ভারতীয় ক্রিকেট দল বর্তমানে ইংল্যান্ড সফরে রয়েছে, যেখানে তারা পাঁচ ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট সিরিজ খেলতে যাচ্ছে। ভারত এবং ইংল্যান্ড (IND vs ENG) এর মধ্যে এই সিরিজটি ২০ জুন থেকে শুরু হয়ে ৪ আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত চলবে।
খেলাধুলার খবর: ভারতীয় ক্রিকেট দল আবারও ইংল্যান্ডের চ্যালেঞ্জিং মাটিতে টেস্ট ক্রিকেটের পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে। ২০ জুন থেকে ৪ আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত চলবে এমন পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ভারতের নেতৃত্বে থাকবেন শুভমন গিল। রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলির মতো दिग्गजদের অবসরের পর এটিই প্রথম টেস্ট সিরিজ যেখানে টিম ইন্ডিয়া নতুন অধিনায়কের সাথে নামবে।
কিন্তু শুভমন গিলের সামনে শুধু অধিনায়কত্বের চাপ নয়, একটি ঐতিহাসিক দুর্বলতা ভেঙে ফেলার দায়িত্বও রয়েছে — ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জেতার ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, যা ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে অত্যন্ত দুর্লভ। ভারত এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ডে মাত্র ৯টি টেস্ট ম্যাচ জিতেছে, অন্যদিকে এই সময়ে ৬৮ বছরের ইতিহাস এবং ৬৫টিরও বেশি টেস্ট ম্যাচ খেলা হয়েছে।
মাত্র ৬ অধিনায়কই জয় এনে দিতে পেরেছেন
ভারত ইংল্যান্ডে এখন পর্যন্ত যে ৯টি টেস্ট ম্যাচে জয়লাভ করেছে, সেগুলো মাত্র ৬ জন ভারতীয় অধিনায়কের নেতৃত্বে এসেছে। এর মধ্যে অনেক এমন নাম রয়েছে যারা ভারতীয় ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক, আবার কিছু दिग्गज অধিনায়ক এই তালিকার বাইরে রয়েছে। আসুন জেনে নেই এই ঐতিহাসিক অধিনায়কদের সম্পর্কে:
১. অজিত ওয়াদেকার (১৯৭১) – প্রথম সোনালী মুহূর্ত
১৯৭১ সালে ভারত প্রথমবারের জন্য ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট ম্যাচ জেতার কীর্তি করেছিল। অজিত ওয়াদেকার সেই সময় ভারতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন। এই জয়টি ওভাল টেস্টে এসেছিল, যা ভারত ৪ উইকেটে জিতেছিল। এটি শুধু একটি টেস্ট জয় ছিল না, বরং বিদেশে ভারতের আত্মনির্ভরশীলতার প্রথম দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেছিল। ওয়াদেকারের নেতৃত্বে ভারত ক্রমাগত ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ইংল্যান্ডে সিরিজ জিতে ইতিহাস রচনা করেছিল।
২. কপিল দেব (১৯৮৬) – ইংল্যান্ডে প্রথম সিরিজ জয়
কপিল দেব, যিনি ১৯৮৩ সালে ভারতকে বিশ্বকাপ জুগিয়েছিলেন, ১৯৮৬ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেও আরেকটি ইতিহাস রচনা করেছিলেন। তাঁর অধিনায়কত্বে ভারত ৩ টেস্ট ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়লাভ করেছিল। লর্ডস টেস্টে ভারত ইংল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়েছিল। কপিল সেই ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত ২৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন।
৩. সৌরভ গাঙ্গুলি (২০০২) – আত্মবিশ্বাসের ফিরে আসা
২০০২ সালে দাদা নামে পরিচিত সৌরভ গাঙ্গুলির অধিনায়কত্বে ভারত লিডসে ইংল্যান্ডকে একটি ইনিংস এবং ৪৬ রানে হারিয়েছিল। এই জয়টি শুধু স্কোরবোর্ডে নয়, মানসিকভাবেও ইংল্যান্ডের উপর আধিপত্য বিস্তার করেছিল। এই ম্যাচ প্রমাণ করেছিল যে ভারত এখন বিদেশেও আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে পারে।
৪. রাহুল দ্রাবিড় (২০০৭) – শান্ত অধিনায়কত্ব, ঐতিহাসিক জয়
২০০৭ সালে রাহুল দ্রাবিড়ের নেতৃত্বে ভারত নটিংহাম টেস্ট জিতে ইংল্যান্ডে ২১ বছর পর সিরিজ নিজের করেছিল। এই জয়টি ১-০ ব্যবধানে এসেছিল এবং ভারতীয় দল সারা সফরে চমৎকার শৃঙ্খলা দেখিয়েছিল।
৫. এমএস ধোনি (২০১৪) – লর্ডসে ঐতিহাসিক ফিরতি
২০১৪ সালে এমএস ধোনির অধিনায়কত্বে ভারত লর্ডস টেস্টে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল। এটি সেই মাঠ যেখানে ১৯৮৬ সালে ভারতের প্রথম টেস্ট জয় এসেছিল। এই জয় প্রমাণ করেছিল যে ধোনি শুধু সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নয়, টেস্ট ক্রিকেটেও কৌশলগতভাবে সক্ষম।
৬. বিরাট কোহলি (২০১৮ এবং ২০২১) – ইংল্যান্ডে সবচেয়ে সফল ভারতীয় অধিনায়ক
বিরাট কোহলির নামে ইংল্যান্ডে সবচেয়ে বেশি টেস্ট জয়ের রেকর্ড রয়েছে। তিনি ২০০৮ সালে নটিংহাম টেস্ট এবং ২০২১ সালে লর্ডস ও ওভাল টেস্ট জিতে মোট ৩ জয় অর্জন করেছেন। এই জয়গুলো ভারতকে ইংল্যান্ডে নতুন আত্মবিশ্বাস দিয়েছিল এবং কোহলিকে বিদেশী মাটিতে ভারতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক চেহারা করে তুলেছিল।
কোন কোন दिग्गज তালিকার বাইরে?
চমকপ্রদ ব্যাপার হল, সচিন তেন্ডুলকর, অনিল কুম্বলে, রাহুল দ্রাবিড় (অধিনায়ক হিসেবে অনেক সফর), এবং রোহিত শর্মা-র মতো दिग्गजদের অধিনায়কত্বে ভারত ইংল্যান্ডে একটিও টেস্ট জিততে পারেনি। ২০২৫ সালের এই সিরিজ শুভমন গিলের জন্য অগ্নিপরীক্ষার চেয়ে কম নয়। তরুণ অধিনায়ক হিসেবে তাঁকে প্রথমবারের মতো টেস্ট ক্রিকেটে পুরো দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং সেটাও ইংল্যান্ডের মতো কঠিন পরিস্থিতিতে। যদি শুভমন এই সিরিজে অন্তত একটি জয় এনে দিতে পারেন, তাহলে তিনি এই ঐতিহাসিক অধিনায়কদের তালিকায় নিজের নাম লিখিয়ে দেবেন।