নিকোলাস পুরানসহ ৫ ক্রিকেটার যারা টেস্ট না খেলেই অবসর নিলেন

নিকোলাস পুরানসহ ৫ ক্রিকেটার যারা টেস্ট না খেলেই অবসর নিলেন
সর্বশেষ আপডেট: 11-06-2025

নিকোলাস পুরানকে আগামী বছর অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের কৌশলের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল, কিন্তু তিনি হঠাৎ করেই অবসরের ঘোষণা দিলেন।

খেলাধুলার সংবাদ: ক্রিকেটে টেস্ট ম্যাচগুলিকে খেলোয়াড়দের আসল পরীক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, কিন্তু কিছু দুর্দান্ত খেলোয়াড় এমনও আছেন যারা ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে তো ঝড় তুলেছেন, কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকের সুযোগই পাননি। সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিজের তারকা ব্যাটসম্যান নিকোলাস পুরান ২৯ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। তিনি ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে তাঁকে কখনও সুযোগ দেওয়া হয়নি।

পুরান একমাত্র এমন খেলোয়াড় নন যাঁর টেস্ট অভিষেক হয়নি। ক্রিকেটের ইতিহাসে অনেক বড় বড় নাম আছে যারা তাদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স সত্ত্বেও টেস্ট দলে স্থান করে নিতে পারেননি। আসুন জেনে নিই এমন ৫ জন ক্রিকেটারের কথা যারা টেস্ট না খেলেই অবসর নিয়েছেন।

১. নিকোলাস পুরান (ওয়েস্ট ইন্ডিজ): টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের তারকা

ওয়েস্ট ইন্ডিজের সবচেয়ে বিপজ্জনক টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যানদের একজন নিকোলাস পুরান ২৯ বছর বয়সে হঠাৎ করেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। তিনি ১০৬ টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক এবং ৬১ ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন, কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে তাঁকে কখনও সুযোগ দেওয়া হয়নি। পুরানের ক্যারিয়ার বেশ উত্থান-পতনপূর্ণ ছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে তিনি ১৩৬.৩৯ স্ট্রাইক রেটে ২২৭৫ টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক রান করেছেন। ওয়ানডেতেও তার স্ট্রাইক রেট ৯৯.১৫ ছিল, যা আধুনিক ক্রিকেটের হিসেবে দারুণ। তারপরও, টেস্ট দলে তাঁকে জায়গা দেওয়া হয়নি।

২. রায়ান টেন ডোশ্যাট (নেদারল্যান্ডস): মহান অলরাউন্ডার

নেদারল্যান্ডসের রায়ান টেন ডোশ্যাটকে আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম অন্ডাররেটেড অলরাউন্ডার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি ৩৩ ওয়ানডেতে ৬৭ গড়ে ১৫৪১ রান করেছেন এবং ৫৫ উইকেটও নিয়েছেন। কিন্তু নেদারল্যান্ডসের টেস্ট স্ট্যাটাস না থাকার কারণে তিনি লাল বলের ফর্ম্যাটে কখনও খেলতে পারেননি। ২০০৮ সালে নেদারল্যান্ডস টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছিল, সে সময় টেন ডোশ্যাট তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে ছিলেন।

৩. ডেভিড হাসি (অস্ট্রেলিয়া): দারুণ প্রথম-শ্রেণীর রেকর্ড, কিন্তু টেস্ট ক্যাপ নয়

অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড হাসিকে ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় "টেস্ট অনক্যাপড" খেলোয়াড় বলে মনে করা হয়। তিনি ১৯২ প্রথম-শ্রেণীর ম্যাচে ৫২.৫০ গড়ে ১৪,২৮০ রান করেছেন, যার মধ্যে ৪৪টি শতক রয়েছে। তারপরও, তাঁকে কখনও টেস্ট দলে স্থান দেওয়া হয়নি। হাসির সময় এসেছিল অস্ট্রেলীয় দলের সোনালী যুগে (২০০০-এর দশক), যখন দলে হেডন, পন্টিং, ক্লার্কের মতো दिग्गज ব্যাটসম্যানরা ছিলেন।

২০১০ সালে তিনি শেফিল্ড শিল্ডে ৯৭০ রান করেছিলেন, কিন্তু সেই বছরই তার চুক্তি বাতিল করা হয়েছিল। পরে হাসি টি-টোয়েন্টি লিগে খেলে খ্যাতি অর্জন করেছেন, কিন্তু টেস্ট ক্যাপ না পাওয়া তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ঘাটতি ছিল।

৪. ক্লাইভ রাইস (দক্ষিণ আফ্রিকা): আফ্রিকার সেরা অলরাউন্ডার, কিন্তু নিষেধাজ্ঞার শিকার

দক্ষিণ আফ্রিকার ক্লাইভ রাইসকে ১৯৭০-এর দশকের সেরা অলরাউন্ডার বলে মনে করা হত। তিনি ৪৮২ প্রথম-শ্রেণীর ম্যাচে ২৬,৩৩১ রান করেছেন এবং ৯৩০ উইকেটও নিয়েছেন। কিন্তু বর্ণবাদী নীতির কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছিল। রাইস ১৯৮৪ সালে সিল্ক কাট চ্যালেঞ্জ জিতেছিলেন, যেখানে তিনি ইয়ান বোথাম, রিচার্ড হ্যাডলি এবং কপিল দেবের মতো दिग्गजদের পেছনে ফেলে দিয়েছিলেন।

৫. কাইরন পোলার্ড (ওয়েস্ট ইন্ডিজ): টি-টোয়েন্টি কিং, কিন্তু টেস্ট স্বপ্ন অসম্পূর্ণ

ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক অধিনায়ক কাইরন পোলার্ড টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তো ধুমকেতু বলেই পরিচিত, কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে তাঁকে কখনও সুযোগ দেওয়া হয়নি। তিনি ১২৩ টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিকে ১৫৬৬ রান করেছেন এবং ৫৫ উইকেট নিয়েছেন, কিন্তু টেস্ট দলে তাঁকে কখনও জায়গা দেওয়া হয়নি। পোলার্ডের প্রথম-শ্রেণীর রেকর্ড দুর্বল ছিল (গড় ৩৭.৭১)। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাঁর টি-টোয়েন্টি দক্ষতার প্রয়োজন ছিল, তাই তাঁকে লম্বা ফর্ম্যাটে খেলাতে দেওয়া হয়নি। ২০১৫ সালে তিনি তাঁর শেষ প্রথম-শ্রেণীর ম্যাচ খেলেছিলেন এবং তারপর টি-টোয়েন্টি ফর্ম্যাটে মনোযোগ দিয়েছিলেন।

ক্রিকেটে অনেক খেলোয়াড় এমন আছেন যারা তাদের পারফরম্যান্স সত্ত্বেও টেস্ট ক্যাপ পরতে পারেননি। নিকোলাস পুরান, রায়ান টেন ডোশ্যাট, ডেভিড হাসি, ক্লাইভ রাইস এবং কাইরন পোলার্ডের মতো খেলোয়াড়রা ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে তো ঝড় তুলেছেন, কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটের স্বপ্ন অসম্পূর্ণ থেকে গেছে।

Leave a comment