দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে হঠাৎ করেই আবহাওয়ার পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। আবহাওয়াবিদ দপ্তর জানিয়েছে, এবার মৌসুমি বৃষ্টিপাত কেরালে তার স্বাভাবিক সময়ের আগেই, অর্থাৎ ২৬ মে-র দিকে আসতে পারে।
আবহাওয়া: দেশজুড়ে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে আবহাওয়া দপ্তর বড় ধরণের পূর্বাভাস দিয়েছে যে, এ বছর মৌসুমি বৃষ্টিপাত তার নির্ধারিত সময়ের প্রায় ছয় দিন আগে, অর্থাৎ ২৬ মে কেরালে আসতে পারে। সাধারণত ১ জুন কেরালে মৌসুমি বৃষ্টিপাত শুরু হয়, কিন্তু এবার ২০০৯ সালের পর এটি ভারতের এই দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যে সবচেয়ে তাড়াতাড়ি বৃষ্টি নিয়ে আসবে। এই অস্বাভাবিক পরিবর্তনের ফলে কৃষক, সাধারণ মানুষ এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে উৎসাহের সাথে সাথে সতর্কতাও বেড়েছে।
মৌসুমি বৃষ্টিপাত কখন-কোথায় শুরু হবে?
আবহাওয়া দপ্তরের মতে, ২২ মে থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বৃষ্টিপাত আরব সাগরের দক্ষিণাঞ্চল, মালদ্বীপ, লক্ষদ্বীপ, কেরাল এবং তামিলনাড়ুর কিছু অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করবে। এর পরে এটি ধীরে ধীরে বঙ্গোপসাগরের উত্তর ও পূর্বাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে পৌঁছাবে। এটি দ্রুত গতিতে সমগ্র ভারতকে আচ্ছাদন করে জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে প্রায় সবুজাভ এবং স্বস্তি নিয়ে আসবে।
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বৃষ্টিপাতের সাধারণ চক্র ভারতে একটি ঐতিহ্যগত ক্রম অনুসারে চলে। ১ জুনের দিকে এটি কেরালে পৌঁছায়, এর পরে ৮ জুলাই-এর মধ্যে সমগ্র দেশে বৃষ্টি ছড়িয়ে পড়ে। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি এটি উত্তর-পশ্চিম ভারত থেকে ফিরে যেতে শুরু করে এবং অক্টোবরের মাঝামাঝি সম্পূর্ণরূপে বিদায় নেয়। এবার মৌসুমি বৃষ্টিপাতের তাড়াতাড়ি আগমনের ফলে সম্পূর্ণ চক্রে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।
গত কয়েক বছরের তুলনায় কি বিশেষ?
গত কয়েক বছরে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের শুরুর তারিখগুলিতে পরিবর্তন দেখা গেছে। ২০২৩ সালে মৌসুমি বৃষ্টিপাত ৩০ মে কেরালে পৌঁছেছিল, ২০২২ সালে এটি ছিল ২৯ মে, যখন ২০২১ এবং ২০২০ সালে এটি যথাক্রমে ৩ জুন এবং ১ জুন শুরু হয়েছিল। ২০০৯ সালের পর এবারই প্রথমবারের মতো মৌসুমি বৃষ্টিপাত এত তাড়াতাড়ি আসছে, যা আবহাওয়াবিদদের কাছেও বিশেষ।
এর ফলে কৃষকদের সময়ের আগেই ফসলের প্রস্তুতির সুবিধা হবে, কিন্তু কিছু এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত এবং ঝড়ো আবহাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
মৌসুমি বৃষ্টিপাতের আগে খারাপ আবহাওয়ার সতর্কতা
মৌসুমি বৃষ্টিপাতের শুরুর আগে অনেক রাজ্যে আবহাওয়ার অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে। আন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, মারাঠোয়াড়া, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, ত্রিপুরা, উপ-হিমালয় পশ্চিমবঙ্গ এবং সিকিমের কিছু অঞ্চলে ৬৪.৫ থেকে ১১৫.৫ মিমি পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এর সাথে সাথে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান এবং উত্তরাখণ্ডে ২১ থেকে ২৬ মে-র মধ্যে ঝড়ো বাতাস, বজ্রপাত, ঝড়-তুফান এবং শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে যে, মধ্য পাকিস্তান থেকে রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গ হয়ে উত্তর বাংলাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত ট্রফ লাইন এই খারাপ আবহাওয়ার পিছনে কারণ। এর ফলে এই এলাকাগুলিতে হঠাৎ বৃষ্টিপাত এবং ঝড়ো বাতাসের ধারা শুরু হতে পারে।
আবহাওয়া দপ্তরের পরিসংখ্যান কী বলে?
ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের ৫০ বছরের গড় পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যদি বৃষ্টিপাত ৮৭ সেমি-র ৯৬ থেকে ১০৪ শতাংশের মধ্যে হয়, তবে তাকে স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়। যদি ৯০ শতাংশের কম হয়, তবে তাকে কম বৃষ্টিপাত এবং ১০৫ থেকে ১১০ শতাংশের মধ্যে হয় তবে তাকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত বলে মনে করা হয়। আইএমডি এপ্রিল মাসেই বলেছিল যে, এবার মৌসুমি বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হবে এবং এল নিনোর প্রভাব এবার ভারতে কম থাকবে। এল নিনোর মতো পরিস্থিতি সাধারণত কম বৃষ্টিপাতের জন্য দায়ী, কিন্তু ২০২৫ সালে তা হবে না।
কৃষক ও সাধারণ মানুষের জন্য এর অর্থ কী?
মৌসুমি বৃষ্টিপাতের তাড়াতাড়ি আগমনের ফলে কৃষকদের তাদের চাষাবাদের জন্য বড় সুবিধা হবে। তারা সময়ের আগেই ফসল বপন করতে পারবে এবং সেচের ব্যবস্থা আরও ভালো করতে পারবে। কিন্তু ঝড়ো বাতাস এবং ঝড়ের কারণে কিছু এলাকায় ফসলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে, যার উপর সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। শহরগুলিতে গরমের এই তীব্র সময়ের মধ্যে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ফলে মানুষ স্বস্তি পাবে, সাথে সাথে পানির সরবরাহও বাড়বে, যা অনেক এলাকার পানীয় জলের সংকটের জন্য প্রয়োজনীয়।
যদিও মৌসুমি বৃষ্টিপাতের তাড়াতাড়ি আগমন কৃষিক্ষেত্রে লাভজনক হবে, তবে আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তনের ফলে বন্যা, জলাবদ্ধতা এবং শিলাবৃষ্টির মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। এমন অবস্থায় প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসনকে পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হবে যাতে যে কোনো ধরণের দুর্যোগ মোকাবেলা করা যায়। এছাড়াও, সাধারণ মানুষকে আবহাওয়া দপ্তর কর্তৃক প্রকাশিত সতর্কতাগুলি অনুসরণ করতে হবে।