তেজস্বী যাদবের প্রধানমন্ত্রীকে পত্র: জাতিগত জনগণনাকে ‘সমতার যাত্রার পরিবর্তনকামী মুহূর্ত’ বলে অভিহিত

তেজস্বী যাদবের প্রধানমন্ত্রীকে পত্র: জাতিগত জনগণনাকে ‘সমতার যাত্রার পরিবর্তনকামী মুহূর্ত’ বলে অভিহিত
সর্বশেষ আপডেট: 03-05-2025

কেন্দ্র সরকারের জাতিগত জনগণনার সিদ্ধান্তের পরে বিহারের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে একটি পত্র লিখেছেন। তাঁর পত্রে তেজস্বী উল্লেখ করেছেন যে, জাতিগত জনগণনার সিদ্ধান্ত ভারতে সমতা ও সামাজিক ন্যায়ের দিকে একটি পরিবর্তনকামী পদক্ষেপ হতে পারে।

পাটনা: কেন্দ্র সরকারের জাতিগত জনগণনাকে সবুজ সংকেত দেওয়ার পরে দেশের রাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়ে গেছে। এদিকে বিহারের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী এবং বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে একটি উন্মুক্ত পত্র লিখে এটিকে 'সমতার যাত্রার পরিবর্তনকামী মুহূর্ত' বলে অভিহিত করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা এই পত্রে তেজস্বী কেন্দ্র সরকারের পূর্ববর্তী অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং জাতিভিত্তিক জনগণনার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।

তেজস্বী যাদব লিখেছেন, জাতিগত জনগণনা কেবলমাত্র সংখ্যা গণনা নয়, এটি সামাজিক ন্যায় ও সবলীকরণের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যারা বহু বছর ধরে বঞ্চিত ও প্রান্তিকীকরণের শিকার, তাদের জন্য এটি সম্মানের একটা সুযোগ।

বিহার মডেল ও কেন্দ্রের পূর্ববর্তী অবস্থান

তেজস্বী যাদব বিহারের জাতিগত জরিপের দিকে ইঙ্গিত করে লিখেছেন যে, যখন বিহার এই উদ্যোগ নিয়েছিল, তখন কেন্দ্র সরকার ও বিজেপির অনেক নেতা এটিকে অপ্রয়োজনীয় ও বিভাজনকারী বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, কেন্দ্র সরকারের শীর্ষ আইনজীবীরা জাতিগত জরিপের বিরুদ্ধে আদালতী বাধা সৃষ্টি করেছিলেন।

আপনার দলের সহযোগীরা এই তথ্যের ব্যবহারযোগ্যতার উপরই প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু এখন, যখন আপনার সরকার জাতিগত জনগণনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তখন এটি এই স্বীকারোক্তি যে, দেশের নাগরিকদের এই দাবি যুক্তিসঙ্গত ও প্রয়োজনীয় ছিল, তেজস্বী লিখেছেন।

তথ্যভিত্তিক নীতি নির্মাণের দাবি

তেজস্বী যাদব বলেছেন যে, বিহারের জাতিগত জরিপে ওবিসি ও ইবিসির সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৩% পাওয়া গেছে। তিনি বলেছেন, একই ধরণের তথ্য সমগ্র দেশে প্রকাশিত হতে পারে, যার ফলে সামাজিক পরিকল্পনা ও সংরক্ষণ নীতির পর্যালোচনা প্রয়োজন হবে। তিনি ৫০% সংরক্ষণ সীমার উপর পুনর্বিবেচনারও দাবি করেছেন।

এই জনগণনা কেবল কাগজে-কলমের তথ্য নয়, বরং নীতি নির্ধারণের জন্য একটি দৃঢ় ভিত্তি হবে। আমাদের এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, সামাজিক নিরাপত্তা পরিকল্পনাগুলি প্রকৃত প্রয়োজনীয় ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছে।

পরিসীমান্ত ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের কথা

তেজস্বী যাদব আগামী পরিসীমান্ত প্রক্রিয়ার উল্লেখ করে বলেছেন যে, নির্বাচনী এলাকার পুনর্নির্ধারণ জনগণনা তথ্যের উপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত। তিনি ওবিসি ও ইবিসিকে রাজনৈতিক মঞ্চে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব দেওয়ার দাবি করেছেন। কেবল সংরক্ষণ নয়, বরং সংসদ ও বিধানসভায় প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করাও সামাজিক ন্যায়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়া উচিত, তিনি লিখেছেন।

বেসরকারি খাতে সামাজিক ন্যায়ের দায়িত্ব

তেজস্বী যাদব পত্রে এও লিখেছেন যে, বেসরকারি খাতকেও সামাজিক ন্যায়ের নীতি থেকে বাদ দেওয়া উচিত নয়। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন যে, যেমন সরকারি সম্পদের ব্যবহার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি করে, তেমনি তাদেরও সংগঠনগত কাঠামোতে বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। ভূমি, সাবসিডি, কর ছাড় ইত্যাদি করদাতাদের টাকা থেকেই পাওয়া যায়। এই অবস্থায় তাদের কাছে আশা করা যে তারা সামাজিক কাঠামোর প্রতিনিধিত্ব করবে, তা অনুচিত নয়।

এটি কি কেবলমাত্র তথ্যই থাকবে, নাকি পরিবর্তন আনবে?

পত্রের শেষে তেজস্বী একটি গভীর প্রশ্ন তুলেছেন, এই জনগণনা কি অন্যান্য কমিশনের প্রতিবেদনের মতো আলমারিতে ধুলো জমে থাকবে, নাকি এটি সত্যিই সামাজিক পরিবর্তনের উদ্দীপক হয়ে উঠবে? তিনি প্রধানমন্ত্রীকে সামাজিক পরিবর্তনের দিকে রচনামূলক সহযোগিতা করার আশ্বাসও দিয়েছেন। আমরা বিহার থেকে এসেছি, যেখানে জাতিগত জরিপ চোখ খোলার মতো কাজ করেছে। আমরা চাই, সমগ্র দেশে এই প্রক্রিয়াটি প্রকৃত পরিবর্তনের মাধ্যম হয়ে উঠুক।

Leave a comment