বিপুল দানের পরও ভারতীয় ছাত্রদের উপর ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোরতা

বিপুল দানের পরও ভারতীয় ছাত্রদের উপর ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোরতা
সর্বশেষ আপডেট: 23-05-2025

ভারতীয়রা হার্ভার্ড ও অন্যান্য আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়কে অর্থের অঢেল দান দিয়েছে, কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন ৭০০০ বিদেশি ছাত্রকে স্থানান্তর বা ভিসা বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে, যার ফলে ভারতীয় ছাত্ররা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ভারতীয় দানঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: গত কয়েক দশক ধরে ভারতীয় শিল্পপতি, বিজ্ঞানী ও ব্যবসায়ীরা আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে বিপুল পরিমাণে দান দিয়ে আসছেন। হার্ভার্ড, MIT, UCLA ও NYU-র মতো খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানগুলো ভারতীয়দের কাছ থেকে কোটি কোটি ডলারের অনুদান পেয়েছে। এই দানের উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষা, গবেষণা ও বৈশ্বিক সমাধানকে শক্তিশালী করা। কিন্তু এখন ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নীতি আন্তর্জাতিক ছাত্রদের, বিশেষ করে ভারতীয়দের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করেছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের আন্তর্জাতিক ছাত্রদের প্রতি কঠোর অবস্থান

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের সমর্থনে এবং ইসরায়েলের বিরোধিতায় ক্রমাগত চলছে এমন বিক্ষোভ ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে অপ্রীতিকর। এই বিক্ষোভ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীন নীতির কারণে হোয়াইট হাউস প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে এবং এখন আন্তর্জাতিক ছাত্রদের বের করে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে।

প্রায় ৭০০০ বিদেশি ছাত্র, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভারতীয়ও রয়েছে, তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে তারা অন্য কোনও স্কুলে স্থানান্তরিত হবে অথবা আমেরিকা ছেড়ে চলে যাবে। এই আদেশ তাদের বৈধ থাকার অনুমতি বাতিল করার মতো।

ভারতীয়রা আমেরিকান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে কত দান দিয়েছে?

আনন্দ মহিন্দ্র – মহিন্দ্র গ্রুপের চেয়ারম্যান হার্ভার্ডের মহিন্দ্র মানবিক কেন্দ্রের জন্য ১০ মিলিয়ন ডলার (৮৩ কোটি টাকা) দান করেছেন।

রতন টাটা – টাটা গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান ২০০০ সালে হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলে টাটা হল নির্মাণের জন্য ৫০ মিলিয়ন ডলার (৪১৫ কোটি টাকা) দান করেছিলেন।

ডাঃ কিরণ ও ডাঃ পল্লবী প্যাটেল – ফ্লোরিডার নোভা সাউথইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়কে ৫০ মিলিয়ন ডলার এবং সাউথ ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়কে ৩০.৫ মিলিয়ন ডলার, মোট ১৩০০ কোটি টাকার বেশি দান করেছেন। এই তহবিল থেকে ফ্লোরিডা এবং ভারতে মেডিকেল কলেজও তৈরি হয়েছে।

গুরুরাজ দেশপান্ডে – MIT-এর প্রযুক্তি উদ্ভাবন কেন্দ্রের জন্য ২০ মিলিয়ন ডলার (১৬৬ কোটি টাকা)। ২০১১ সালে নিউ ব্রান্সউইক বিশ্ববিদ্যালয় (কানাডা) কে ২.৫ মিলিয়ন ডলার (২০ কোটি টাকা)।

মণি এল. ভৌমিক – UCLA-কে ১১ মিলিয়ন ডলার (৯১ কোটি টাকা) এবং পরে ৩ মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত দান, মোট ১২৭ কোটি টাকা।

চন্দ্রিকা টান্ডন – NYU-এর ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলকে ১০০ মিলিয়ন ডলার (৮৩০ কোটি টাকা), এখন এটি NYU টান্ডন ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল নামে পরিচিত।

মুকুন্দ পদ্মনাভন – UCLA-কে মাইক্রোসিস্টেমস ল্যাবের জন্য ২.৫ মিলিয়ন ডলার (২০ কোটি টাকা), তিনবার ৫ লক্ষ ডলার (৪ কোটি টাকা) অতিরিক্ত সহযোগিতা।

বিনোদ গুপ্তা – নেব্রাস্কা বিশ্ববিদ্যালয়, GWU এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলিকে মোট ৫০ কোটি টাকার বেশি দান।

একদিকে ভারতীয় দাতারা আমেরিকার শিক্ষাব্যবস্থাকে শক্তিশালী করছেন, অন্যদিকে সেই শিক্ষাব্যবস্থা থেকে তাদেরই সন্তানদের বের করে দেওয়া হচ্ছে।

ভারতীয় ছাত্রদের উপর প্রভাব

এই নীতির সরাসরি প্রভাব পড়বে সেই হাজার হাজার ভারতীয় ছাত্রদের উপর যারা আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উচ্চশিক্ষার জন্য গিয়েছেন। F1 ভিসাধারী ছাত্ররা, যাদের পড়াশোনা এখন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছে।

এই সিদ্ধান্তের পিছনে কি রাজনীতি আছে?

ট্রাম্প প্রশাসনের এই নীতিকে আমেরিকান রাজনীতি ও মধ্যপ্রাচ্যের ইস্যুগুলির সাথে যুক্ত করে দেখা হচ্ছে। হার্ভার্ডের মতো প্রতিষ্ঠানগুলিতে ফিলিস্তিনের সমর্থনে হচ্ছে এমন বিক্ষোভ প্রশাসনকে ক্ষুব্ধ করেছে। এই পদক্ষেপ সেই প্রতিষ্ঠানগুলিকে শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা যারা প্রশাসনের নীতির বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর তুলছে।

Leave a comment