আমেরিকার ইরানে পারমাণবিক হামলা: ট্রাম্পের কঠোর সতর্কতা

আমেরিকার ইরানে পারমাণবিক হামলা: ট্রাম্পের কঠোর সতর্কতা
সর্বশেষ আপডেট: 22-06-2025

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনার পর আমেরিকা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প বলেছেন, ইরান যদি শান্তি চায় না, তাহলে আরও ভয়াবহ হামলার জন্য প্রস্তুত থাকুক।

Iran Attack: ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে এবার সরাসরি আমেরিকার প্রবেশ ঘটেছে। আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প জাতিকে উদ্দেশ্য করে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের কথা নিশ্চিত করেছেন। আমেরিকা ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। ট্রাম্প এটাকে ইরানের পারমাণবিক হুমকি মোকাবেলায় একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি ইরানকে স্পষ্ট সতর্কতা দিয়েছেন যে, যদি শান্তি স্থাপিত না হয়, তাহলে আরও বড় ধ্বংসযজ্ঞ ঘটতে পারে।

আমেরিকার বড় পদক্ষেপ

১৩ জুন থেকে শুরু হওয়া ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি এখন আরও জটিল হয়ে উঠেছে। আমেরিকা প্রথমবারের মতো এই বিরোধে খোলাখুলিভাবে হস্তক্ষেপ করেছে। আমেরিকার সেনাবাহিনী ইরানের ফোর্ডো, নাতানজ ও ইসফাহানে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই এই হামলার তথ্য দিয়েছেন এবং এর কারণও ব্যাখ্যা করেছেন।

ট্রাম্প জাতিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, এই হামলা ইরানের পারমাণবিক ক্ষমতা নিষ্ক্রিয় করার জন্য করা হয়েছে। তার দাবি, আমেরিকা ও তার মিত্ররাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এই পদক্ষেপ প্রয়োজনীয় ছিল।

ট্রাম্পের স্পষ্ট বার্তা: ইরানী হুমকি আর সহ্য করা হবে না

ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বক্তব্যে ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে বলেছেন, গত ৪০ বছর ধরে ইরান আমেরিকা ও তার নাগরিকদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াচ্ছে। এই নীতির কারণে হাজার হাজার আমেরিকান ও ইসরায়েলি নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে।

তিনি বলেছেন, "এবার এসব আর চলবে না।" ট্রাম্পের মতে, আমেরিকা এই হামলা কোন যুদ্ধের সূচনা হিসেবে নয়, বরং একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছে যে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচী সহ্য করা হবে না।

ফোর্ডো সাইট সম্পূর্ণ ধ্বংস: ট্রাম্প

ট্রাম্প তার বক্তব্যে জানিয়েছেন, আমেরিকার সেনাবাহিনী যে স্থাপনাগুলিকে লক্ষ্য করেছে তার মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ ও সংবেদনশীল ছিল ফোর্ডো সাইট। এই স্থান ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির একটি কেন্দ্রীয় অংশ বলে মনে করা হয়। ট্রাম্পের মতে, আমেরিকা এই সাইটটিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, আমাদের সেনাবাহিনী অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে। এখন ফোর্ডো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।

ইরানকে দেওয়া উন্মুক্ত সতর্কতা

জাতিকে উদ্দেশ্য করে ট্রাম্প ইরানকে স্পষ্ট করে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, যদি শান্তি স্থাপিত না হয়, তাহলে আমেরিকা আরও কঠোর পদক্ষেপ নেবে। তিনি বলেছেন, ভবিষ্যতের হামলা এবারের চেয়ে অনেক বেশি মারাত্মক ও ব্যাপক হবে। একটি টেলিফোনিক সাক্ষাৎকারে রয়টার্স সংবাদ সংস্থার সাথে কথা বলে ট্রাম্প বলেছেন, "ইরানকে দ্রুত শান্তি স্থাপন করতে হবে। যদি তা না হয়, তাহলে আবার হামলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।"

ইসরায়েল আমেরিকার পদক্ষেপকে সঠিক বলেছে

আমেরিকা কর্তৃক ইরানে হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এই পদক্ষেপকে ‘সাহসী’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি ট্রাম্পের অবস্থান সমর্থন করে বলেছেন, শান্তি স্থাপন শক্তি প্রদর্শনের পরেই সম্ভব। নেতানিয়াহু বলেছেন, "আমি এবং ট্রাম্প বিশ্বাস করি, প্রথমে শক্তি দেখানো হয়, তারপর শান্তি আসে। আমেরিকা সেই শক্তি দেখিয়েছে।"

ইরান হামলার কথা নিশ্চিত করেছে, তাকে অবৈধ বলেছে

ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (AEOI) আমেরিকার হামলার কথা নিশ্চিত করেছে। AEOI-এর মতে, আমেরিকা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে এবং এটি সম্পূর্ণ অবৈধ কাজ। ইরানের দাবি, তার পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা জাতিসংঘের নিয়ম ও IAEA (আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা)-র সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন।

AEOI এটাও বলেছে যে, ইরান কোনো মূল্যেই তার পারমাণবিক কর্মসূচী বন্ধ করবে না। তারা বলেছে, "আমাদের পারমাণবিক কর্মসূচী সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং এটি কোনো চাপে বন্ধ হবে না।"

IAEA-এর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন

ইরান আমেরিকার সাথে IAEA-এর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। ইরানী কর্মকর্তাদের দাবি, IAEA আমেরিকাকে সহযোগিতা করেছে, যা তার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ইরান বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে এই হামলার নিন্দা করার আহ্বান জানিয়েছে এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এই বিষয়টি তোলার ইঙ্গিত দিয়েছে।

Leave a comment