আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেরালে পৌঁছাবে মৌসুমি বৃষ্টি, ১৬ বছর পর সবচেয়ে দ্রুত আগমন। এবার মৌসুমি বৃষ্টির সময়মতো আগমনে খরিফ ফসলের চাষাবাদে উৎসাহ পাবে কৃষকরা।
Kerala: ভারতে মৌসুমি বৃষ্টির আগমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়, এবং এ বছর কেরালে নির্ধারিত সময়ের আগে এর আগমন বিভিন্ন দিক থেকে বিশেষ। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (IMD) ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বৃষ্টি কেরালে আঘাত হানবে। গত ১৬ বছরে এটি মৌসুমি বৃষ্টির সবচেয়ে দ্রুত আগমন হবে, যা দেশজুড়ে কৃষক এবং কৃষিভিত্তিক ক্ষেত্রে আনন্দের ঢেউ তুলেছে।
১৬ বছর পর নতুন রেকর্ড গড়ার প্রস্তুতির মধ্যে মৌসুমি বৃষ্টি
এবার মৌসুমি বৃষ্টি নির্ধারিত তারিখ (১ জুন) থেকে প্রায় এক সপ্তাহ আগেই কেরালে পৌঁছানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। ২০০৯ এবং ২০০১-এর পর এটিই প্রথমবার যখন মৌসুমি বৃষ্টি এত তাড়াতাড়ি আসছে। কেরালে মৌসুমি বৃষ্টির সাধারণ আগমন ১ জুন, কিন্তু এবার এটি ২৫-২৬ মে-তেই আঘাত হানতে পারে। আবহাওয়া বিভাগের মতে, কেরালে মৌসুমি বৃষ্টির জন্য সকল পরিস্থিতি অনুকূল হয়ে উঠেছে। এর পেছনে লো প্রেশার সিস্টেম (Low Pressure System) এবং আরব সাগর থেকে আসা আর্দ্র বাতাসের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
কেন সময়মতো মৌসুমি বৃষ্টির আগমন গুরুত্বপূর্ণ?
ভারতে ৭০% বৃষ্টিপাত মৌসুমি বৃষ্টির সময়কালে হয়, যা জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই বৃষ্টিই কৃষিকাজ, পানীয় জল, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং ভূগর্ভস্থ জলের জন্য অপরিহার্য। সময়মতো এবং পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে, বিশেষ করে কৃষিক্ষেত্রকে। এ বছর IMD সাধারণের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে, যা থেকে আশা করা হচ্ছে যে খরিফ ফসল (যেমন ধান, ভুট্টা, সয়াবিন, তুলা) উৎপাদন রেকর্ড স্তরে পৌঁছাতে পারে।
কৃষিক্ষেত্রের উপর এর প্রভাব কী?
- ধান এবং ভুট্টা যে খরিফ ফসলের চাষাবাদ সময়মতো শুরু হতে পারবে।
- ভূগর্ভস্থ জল এবং জলাধার পূর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য হবে, যা রবি ঋতুতে সেচের সমস্যা কম করবে।
- কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, যার ফলে দেশের খাদ্য সুরক্ষা শক্তিশালী হবে।
- কৃষকদের আয় বৃদ্ধি পাবে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি আসবে।
কেরালের পর মৌসুমি বৃষ্টি কোথায় কোথায় পৌঁছাবে?
- কেরালের পর মৌসুমি বৃষ্টি ধীরে ধীরে কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, গোয়া এবং গুজরাটের দিকে এগিয়ে যাবে।
- দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বৃষ্টি আগামী কিছু দিনের মধ্যে কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, মধ্য এবং দক্ষিণ আরব সাগর, বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু অংশে আগে বৃদ্ধি পাবে।
- উত্তর ভারত (দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পঞ্জাব) এ মৌসুমি বৃষ্টির ২৫ থেকে ৩০ জুনের মধ্যে পৌঁছানোর সম্ভাবনা থাকে।
- পশ্চিম ভারত (রাজস্থান, গুজরাট) এ মৌসুমি বৃষ্টি ১৫ থেকে ২০ জুনের মধ্যে আঘাত হানবে।
লো প্রেশার সিস্টেমের প্রভাব কী পড়বে?
আরব সাগরের উপরে গঠিত লো প্রেশার সিস্টেম আগামী ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে আরও শক্তিশালী হতে পারে। এর ফলে কেরাল, কর্ণাটক, গোয়া এবং মহারাষ্ট্রের কিছু অংশে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে সমুদ্রে উঁচু ঢেউ উঠতে পারে এবং মাছ ধরার জন্য সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পশ্চিম তীরবর্তী এলাকায় বাতাসের বেগ বৃদ্ধি পেতে পারে, যার ফলে স্থানীয় আবহাওয়ায় পরিবর্তন দেখা যাবে।
মৌসুমি বৃষ্টির সঙ্গে জড়িত ইতিহাস: দ্রুত এবং বিলম্বের রেকর্ড
- সবচেয়ে দ্রুত মৌসুমি বৃষ্টির আগমন: ১১ মে ১৯১৮ (কেরালে)
- সবচেয়ে বিলম্বে মৌসুমি বৃষ্টির আগমন: ১৮ জুন ১৯৭২ (কেরালে)
- গত বছর (২০২৪) মৌসুমি বৃষ্টির আগমন: ৩০ মে হয়েছিল।
মৌসুমি বৃষ্টির অগ্রগতি উপর দৃষ্টি
দেশের অনেক অংশে প্রচণ্ড গরমের থেকে মুক্তি পেতে মৌসুমি বৃষ্টির অপেক্ষা করা হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে আগামী দিনগুলিতে আবহাওয়া বিভাগের আপডেট দেখা অত্যন্ত জরুরী। কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যে তারা মৌসুমি বৃষ্টির অগ্রগতির অনুসারে তাদের চাষাবাদের পরিকল্পনা তৈরি করুক এবং আবহাওয়া বিভাগের সতর্কতার পরামর্শ পালন করুক।
এ বছর মৌসুমি বৃষ্টি থেকে কৃষকদের কী আশা?
IMD-এর মতে, ২০২৫ সালে মৌসুমি বৃষ্টি সাধারণের চেয়ে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এর ফলে খরিফ ঋতুতে ধান, ভুট্টা, সয়াবিন, তুলা এবং তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি আসবে, খাদ্য সুরক্ষা শক্তিশালী হবে এবং দেশের GDP-তে কৃষির অবদান বৃদ্ধি পাবে।