মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক আক্রমণের পরিকল্পনাকে তাত্ত্বিকভাবে অনুমোদন দিয়েছেন। চূড়ান্ত আদেশ স্থগিত রাখা হয়েছে, ইরান পারমাণবিক কর্মসূচী পরিত্যাগ করতে রাজি আছে কিনা তা পর্যবেক্ষণের জন্য।
America Attack on Iran: ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘর্ষের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এখন আরও নির্ণায়ক হয়ে উঠছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের উপর সামরিক আক্রমণের পরিকল্পনাকে সবুজ সংকেত দিয়েছেন। তবে তিনি চূড়ান্ত আদেশ কিছু সময়ের জন্য স্থগিত রেখেছেন, ইরান আলোচনার জন্য রাজি হবে কিনা তা দেখার জন্য।
আক্রমণ নাকি আলোচনা
রয়টার্স এবং ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনের মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্প তার শীর্ষ পরামর্শদাতাদের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন, যেখানে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান নিয়ে গুরুতর আলোচনা হয়েছে। এই বৈঠকে ট্রাম্প তাত্ত্বিকভাবে আক্রমণের অনুমোদন দিয়েছেন, কিন্তু তিনি বলেছেন যে চূড়ান্ত আদেশ দেওয়ার আগে তিনি দেখতে চান ইরান কি তার পারমাণবিক কর্মসূচী বন্ধ করতে রাজি আছে কিনা।
প্রতিবেদনে বৈঠকে জড়িত তিন ব্যক্তির বরাত দিয়ে বলা হয়েছে যে ট্রাম্প আশা করছেন, যদি ইরান বুঝতে পারে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আসলে আক্রমণের জন্য প্রস্তুত, তাহলে তারা পারমাণবিক কর্মসূচী বন্ধ করে আলোচনার টেবিলে আসবে।
ইরানের কঠোর জবাব
ট্রাম্পের হুমকির জবাবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেঈ স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন যে ইরান কখনোই নতি স্বীকার করবে না। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণ করে, তাহলে তাকে গুরুতর ও অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। খামেনেঈ বলেছেন, "ইরানি জাতি হুমকিতে ভয় পায় না এবং আত্মসমর্পণও করবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি আক্রমণ করে, তাহলে তার কঠোর জবাব দেওয়া হবে।"
ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যে দ্বিমত
যদিও ট্রাম্প আক্রমণের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন, কিন্তু তার নিজস্ব রাজনৈতিক দলের মধ্যে এ নিয়ে একমত নেই। ট্রাম্পের অনেক প্রধান সমর্থক, যাদের মধ্যে তার প্রাক্তন উপদেষ্টা স্টিভ ব্যাননও রয়েছেন, ইরানের উপর আক্রমণের বিরোধিতা করছেন। তারা চান না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবার মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ুক।
ব্যানন এবং অন্যান্য ট্রাম্প সমর্থক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একান্ত নীতির সমর্থক এবং মনে করেন যে ইসরায়েলকে তার সামরিক অভিযান নিজেই সম্পন্ন করতে হবে। প্রতিবেদনের মতে, MAGA আন্দোলনের সাথে জড়িত অনেক সমর্থকও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি যুদ্ধে জড়িত হওয়ার বিরোধিতা করছেন।
রিপাবলিকান দলের মধ্যেও মতবিরোধ
রিপাবলিকান দলের মধ্যেও এই বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিচ্ছে। কিছু নেতা ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ানোর পক্ষে, অন্যদিকে কিছু নেতা এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন যে এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরও একটি দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। ট্রাম্প নিজেই স্বীকার করেছেন যে কিছু সমর্থক তার সাথে অসন্তুষ্ট, কিন্তু তিনি এখনও এই ব্যাপারে অটল যে ইরানকে পারমাণবিক শক্তি হতে দেওয়া যাবে না।
নেতানিয়াহুর চাপ
এই পুরো পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। নেতানিয়াহু চান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে তাদের সামরিক অভিযানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করুক। তিনি ট্রাম্পের কাছে অনুরোধ করেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিকে লক্ষ্য করে আঘাত হানুক এবং সেগুলিকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিক।
ইসরায়েলি বিমানবাহিনী ইতোমধ্যেই ইরানের নাতানজ, ইসফাহান, কারাজ এবং ফোর্ডোর মতো গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিতে আক্রমণ চালিয়েছে। এর মধ্যে ফোর্ডোকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয় কারণ এটি ইরানের গোপন পারমাণবিক কর্মসূচী পরিচালনার প্রধান কেন্দ্র। ইসরায়েল দাবি করেছে যে তারা এই সাইটে গুরুতর ক্ষতি করতে পারেনি, তাই তাদের মার্কিন সামরিক শক্তির প্রয়োজন।
বি-২ বোমারু এবং বঙ্কার বাস্টার বোমার প্রস্তুতি
যদি ট্রাম্প আক্রমণের চূড়ান্ত আদেশ দেন, তাহলে মার্কিন বিমানবাহিনী বি-২ বোমারু বিমান ব্যবহার করতে পারে। এই বিমান ৩০,০০০ পাউন্ডের 'বঙ্কার বাস্টার' বোমা ফেলতে সক্ষম, যা গোপন পারমাণবিক সুবিধা ধ্বংস করতে পারে। মনে করা হচ্ছে, এটি বিশেষ করে ফোর্ডো পারমাণবিক কেন্দ্রকে লক্ষ্য করে ব্যবহার করা হতে পারে।