লস্কর-এ-তৈয়বায়ের সন্ত্রাসবাদী আবু কাতালকে পাকিস্তানে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সে হাফিজ সঈদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং রাজৌরি-রিয়াসি হামলার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন, এনআইএ তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছিল।
পাকিস্তান: পাকিস্তানে ভারতের আর এক শত্রুর অবসান ঘটেছে। লস্কর-এ-তৈয়াবার নির্মম সন্ত্রাসবাদী আবু কাতাল ওরফে কাতাল সিন্ধিকে পাঞ্জাব প্রদেশের ঝেলুম জেলায় অজ্ঞাত সন্ত্রাসবাদীরা গুলি করে হত্যা করেছে। বিশেষত্ব হলো, আবু কাতাল যখন সন্ত্রাসবাদী সংগঠন লস্করের প্রধান হাফিজ সঈদের সাথে উপস্থিত ছিলেন, তখনই এই হামলা সংঘটিত হয়।
মুম্বাই হামলার মাস্টারমাইন্ডের ঘনিষ্ঠ ছিলেন কাতাল
আবু কাতাল ভারতের সবচেয়ে খুঁজে পাওয়া সন্ত্রাসবাদীদের একজন ছিলেন এবং মুম্বাই হামলার মাস্টারমাইন্ড হাফিজ সঈদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। তিনি জম্মু-কাশ্মীরে অনেক সন্ত্রাসবাদী হামলা চালিয়েছিলেন এবং রাজৌরি ও রিয়াসি হামলার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন। জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছিল।
লস্করের প্রধান অপারেশনাল কমান্ডার ছিলেন আবু কাতাল
হাফিজ সঈদ আবু কাতালকে লস্কর-এ-তৈয়াবার প্রধান অপারেশনাল কমান্ডার নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী হামলার পরিকল্পনা তৈরি করতেন এবং সন্ত্রাসবাদীদের নিয়োগ ও সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশ করানোর কাজে পারদর্শী ছিলেন। এই কারণে লস্করে তার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।
রাজৌরি হামলার মাস্টারমাইন্ড
১ জানুয়ারী ২০২৩-এ রাজৌরি জেলার ধাঙ্গরি গ্রামে সন্ত্রাসবাদী হামলায় সাতজন নিরীহ নাগরিক নিহত হয়েছিলেন, যার মধ্যে দুজন শিশুও ছিল। এর পরের দিনই একটি আইইডি বিস্ফোরণ ঘটেছিল। এই হামলার তদন্তে এনআইএ যে পাঁচজন সন্ত্রাসবাদীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে, তাদের মধ্যে তিনজন পাকিস্তানি নাগরিক ছিলেন। এদের মধ্যে ছিলেন সাইফুল্লাহ ওরফে সাজিদ জাট্ট, মোহাম্মদ কাসিম এবং আবু কাতাল।
রিয়াসি বাস হামলা: আবু কাতালের সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্ক
৯ জুন ২০২৪-এ জম্মু-কাশ্মীরের রিয়াসিতে তীর্থযাত্রীদের বাসে সন্ত্রাসবাদীরা অতর্কিত হামলা চালিয়েছিল। কাটরা যাওয়া বাসে সন্ত্রাসবাদীরা অন্ধাধুন্ধ গুলি করে, যাতে চালক নিহত হয় এবং বাস গভীর খাদে পড়ে যায়। এই হামলায় নয়জন তীর্থযাত্রী নিহত হয়। টিআরএফ (দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট) এই হামলার দায় স্বীকার করেছিল। তদন্তে উঠে আসে, এই হামলার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন আবু কাতাল।
২০১৭ সালের রিয়াসি বোমা হামলা এবং ভাটিয়া দুরিয়ান হামলা
আবু কাতালের সন্ত্রাসবাদী ইতিহাস বেশ পুরোনো। ২০০৭ সালে রিয়াসিতে বোমা হামলা এবং এপ্রিল ২০২৩ সালে রাজৌরি-পুঞ্ছের ভাটিয়া দুরিয়ান এলাকায় সেনার গাড়িতে হামলার মাস্টারমাইন্ডও ছিলেন তিনি। ২০০০-এর দশকের শুরুতে কাতালের শক্তিশালী নেটওয়ার্কের কারণে জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী ঘটনা দ্রুত বেড়ে উঠেছিল। তিনি লস্করের সিনিয়র কমান্ডার সাজিদ জাট্টকে রিপোর্ট করতেন, যার নাম রাজৌরি হামলায় উঠে এসেছিল।
পাকিস্তানে আবু কাতালের হত্যার পর হাফিজ সঈদ নিখোঁজ
আবু কাতালের হত্যার পর থেকেই লস্করের প্রধান হাফিজ সঈদ নিখোঁজ বলে জানা যাচ্ছে। পাকিস্তানে লস্করের শীর্ষ সন্ত্রাসবাদীদের লক্ষ্যবস্তু করা এটি প্রথম ঘটনা নয়। আবু কাতালের মৃত্যুতে লস্কর বড় ধাক্কা খেয়েছে এবং এর ফলে জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের উপর প্রভাব পড়তে পারে।