ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর (আইএমডি)-এর মতে, মৌসুমি বায়ু ২৪শে মে-তেই কেরালে প্রবেশ করেছে, যেখানে সাধারণত ১লা জুনে এর আগমন হয়। ২০০৯ সালের পর এটাই প্রথমবার যখন মৌসুমি বায়ু এত তাড়াতাড়ি এসেছে।
আবহাওয়া: এবার মৌসুমি বায়ু সকলকে অবাক করে নির্ধারিত সময়ের আগেই ভারতে আগমন করেছে। ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর (আইএমডি)-এর মতে, ২৪শে মে-তেই কেরালে মৌসুমি বায়ুর প্রবেশ ঘটেছে, যা সাধারণত ১লা জুনে হয়। ২০০৯ সালের পর এমন অবস্থা প্রথম দেখা গেছে, যখন মৌসুমি বায়ু এত দ্রুত ভারতে প্রবেশ করেছে।
দ্রুতগতির মৌসুমি বায়ু দেশজুড়ে আবহাওয়া ও কৃষিক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। যেখানে দক্ষিণ ভারতে বৃষ্টির ধারা শুরু হয়েছে, সেখানে উত্তর ভারতে পূর্ব-মৌসুমি বৃষ্টিতে মানুষ প্রচণ্ড গরম থেকে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে।
২০০৯ সালের পর সবচেয়ে দ্রুত আগমন
আবহাওয়া দপ্তরের বিজ্ঞানী নীথা কে গোপাল জানান, আগে ধারণা করা হয়েছিল যে মৌসুমি বায়ু ২৭শে মে-র দিকে কেরালে পৌঁছাবে, কিন্তু তিন দিন আগেই এসেছে। এবারের মৌসুমি বায়ুর আগমনকে অস্বাভাবিক কিন্তু উপকারী বলে মনে করা হচ্ছে, বিশেষ করে কৃষক এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য, যাদের জীবিকা বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল।
কেরাল হয়ে মৌসুমি বায়ু এখন পর্যন্ত লক্ষদ্বীপ, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, গোয়া, মহারাষ্ট্র, গুজরাট এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মিজোরাম ও ত্রিপুরা প্রভৃতি রাজ্যে পৌঁছে গেছে। এর সাথে অ্যান্ডামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ১৩ই মে-তেই এর আগমন ঘটেছিল। আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগর উভয় অঞ্চলে সক্রিয় মৌসুমি বায়ু এখন আরও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
আপনার রাজ্যে কবে আসবে মৌসুমি বায়ু?
- উত্তরপ্রদেশ: পূর্ব উত্তরপ্রদেশে ২০শে জুনের মধ্যে এবং পশ্চিম অংশে ২৫-৩০শে জুনের মধ্যে মৌসুমি বায়ুর আগমনের সম্ভাবনা রয়েছে।
- দিল্লি-এনসিআর: রাজধানীতে ২৭ থেকে ২৯শে জুনের মধ্যে মৌসুমি বায়ুর আগমনের আশা করা হচ্ছে। তবে, বর্তমানে পূর্ব-মৌসুমি বৃষ্টি দিল্লিবাসীদের কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে।
- হরিয়ানা ও পাঞ্জাব: ২৯শে জুন থেকে ২রা জুলাইয়ের মধ্যে মৌসুমি বায়ু এখানে পৌঁছাতে পারে।
- রাজস্থান: ২৫শে জুন থেকে ৫ই জুলাইয়ের মধ্যে মৌসুমি বায়ু পুরো রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশা করা হচ্ছে।
- বিহার ও ঝাড়খণ্ড: ১৬ থেকে ১৮শে জুনের মধ্যে মৌসুমি বায়ুর আগমনের সম্ভাবনা রয়েছে।
- মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীসগড়: ১৫ থেকে ২০শে জুনের মধ্যে মৌসুমি বায়ু এই রাজ্যগুলিতে সক্রিয় হতে পারে এবং ২৫শে জুনের মধ্যে এই রাজ্যগুলিতে সম্পূর্ণরূপে ছড়িয়ে পড়বে।
- উত্তরাখণ্ড: এখানে ২৫ থেকে ৩০শে জুনের মধ্যে মৌসুমি বায়ুর আগমন হবে।
- হিমাচল প্রদেশ ও জম্মু-কাশ্মীর: এখানে ২৫শে জুনের পর মৌসুমি বায়ুর সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কেরাল ও তামিলনাড়ুতে ভারী বৃষ্টির তাণ্ডব
কেরালে মৌসুমি বায়ুর আগমনের সাথে সাথেই তীব্র বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। কাসারগোড় ও কান্নুর জেলায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে, অন্যদিকে কোল্লাম, ত্রিভেন্দ্রম, এর্নাকুলামসহ ১১টি জেলায় অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। তামিলনাড়ুর নীলগিরি জেলায়ও রেড অ্যালার্ট ঘোষণা করা হয়েছে। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
মৌসুমি বায়ুর দ্রুত আগমনের কারণ কি?
- মৌসুমি বায়ুর দ্রুত আগমনের পিছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে:
- আরব সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কেন্দ্র মৌসুমি বায়ুকে গতি দিয়েছে।
- বিদর্ভ পর্যন্ত বিস্তৃত ট্রাফ লাইন বৃষ্টিপাতের কার্যকলাপকে সমর্থন করেছে।
- ENSO (এল নিনো/লা নিনা) -এর নিরপেক্ষ অবস্থা আবহাওয়াকে অনুকূল রেখেছে।
- হিমালয়ে কম তুষারপাতের কারণে উত্তর ভারতের তাপমাত্রা বৃদ্ধিও মৌসুমি বায়ুকে ত্বরান্বিত করেছে।
কৃষকদের জন্য স্বস্তির বার্তা
মৌসুমি বায়ুর দ্রুত আগমনের ফলে খরিফের ফসলের বপন সময়মতো হতে পারবে, যার ফলে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। সাথে সাথে, মৎস্য চাষ, দুগ্ধজাত এবং জল-উৎসের উপর নির্ভরশীল অন্যান্য ব্যবসাও উপকৃত হবে। আইএমডি-এর মৌসুমি বায়ু মিশন এবং অত্যাধুনিক কম্পিউটিং সিস্টেম এই সঠিক পূর্বাভাসে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এটিকে ভারতীয় আবহাওয়াবিজ্ঞানের একটি বড় সাফল্য বলে মনে করা হচ্ছে।
