকে পাওয়া সমর্থন

গত কয়েক মাসে দেখা গেছে যে বাজারে স্মল ক্যাপ এবং পেনি স্টক নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। বিশেষ করে ৫ টাকার কম দামে উপলব্ধ শেয়ারগুলির লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। GTL ইনফ্রাস্ট্রাকচারও এমনই একটি শেয়ার, যার দাম এখনও ৩ টাকার কম, কিন্তু পারফরম্যান্সে এটি অনেক বড় শেয়ারকে ছাড়িয়ে গেছে।

বৃহস্পতিবার যখন এই শেয়ারের দাম ১৮.৬৮% বৃদ্ধি পেয়েছে, তখন এটি BSE-এর ‘A’ গ্রুপের শীর্ষ লাভজনক শেয়ারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এক মাসের গড় লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ৮৭ লক্ষ শেয়ার ছিল, অন্যদিকে একদিনেই ৩৯০ লক্ষেরও বেশি শেয়ার লেনদেন হওয়া নিজেই এক বড় কথা।

দীর্ঘমেয়াদী পারফরম্যান্স কেমন ছিল?

তবে, এটা লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে GTL ইনফ্রাস্ট্রাকচারের দীর্ঘমেয়াদী পারফরম্যান্স খুব উৎসাহজনক নয়। গত এক বছরে এই শেয়ার মাত্র ২% বৃদ্ধি পেয়েছে, অন্যদিকে গত ছয় মাসে এর ৬.৩% হ্রাস পেয়েছে। অর্থাৎ, এই শেয়ার এখনও ঝুঁকিপূর্ণ এবং শুধুমাত্র স্বল্পমেয়াদী লাভ দানের ক্ষমতা রাখে।

কিন্তু যখন আমরা গত তিন মাসের কথা বলি, তখন এই শেয়ার ৩৪% পর্যন্ত উঠেছে। অন্যদিকে, গত সাত দিনে এর প্রায় ৩৯.৩% বৃদ্ধি হয়েছে। এর অর্থ হল, যদি কোন বিনিয়োগকারী সঠিক সময়ে প্রবেশ করে, তাহলে তিনি ভালো লাভ পেতে পারেন।

এখনও কি বিনিয়োগ করা ঠিক হবে?

এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে এটি বুঝতে হবে যে পেনি স্টকের উত্থান-পতন অনেক বেশি হয়। যদিও প্রযুক্তিগত চার্ট এখনও এই শেয়ারে বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে, তবে এর RSI (রিলেটিভ স্ট্রেংথ ইন্ডেক্স) ৭৯.৮-এ পৌঁছেছে, যা অতিরিক্ত ক্রয়ের (overbought) অবস্থা নির্দেশ করে। এর ফলে এমন সম্ভাবনা তৈরি হয় যে আগামী দিনগুলিতে কিছুটা হ্রাসও আসতে পারে।

তাই যদি আপনি এই শেয়ারে বিনিয়োগ করতে চান, তাহলে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করুন এবং কেবলমাত্র সেই টাকা দিয়ে বিনিয়োগ করুন যা হারালেও আপনার আর্থিক অবস্থার উপর প্রভাব পড়বে না। এছাড়াও, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীর পরিবর্তে যদি আপনি স্বল্পমেয়াদী লেনদেনে আগ্রহী হন, তবেই এই ধরণের শেয়ারের কথা বিবেচনা করুন।

Leave a comment