ভারতের ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন (NPCI) করদাতাদের সুবিধার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এখন থেকে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় প্যান ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের যাচাই রিয়েল টাইমে সম্পন্ন হবে। পূর্বে এই প্রক্রিয়াটি ১০ থেকে ১২ কার্যদিবস সময় নিত, কিন্তু এখন কয়েক মিনিটের মধ্যেই সম্পন্ন হবে।
NPCI একটি অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (API) চালু করেছে, যা সমস্ত ব্যাংকের সাথে সংযুক্ত হয়ে আয়কর ই-ফাইলিং পোর্টালে প্যান-ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যাচাইয়ের প্রক্রিয়াটিকে সম্পূর্ণ ডিজিটাল ও দ্রুত করে তুলেছে।
NPCI-এর নতুন API সুবিধা কি?
API অর্থাৎ অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস, একটি সফ্টওয়্যার সেতু যা দুটি ডিজিটাল সিস্টেমকে সংযুক্ত করে। NPCI-এর নতুন API সুবিধা আয়কর পোর্টালকে ব্যাংকগুলির কোর ব্যাংকিং সিস্টেম (CBS)-এর সাথে সংযুক্ত করে। এর মাধ্যমে করদাতা কর্তৃক প্রবেশকৃত প্যান নম্বর, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের নাম অবিলম্বে যাচাই করা যায়।
এই ইন্টারফেসের প্রধান উদ্দেশ্য যাচাই প্রক্রিয়াটিকে স্বচ্ছ, দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য করা। পূর্বে এই কাজটি কয়েক দিন সময় নিত, কিন্তু এখন কয়েক মিনিটের মধ্যেই সম্পন্ন হতে পারে।
কিভাবে কাজ করে এই API সিস্টেম?
এই সুবিধার অধীনে, আয়কর পোর্টাল যখনই কোনও ব্যবহারকারীর প্যান বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যাচাই করে, তখন API-এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কোর ব্যাংকিং সিস্টেমের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে। তারপর ব্যাংক তার রেকর্ড থেকে প্যান, অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের নামের মিলান করে এবং অবিলম্বে প্রতিক্রিয়া দেয়।
এই ডিজিটাল আদান-প্রদানের মাধ্যমে যাচাই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় হয়ে যায়, যার ফলে শুধুমাত্র সময়ের সাশ্রয় হয় না, মানবীয় ত্রুটির সম্ভাবনাও প্রায় শূন্য হয়ে যায়।
NPCI-এর নির্দেশনা ও সরকারের উদ্দেশ্য
NPCI একটি সার্কুলার জারি করে সমস্ত সদস্য ব্যাংককে বলেছে যে তারা এই নতুন API সুবিধাটি অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রয়োগ করবে। এই সুবিধাটি ভারত সরকারকে প্রদান করা হচ্ছে এবং এর সরাসরি উদ্দেশ্য সরকারি বিভাগ, বিশেষ করে আয়কর বিভাগকে ডিজিটালভাবে সবল করা।
এর ফলে শুধুমাত্র কর যাচাই প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হবে না, জনগণের সরকারি ব্যবস্থার প্রতি আস্থাও বৃদ্ধি পাবে।
করদাতারা কি সুবিধা পাবে?
- যাচাইয়ে দ্রুততা: এখন করদাতাদের প্যান ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যাচাইয়ের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে না। আয়কর পোর্টাল রিয়েল টাইমে যাচাই করে নেবে যার ফলে রিটার্ন প্রসেসিংও দ্রুত শুরু হবে।
- ত্রুটি কমবে: পূর্বে অনেক সময় রিটার্ন বাতিল হওয়ার কারণ ছিল ভুল অ্যাকাউন্ট নম্বর বা ভুল নামের মতো ম্যানুয়াল ত্রুটি। কিন্তু স্বয়ংক্রিয় যাচাইয়ের মাধ্যমে এই ত্রুটিগুলি প্রায় শেষ হয়ে যাবে।
- রিফান্ডে দ্রুততা: যেহেতু যাচাইকৃত অ্যাকাউন্টে অগ্রাধিকার ভিত্তিক রিফান্ড পাঠানো হয়, তাই রিয়েল টাইম যাচাইয়ের মাধ্যমে কর রিফান্ড দ্রুত পাওয়া যাবে।
- অধিক নিরাপদ প্রক্রিয়া: ডেটা এখন তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পাঠানো হবে না, বরং সরাসরি ব্যাংকের কোর সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত হয়ে যাচাই হবে যার ফলে তথ্য আরও নিরাপদ থাকবে।
ব্যাংকগুলিও লাভবান হবে
NPCI-এর এই উদ্যোগ থেকে ব্যাংকগুলিও সরাসরি লাভবান হবে। এখন ব্যাংকগুলি তাদের গ্রাহকদের KYC নথির যাচাই অবিলম্বে করতে পারবে, যার ফলে প্রতারণার ঘটনাও কমবে।
এই API-এর মাধ্যমে ব্যাংকের বিশ্বাসযোগ্যতাও বৃদ্ধি পাবে কারণ তারা তাদের সিস্টেমে সংরক্ষিত ডেটার তাত্ক্ষণিক মিলান করতে পারবে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে উন্নত সমন্বয় স্থাপন করতে পারবে।
পূর্বের প্রক্রিয়া ও বর্তমান পরিবর্তন
পূর্বে করদাতাকে প্যান ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যোগ করার জন্য আলাদা প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হত। এতে ইনপুট ম্যানুয়ালি প্রবেশ করা হত, যা তৃতীয় পক্ষ কর্তৃক যাচাই করা হত। এই প্রক্রিয়ায় অনেক সময় লাগত এবং অনেক সময় প্রযুক্তিগত বা মানবীয় ত্রুটির কারণে যাচাই ব্যর্থ হত।
নতুন API সিস্টেমের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় হয়ে গেছে। এখন যখনই আপনি পোর্টালে তথ্য প্রবেশ করাবেন, এই API ব্যাংক থেকে রিয়েল টাইমে তা চেক করে নেবে এবং কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই ফলাফল পোর্টালে দেখা যাবে।
ডিজিটাল ইন্ডিয়া-র দিকে একটি বড় ধাপ
NPCI-এর এই সুবিধা ডিজিটাল ইন্ডিয়ার লক্ষ্যকে আরও সবল করে তুলবে। এর ফলে শুধুমাত্র সরকারি সেবার বিতরণে দ্রুততা আসবে না, সাধারণ নাগরিকদের জীবনেও প্রযুক্তিগত সহজলভ্যতা আসবে।
আর্থিক লেনদেনের প্রক্রিয়া যতটা স্বচ্ছ ও ডিজিটাল হবে, সরকারের ই-গভর্নেন্স ব্যবস্থা ততটাই শক্তিশালী ও নির্ভরযোগ্য হবে।
