ইস্তানবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পদক্ষেপে এরদোয়ানের প্রতিদ্বন্দ্বী একরেম ইমামওগ্লুর ডিগ্রি বাতিল, বিরোধীদের নির্বাচনের আগে বড় ধাক্কা। ইমামওগ্লু একে চাপের ফলে নেওয়া সিদ্ধান্ত বলে অভিহিত করেছেন।
তুরস্ক: তুরস্কের রাজনীতিতে তীব্র অস্থিরতা বিরাজ করছে। রাষ্ট্রপতি রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানের সরকার ও সংস্থাগুলি বিরোধীদের জন্য নানা সমস্যা সৃষ্টি করছে। এই ধারাবাহিকতায় ইস্তানবুল বিশ্ববিদ্যালয় একটি বড় পদক্ষেপ নিয়ে ইস্তানবুলের মেয়র এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধীদের সম্ভাব্য প্রার্থী একরেম ইমামওগ্লুর ৩৪ বছর পুরোনো স্নাতক ডিগ্রি বাতিল করে দিয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, তুরস্ক পুলিশ একরেম ইমামওগ্লুকে গ্রেফতার করেছে।
তুরস্কে বর্ধমান মূল্যস্ফীতি এবং সরকারবিরোধী ঢেউ
রাষ্ট্রপতি এরদোয়ান বর্তমানে প্রচণ্ড জনবিরোধিতার মুখোমুখি। তুরস্কের অর্থনীতি নির্বাচনের প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে। ২০২৩ সালে মূল্যস্ফীতির হার ৮৫% পর্যন্ত পৌঁছেছিল এবং তুরস্কের জাতীয় মুদ্রা লিরায় তীব্র অবমূল্যায়ন দেখা গিয়েছিল। ২০২৫ সালেও মূল্যস্ফীতির হার প্রায় ৩৯% থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (CHP) সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে।
ডিগ্রি বাতিলের পিছনে যুক্তি এবং বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া
ইস্তানবুল বিশ্ববিদ্যালয় মঙ্গলবার জানিয়েছে, ১৯৯০ সালে ৩৮ জন ছাত্র অনিয়মিতভাবে ম্যানেজমেন্ট ফ্যাকাল্টির ইংরেজি ভাষা প্রোগ্রামে স্থানান্তরিত হয়েছিল। এদের মধ্যে ২৮ জন ছাত্রের, যার মধ্যে একরেম ইমামওগ্লুও রয়েছেন, ডিগ্রি অবৈধ ও অগ্রহণযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে বিরোধী দলগুলি বড় ধাক্কা পেয়েছে, কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি ছাড়া ইমামওগ্লু রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।
ইমামওগ্লু সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক প্রেরিত বলে অভিহিত করেছেন
একরেম ইমামওগ্লু বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তকে অবৈধ বলে অভিহিত করেছেন এবং আদালতে চ্যালেঞ্জ করার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, "আমরা এই সিদ্ধান্ত আদালতে নিয়ে যাব এবং এর বিরুদ্ধে লড়াই করব, তবে আমার ন্যায়বিচার ব্যবস্থা থেকে নিরপেক্ষ সিদ্ধান্তের আশা নেই।" তিনি আরও বলেছেন, এটি শুধু তার লড়াই নয়, বরং গোটা দেশ ও গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই।
রাজনৈতিক চাপ এবং বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
ইস্তানবুল বিশ্ববিদ্যালয় এমন সময়ে এই পদক্ষেপ নিয়েছে যখন বিরোধী নেতাদের, বিশেষ করে ইমামওগ্লুর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা জোরদার হচ্ছে। ইস্তানবুলের ইসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান সেদা ডেমিরলপ এই সিদ্ধান্তকে তুরস্কের গণতান্ত্রিক অবক্ষয়ের আরও একটি লক্ষণ বলে অভিহিত করেছেন।
ইমামওগ্লুর সমর্থনে সোচ্চার কণ্ঠ
ইমামওগ্লুর আইনজীবী মেহমেত পাহলভান জানিয়েছেন, তার ডিপ্লোমায় কোনো অনিয়ম ছিল না এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের এটি বাতিল করার অধিকার ছিল না। সোশ্যাল মিডিয়ায়ও বিরোধী সমর্থকরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
২০২৮ সালের নির্বাচনের আগে এরদোয়ানের পথ সাফ করার চেষ্টা?
রাষ্ট্রপতি রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান গত দুই দশক ধরে তুরস্কের ক্ষমতায় আছেন। যদি তিনি ২০২৮ সালে আবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন, তাহলে তাকে নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্বাচন করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইমামওগ্লুকে নির্বাচনী প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত একই রণকৌশলের অংশ হতে পারে।