দুই মাসের উচ্চতম স্তরে সোনার দাম

🎧 Listen in Audio
0:00

সোনার দাম চার দিন ধরেই ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় দুই মাসের উচ্চতম স্তরে পৌঁছেছে।

মধ্যপ্রাচ্যে আবারও ভূ-রাজনৈতিক সংকট গভীর হচ্ছে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে বর্ধমান সংঘর্ষ বিশ্ববাজারকে অস্থির করে তুলেছে। এই অস্থিরতায় বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আবারও সোনার দিকে ঘুরেছে। সোমবার সোনা চার দিন ধরেই ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে দুই মাসের উচ্চতম স্তরে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় উভয় বাজারেই এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা থেকে সোনার সমর্থন

বিশ্বের দুটি বৃহৎ দেশের মধ্যে বর্ধমান উত্তেজনার ফলে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীরা অনিরাপত্তার অনুভূতিতে ভোগছে। এই অনুভূতির ফলে তারা তাদের মূলধন সুরক্ষিত রাখার জন্য সোনার মতো ঐতিহ্যগত ও নিরাপদ সম্পদে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। এই কারণেই সোনার দাম সম্প্রতি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবার আন্তর্জাতিক বাজারে স্পট গোল্ড ০.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৪৪২.০৯ ডলার প্রতি আউন্সে পৌঁছেছে, যা ২২ এপ্রিলের পর সর্বোচ্চ।

আমেরিকান ফিউচার্স বাজারেও সোনার দাম বৃদ্ধি পেয়ে ৩৪৬১.৯০ ডলার প্রতি আউন্সে পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি পরিস্থিতি আরও জটিল হয় তাহলে সোনা ৩৫০০ ডলারের স্তর অতিক্রম করতে পারে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অব্যাহত অনিশ্চয়তাকে প্রতিফলিত করে।

এমসিএক্স-এও বৃদ্ধির ধারা

ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ বা এমসিএক্স-এও সোমবার সোনার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আগস্ট ডেলিভারির সোনা সকাল ৯ টা ৩২ মিনিটে ০.১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১,০০,৪০৬ টাকা প্রতি ১০ গ্রামে লেনদেন হয়েছে। চার দিন ধরেই সোনার দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নিরাপদ বিনিয়োগের চাহিদা বৃদ্ধি

সোনাকে ঐতিহ্যগতভাবে একটি নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বে যখনই সংকটের পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখনই বিনিয়োগকারীরা তাদের মূলধন সুরক্ষিত রাখার জন্য সোনার দিকে আকৃষ্ট হন। বর্তমান পরিস্থিতিও তেমনই। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ঝুঁকি প্রিমিয়াম বৃদ্ধি পেয়েছে, যার সরাসরি প্রভাব সোনার চাহিদার উপর পড়েছে।

আমেরিকার আর্থিক নীতির প্রভাব

বর্তমানে বিনিয়োগকারীরা আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের আসন্ন আর্থিক নীতি সংক্রান্ত বৈঠকের দিকে নজর রাখছেন। আশা করা হচ্ছে, ফেড এবার তাদের প্রধান সুদের হার ৪.২৫ থেকে ৪.৫০ শতাংশের মধ্যে অপরিবর্তিত রাখবে। বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন সেপ্টেম্বরের মধ্যে সুদের হার ০.২৫ শতাংশ কমানো হতে পারে। যদি তা হয়, তাহলে সোনার দাম আরও সমর্থন পাবে।

সোনার দাম কেন বাড়ে?

সোনার দাম বৃদ্ধির পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। প্রথম বৃহৎ কারণ হল ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা। যখন কোনও অঞ্চলে যুদ্ধ বা উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন লোকেরা ঝুঁকি এড়াতে সোনে বিনিয়োগ করে। দ্বিতীয় কারণ হল আর্থিক অনিশ্চয়তা। যখন মন্দার আশঙ্কা থাকে বা মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পায় তখন সোনা একটি উত্তম বিকল্প হয়ে ওঠে।

এছাড়া সুদের হার এবং ডলারের শক্তি বা দুর্বলতারও প্রভাব পড়ে। যখন ডলার দুর্বল হয় তখন সোনা দামী হয়, আর শক্তিশালী ডলার সোনার দাম সীমিত করে। সোনা একটি উৎপাদনশীল সম্পদ নয়, তাই যখন সুদের হার কম হয় তখন সোনার চাহিদা বৃদ্ধি পায়।

দেশীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য ইঙ্গিত

ভারতেও বিনিয়োগকারীরা দ্রুত সোনার দিকে ঝুঁকছে। বিনিয়োগের জন্য সোনা ঐতিহ্যগতভাবে ভারতীয়দের প্রথম পছন্দ হয়েছে, কিন্তু এখন গোল্ড ইটিএফ, সভারেন গোল্ড বন্ড এবং ডিজিটাল গোল্ডের মতো আর্থিক রূপেও আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিশ্ববাজারের প্রবণতা বিবেচনা করে, এই সময় নিরাপদ বিনিয়োগের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা অল্প সময়ের মধ্যে ঝুঁকি এড়াতে চান তাদের জন্য সোনা একটি শক্তিশালী বিকল্প হতে পারে। তবে, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য পোর্টফোলিওতে ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরী।

Leave a comment