উত্তর ভারতসহ দিল্লিতে প্রচণ্ড তাপমাত্রার প্রকোপ অব্যাহত রয়েছে, বেশ কয়েকটি রাজ্যে লু আক্রান্তের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী কয়েকদিন তাপমাত্রায় তেমন কোনও পরিবর্তন হবে না।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস: দিল্লি-এনসিআর এবং উত্তর ভারতের বহু অঞ্চলে প্রচণ্ড তাপ এবং লু-র প্রকোপ অব্যাহত রয়েছে। রাজধানী দিল্লিতে জুন মাসের শুরু থেকেই পারদ আকাশ ছোঁয়া করছে। মঙ্গলবার সকালে আর্দ্রতা ছিল, দুপুরে লু-র তীব্রতা জনসাধারণের ঘর থেকে বেরোনোকে কঠিন করে তুলেছে। আবহাওয়া দপ্তর (IMD)-এর তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার দিল্লিতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি।
রাজস্থানে লু-র প্রকোপ, পশ্চিম ভারতে তাপপ্রবাহ সতর্কতা
রাজস্থানের পশ্চিমাঞ্চলে ১০ থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত তাপপ্রবাহ বা লু চলার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তরের মতে, ১৩ জুন পর্যন্ত পূর্ব রাজস্থানের বিভিন্ন স্থানে প্রচণ্ড লু-র সম্ভাবনা রয়েছে। জনসাধারণকে দুপুর ১২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বাইরে বেরোনো থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ, উত্তর মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যে আগামী দিনগুলিতে পারদ ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে। তাপের সাথে সাথে অনেক স্থানে "উষ্ণ রাত" অর্থাৎ তাপ থেকে মুক্তি না পাওয়া রাতেরও সম্ভাবনা রয়েছে, যার ফলে ঘুমের উপর প্রভাব পড়বে।
উত্তর-পশ্চিম ভারতে আগামী চার দিন তাপমাত্রায় তেমন কোনও পরিবর্তনের আশা করা যাচ্ছে না। তবে তারপরে তাপমাত্রা ২-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। মধ্য এবং পূর্ব ভারতেও আগামী দুই-তিন দিন তাপ অব্যাহত থাকবে এবং তারপর ধীরে ধীরে পারদ কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
দক্ষিণ ভারতে স্বস্তি, তীব্র বৃষ্টিপাত এবং বজ্রপাতের সম্ভাবনা
দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে বৃষ্টিপাত কিছুটা স্বস্তি এনেছে। কেরাল, কর্ণাটক, লক্ষদ্বীপ, তামিলনাড়ুতে আগামী সাত দিন হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তেলেঙ্গানা, রায়ালসীমা, অন্ধ্রপ্রদেশে ৩০-৫০ কিমি প্রতি ঘণ্টা বেগে তীব্র বাতাস এবং বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। বিশেষ করে ১৪ জুনের মধ্যে তামিলনাড়ু, পুদুচেরি এবং কারাইকালে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটতে পারে। মাছ ধরার এবং কৃষিকাজের সাথে জড়িতদের সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পশ্চিম ভারতেও বৃষ্টিপাতের সূচনা
কোঙ্কণ, গোয়া, মধ্য মহারাষ্ট্র, মারাঠোয়াড়া প্রভৃতি অঞ্চলে ১১ জুন হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত এবং তীব্র বাতাসের সম্ভাবনা রয়েছে। ১২ থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত এই অঞ্চলে ৫০-৬০ কিমি প্রতি ঘণ্টা বেগে বাতাসের সাথে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ১৩ এবং ১৪ জুন কোঙ্কণ এবং গোয়ায় অত্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
মধ্য এবং পূর্ব ভারতের আবহাওয়া
বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, ছত্তিসগড় এবং মধ্যপ্রদেশের বেশ কিছু অঞ্চলে ১১ থেকে ১৪ জুন বজ্রপাত এবং তীব্র বাতাসের সাথে বৃষ্টিপাত হতে পারে। বিহারে ১২-১৩ জুন ৬০-৭০ কিমি/ঘণ্টা বেগে তীব্র বাতাস বইতে পারে। এর ফলে কৃষিকাজ এবং যানবাহন চলাচলে প্রভাব পড়তে পারে। উপ-হিমালয় পশ্চিমবঙ্গ এবং সিকিমে আগামী সাত দিন পর্যন্ত রোদ-বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, যা তাপ থেকে কিছুটা স্বস্তি দেবে।
উত্তর ভারতে হালকা বৃষ্টিপাতের আভাস
যদিও উত্তর ভারত প্রচণ্ড তাপের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তবে আবহাওয়া দপ্তরের মতে ১২ থেকে ১৬ জুনের মধ্যে জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, উত্তর প্রদেশ এবং হরিয়ানায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। উত্তরাখণ্ডে ভারী বৃষ্টিপাতেরও সম্ভাবনা রয়েছে, যা পর্যটক এবং স্থানীয়দের জন্য সতর্ক থাকার সংকেত। পশ্চিম রাজস্থানে ১৪ থেকে ১৬ জুন হালকা বৃষ্টিপাত হতে পারে, যার ফলে প্রচণ্ড লু-র পরিস্থিতিতে কিছুটা স্বস্তি পাওয়ার আশা করা যায়।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারতে মৌসুমি বায়ুর তীব্রতা
উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে আগামী ৭ দিন ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। অসম, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, ত্রিপুরায় বজ্রপাত, বৃষ্টিপাত এবং তীব্র বাতাসের সাথে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে ১০ এবং ১১ জুন বাতাসের বেগ ৪০ কিমি/ঘণ্টা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
