ওয়াকফ সংশোধন আইন: সুপ্রিম কোর্টে তীব্র বিতর্ক, বিচারপতির গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য

ওয়াকফ সংশোধন আইন: সুপ্রিম কোর্টে তীব্র বিতর্ক, বিচারপতির গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য
সর্বশেষ আপডেট: 22-05-2025

ওয়াকফ সংশোধন আইন ২০২৫-এর সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টে শুনানির সময় বিচারপতি মসীহ বলেছেন— ইসলামের মূল চেতনা একই, যেখানেই কেউ থাকুক না কেন। কেন্দ্র ও আবেদনকারীদের মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডা।

Waqf Amendment Act 2025: ওয়াকফ সংশোধন আইনকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি চলছে এবং এর মধ্যে একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় মোড় তখন এসেছে যখন বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মসীহ শুনানির সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, "ইসলাম তো ইসলামই থাকবে, যেখানেই কেউ থাকুক না কেন।" এই মন্তব্য তিনি কেন্দ্র সরকারের সেই যুক্তির উপর দিয়েছেন, যাতে বলা হয়েছে যে আদিবাসী অঞ্চলে বসবাসকারী মুসলমানরা ভারতের অন্যান্য মুসলমানদের মতো ইসলাম পালন করে না।

কী ঘটনা এবং কেন শুনানি হচ্ছে?

২০২৫ সালের ২২শে মে, বৃহস্পতিবার ওয়াকফ সংশোধন আইনের বিরুদ্ধে দায়ের করা আবেদনগুলির উপর শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্টে সরকার ও আবেদনকারীদের মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডা হয়েছে। কেন্দ্র সরকারের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেছেন যে, অনুসূচিত জাতি (Scheduled Tribes) এর অধিকার রক্ষা করা জরুরি এবং নতুন আইনে তাদের জমির সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে।

তুষার মেহতা যুক্তি দিয়েছেন যে, আদিবাসী অঞ্চলে বসবাসকারী মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি আলাদা সাংস্কৃতিক পরিচয় আছে এবং তারা ইসলামকে ঠিক সেভাবে গ্রহণ করে না যেমনটি ভারতের অন্যান্য স্থানে হয়। তিনি জানিয়েছেন যে, যুক্ত সংসদীয় কমিটির (JPC) রিপোর্টেও এই কথা বলা হয়েছে।

বিচারপতি মসীহ মাঝখানে থামিয়ে স্পষ্ট মতামত দিয়েছেন

শুনানির সময় যখন মেহতা আদিবাসী মুসলমানদের ধর্মীয় রীতিনীতির পার্থক্যের কথা বলছিলেন, তখন বিচারপতি মসীহ মাঝখানে হস্তক্ষেপ করে বলেছেন, "ইসলাম তো ইসলামই থাকবে। যেখানেই কেউ থাকুক না কেন, ধর্মের মূল চেতনা একই থাকে। ক্ষেত্রীয় বা সাংস্কৃতিক রীতিনীতিতে পার্থক্য হতে পারে, কিন্তু ধর্ম পরিবর্তন হয় না।"

এই বক্তব্য শুনে আদালতে বিতর্কের ধারা কিছুটা বদলে গেছে এবং এই বিষয়ে আলোচনা আরও তীব্র হয়েছে যে, ধর্মীয় বিশ্বাসে ক্ষেত্রীয় বৈচিত্র্যকে ভিত্তি করে কি ওয়াকফ আইনে সংশোধনকে ঠিক বলে প্রমাণ করা যায়?

‘ওয়াকফের নামে জমি দখল করা হচ্ছে’: সরকারের বড় উদ্বেগ

সরকারের পক্ষ থেকে আদালতে এই যুক্তিও দেওয়া হয়েছে যে, অনেক আদিবাসী সংগঠন অভিযোগ করেছে যে, তাদের জমি জোর করে ওয়াকফ ঘোষণা করা হচ্ছে এবং তাদের নির্যাতন করা হচ্ছে। তুষার মেহতা বলেছেন যে, যদি কোনো আদিবাসীর জমি বিক্রি হয় এবং তাতে প্রতারণা হয়, তাহলে জমি ফিরে পাওয়া যায়, কিন্তু একবার জমি ওয়াকফ ঘোষণা হয়ে গেলে তা অপরিবর্তনীয় (Irrevocable) হয়ে যায়।

সরকারের দৃষ্টিতে এই প্রক্রিয়া আদিবাসী সম্প্রদায়ের অধিকার লঙ্ঘন এবং এটাই কারণ যে এই আইনে সংশোধন আনা হয়েছে।

আবেদনকারীদের পক্ষ কী?

এই সংশোধনের বিরোধিতায় আবেদন দায়েরকারীদের দাবি, এই আইন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অধিকারের উপর সরাসরি আঘাত হানছে। তাদের যুক্তি, ওয়াকফের প্রথা ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এটিকে দুর্বল করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তারা এটাও দাবি করছে যে, এই আইনের আওতায় ওয়াকফের সম্পত্তি ধ্বংস বা সীমিত করার উদ্দেশ্য রয়েছে, যা সংবিধানের ২৫ ও ২৬ অনুচ্ছেদ (ধর্মীয় স্বাধীনতা) লঙ্ঘন করে।

প্রধান বিচারপতি গাভাইয়ের বেঞ্চ সম্পূর্ণ ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছে

এই গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি বর্তমান প্রধান বিচারপতি ভূষণ রামকৃষ্ণ গাভাই ও বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মসীহের বেঞ্চ করছে। উল্লেখ্য, এর আগে বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এই মামলা দেখছিলেন, কিন্তু তাঁর অবসর গ্রহণের পর এই মামলা নতুন বেঞ্চে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

শুনানি ক্রমাগত তৃতীয় দিন চলছে এবং এখন এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, আদালত এই আইনের প্রতিটি দিক গুরুত্বের সাথে পরীক্ষা করছে।

Leave a comment