পাকিস্তানের বেলুচিস্তান রাজ্যের ২৫ বছর বয়সী কাশিশ চৌধুরী ইতিহাস সৃষ্টি করে বেলুচিস্তানের প্রথম হিন্দু নারী সহকারী কমিশনার হিসেবে সাফল্য অর্জন করেছেন। এই সাফল্য তিনি BPSC পরীক্ষা পাশ করে অর্জন করেছেন।
কাশিশ চৌধুরী: পাকিস্তানের অশান্ত বেলুচিস্তান প্রদেশ থেকে একটি ঐতিহাসিক খবর এসেছে। ২৫ বছর বয়সী কাশিশ চৌধুরী, যিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্তর্গত, বেলুচিস্তানের প্রথম হিন্দু নারী সহকারী কমিশনার (Assistant Commissioner) হিসেবে কীর্তিমান স্থাপন করেছেন। এটি কেবল তাঁর পরিবারের জন্যই নয়, পাকিস্তানে বসবাসকারী সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য গর্বের মুহূর্ত। কাশিশ এই সাফল্য বেলুচিস্তান লোকসেবা কমিশন (BPSC - Balochistan Public Service Commission)-এর পরীক্ষা পাশ করে অর্জন করেছেন, যা একটি বৃহৎ সাফল্য হিসেবে বিবেচিত।
কাশিশ চৌধুরীর সংগ্রাম ও সাফল্য
কাশিশের জন্ম বেলুচিস্তানের ছগাই জেলার নোশকি শহরে হয়েছিল, যা পাকিস্তানের একটি পিছিয়ে পড়া ও দূরবর্তী অঞ্চল। এই অঞ্চলে শিক্ষার অবস্থা ও সংস্থান খুবই সীমিত, কিন্তু কাশিশ এই সকল কঠিন পরিস্থিতিকে পেরিয়ে নিজের লক্ষ্য অর্জন করেছেন। তাঁর সাফল্য কেবলমাত্র বেলুচিস্তানেই নয়, সমগ্র পাকিস্তানে বসবাসকারী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য একটি নতুন পথ উন্মোচন করেছে।
কাশিশ চৌধুরীর বেলুচিস্তান পাবলিক সার্ভিস কমিশন (BPSC) পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করা এবং সহকারী কমিশনার পদে নির্বাচিত হওয়া কেবল তাঁর পরিবারের জন্যই গর্বের বিষয় নয়, এটি পাকিস্তানে হিন্দু নারীদের শিক্ষা ও সমাজে অংশগ্রহণের প্রতীক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ।
মুখ্যমন্ত্রী সরফরাজ বগতির সমর্থন
কাশিশ চৌধুরী সম্প্রতি বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী সরফরাজ বগতির সাথে সাক্ষাত করেছেন, যেখানে তিনি জানিয়েছেন যে তাঁর উদ্দেশ্য হলো নারী ও সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা করা এবং প্রদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য কাজ করা। কাশিশ আরও বলেছেন যে তাঁর প্রাথমিক অগ্রাধিকার হবে নারীদের সবলীকরণ এবং তাদের সমান অধিকার প্রদান। মুখ্যমন্ত্রী বগতি কাশিশের সাফল্যকে কেবল বেলুচিস্তানের জন্যই নয়, সমগ্র পাকিস্তানের জন্য গর্বের বিষয় বলে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন যে যখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা তাদের পরিশ্রমের মাধ্যমে উচ্চপদে পৌঁছান, তখন তা সমগ্র দেশের জয় হয়।
কাশিশ চৌধুরীর পিতার অবদান
কাশিশ চৌধুরীর সাফল্যে তাঁর পিতা, গিরধারী লালের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। গিরধারী লাল একজন মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ী এবং তিনি সর্বদা তাঁর কন্যাকে উচ্চশিক্ষার জন্য উৎসাহিত করেছেন। তিনি মিডিয়ার সাথে কথা বলে বলেছেন, "মেয়েটি সবসময় তার জীবনে কিছু বড় করার স্বপ্ন দেখেছিল এবং আজ সে সেই স্বপ্ন পূরণে সফল হয়েছে। আমার জন্য এটি গর্বের বিষয় যে আমার মেয়ে তার পরিশ্রম ও নিষ্ঠার মাধ্যমে সহকারী কমিশনার হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছে।"
হিন্দু নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা
কাশিশ চৌধুরীর এই সাফল্য পাকিস্তানে হিন্দু নারীদের জন্য একটি বৃহৎ অনুপ্রেরণা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। গত কয়েক বছরে, পাকিস্তানে হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অবদানের মাধ্যমে পরিচিতি অর্জন করছে। মনীষ রোপেটা, পাকিস্তানের প্রথম হিন্দু নারী পুলিশ সুপারিনটেন্ডেন্ট, এর একটি উদাহরণ। মনীষ করাচিতে পুলিশের উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও, পুষ্পা কুমারী কোহলি, যিনি করাচিতে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর, তিনিও সিন্ধু পুলিশ পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করেছেন এবং তাঁর কর্মক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।