ইরান ইসরাইলের উপর ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩’ এর আওতায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন আক্রমণ চালিয়েছে। ইসরাইলের বিমান হামলার প্রতিশোধ হিসেবে এই আক্রমণ চালানো হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
ইসরাইল-ইরান যুদ্ধ: ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে চলমান সংঘাত আরও একটি বিপজ্জনক মোড় নিয়েছে। ইরান "অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩" শুরু করে শুক্রবার রাতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করেছে। ইসরাইল কর্তৃক ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক ঘাঁটিতে সম্প্রতি হামলার প্রতিশোধ হিসেবে এই আক্রমণ চালানো হয়েছে। তেহরানের পক্ষ থেকে এটিকে ইরানী সামরিক কর্মকর্তা ও সাধারণ নাগরিকদের মৃত্যুর প্রতিশোধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
জেরুসালেম ও তেল আবিবে বিস্ফোরণ
জেরুসালেমে একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং এরপর সায়রেন বাজতে শুরু করে। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অবিলম্বে সক্রিয় হয়ে ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে আটকানোর চেষ্টা করেছে, তবে অনেক ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছে গেছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মধ্য ইসরাইলে নয়টি এলাকায় হামলা হয়েছে, যেখানে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে।
ইরানি মিডিয়ার দাবি: ১৫০ টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে
ইরানের সরকারি মিডিয়া জানিয়েছে, এই অপারেশনে ১৫০ টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলের দিকে নিক্ষেপ করা হয়েছে। এছাড়াও ড্রোন ও অন্যান্য আধুনিক অস্ত্রের ব্যবহার করা হয়েছে। মিডিয়া প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, একজন ইসরাইলি পাইলটকেও ধরা হয়েছে।
ইরানি সেনাবাহিনীর বিবৃতি: এটি প্রতিশোধমূলক হামলা
ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) একটি বিবৃতি জারি করে বলেছে, ইরানের ভেতরে 'আক্রমণাত্মক ও সন্ত্রাসবাদী' হামলার জবাবে এই হামলা চালানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "আমাদের সামরিক ও পারমাণবিক প্রতিষ্ঠানে হামলার পর আমরা এই সঠিক ও পরিকল্পিত প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিয়েছি।"
অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩: ঈদের রাতে শুরু হওয়া হামলা
আইআরজিসি জানিয়েছে, ঈদে গদিরের রাতে এই অপারেশন শুরু হয়েছে, যা ইসলামি জগতে একটি পবিত্র অনুষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। 'ইয়া আলি ইবনে আবি তালিব' পবিত্র আহ্বানের সাথে হামলার সূচনা করা হয়েছে। ইরানি সেনাবাহিনীর দাবি, কয়েক ডজন সামরিক কেন্দ্র, বিমানবন্দর ও গোপন ঘাঁটি লক্ষ্যবস্তুতে ছিল।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতার বিবৃতি
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেই একটি বিবৃতি জারি করে বলেছেন, "জায়োনি শাসন একটি বড় ভুল করেছে। ইরানি জনগণ তাদের সশস্ত্র বাহিনীর সাথে আছে এবং এই শত্রু তার অপরাধের শাস্তি ভোগ করবে। আমরা তাদের ধ্বংস করে দেব।"
ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছিলেন নারী, শিশু ও বিজ্ঞানী
ইরানি মিডিয়ার মতে, ইসরাইল যেসব স্থাপনা লক্ষ্য করেছে তার মধ্যে চারজন পারমাণবিক বিজ্ঞানী, উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও অনেক সাধারণ নাগরিক ছিল। নারী ও শিশুদের মৃত্যুর বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়েছে। ইরানী জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি ও আইআরজিসির মহাকাশ বিভাগের প্রধানের হত্যার খবরও প্রকাশ পেয়েছে।
ইসরাইলের প্রতিক্রিয়া: লাল রেখা পেরিয়ে গেছে
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের জবাবে ইসরাইলের সেনাবাহিনী (আইডিএফ) একটি বিবৃতি জারি করে বলেছে, তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে এবং জনগণকে নিরাপদ স্থানে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াব গ্যালেন্ট বলেছেন, "ইরান নাগরিক এলাকায় হামলা চালিয়ে লাল রেখা পেরিয়ে গেছে। এর জবাব অত্যন্ত কঠোর হবে।"
নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের আলোচনা
এই ঘটনার মধ্যে, আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে ফোনে আলোচনা হয়েছে। দুই দিনের মধ্যে দ্বিতীয়বার এই বিষয়ে দুই নেতা আলোচনা করেছেন। আমেরিকার প্রতিক্রিয়া নিয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক কোন বিবৃতি আসেনি, তবে দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত আলোচনা চলছে।