পহেলগাম হামলার জেরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের কঠোর পদক্ষেপ

পহেলগাম হামলার জেরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের কঠোর পদক্ষেপ
সর্বশেষ আপডেট: 29-04-2025

২০২৫ সালের ২২শে এপ্রিল পহেলগামে সংঘটিত সন্ত্রাসবাদী হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভারত সরকার এখন পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (PIA)-এর জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া এবং পাকিস্তানী জাহাজগুলিকে ভারতীয় বন্দর থেকে দূরে রাখার বিষয়টি বিবেচনা করছে।

নয়াদিল্লি: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা আবারও গুরুতর মোড় নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। সূত্রের খবরে, ভারত এখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বড় পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভারত বিবেচনা করছে যে পাকিস্তানী বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা এবং পাকিস্তানী জাহাজের জন্য সমুদ্র বন্দর বন্ধ করে দেওয়া যায় কিনা।

যদি ভারত এমনটা করে, তাহলে পাকিস্তানের বিমান পরিষেবাগুলি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাকিস্তানী বিমানগুলিকে চীন বা শ্রীলঙ্কার পথ ধরে দীর্ঘ পথ ঘুরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ যেমন কুয়ালালামপুর ইত্যাদি শহরে পৌঁছাতে হবে, যার ফলে সময় ও জ্বালানির উভয় ক্ষেত্রেই ব্যাপক ক্ষতি হবে।

এই পদক্ষেপটি পাকিস্তান কর্তৃক ২২শে এপ্রিল সংঘটিত পহেলগাম সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে নেওয়া হচ্ছে, যেখানে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল, যার মধ্যে ২৫ জন পর্যটক ছিলেন। এর পরে পাকিস্তান ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছিল। ভারত এর জবাবে অনেক কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেছে, যার মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চাপ বাড়ানোর জন্য অর্থনৈতিক ও পরিবহন সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।

আকাশ ও সমুদ্র পথে নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনা

ভারত সরকার ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা PIA-এর জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিতে পারে। যদি এমনটা হয়, তাহলে PIA-কে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ যেমন মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে পৌঁছানোর জন্য চীন বা শ্রীলঙ্কার উপর দিয়ে দীর্ঘ পথ অবলম্বন করতে হবে, যার ফলে তার পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও, ভারত পাকিস্তানী জাহাজগুলিকে নিজেদের বন্দরে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করছে। এই পদক্ষেপটি পাকিস্তানের সমুদ্র বাণিজ্যিক কার্যকলাপকে প্রভাবিত করতে পারে, যার ফলে তার অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

সিন্ধু জল চুক্তির স্থগিতাদেশ

ভারত ১৯৬০ সালে পাকিস্তানের সাথে স্বাক্ষরিত সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করে দিয়েছে। এই চুক্তি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে জল বণ্টন নিয়ন্ত্রণ করত। ভারতের এই পদক্ষেপের ফলে পাকিস্তানে জলের সংকট দেখা দিতে পারে, কারণ তারা সিন্ধু নদী ব্যবস্থার উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। ভারত পাকিস্তানের নাগরিকদের জন্য ভিসা বাতিল করে দিয়েছে এবং আটারী চেকপোস্ট বন্ধ করে দিয়েছে।

তদুপরি, উভয় দেশের হাইকমিশনে কর্মীদের সংখ্যা কমিয়ে ৩০ করা হয়েছে। নয়াদিল্লিতে পাকিস্তানী হাইকমিশনের প্রতিরক্ষা, সেনা, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর উপদেষ্টাদের 'অবাঞ্ছিত' ঘোষণা করে এক সপ্তাহের মধ্যে ভারত ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তান ভারতের এই পদক্ষেপগুলিকে 'যুদ্ধ ঘোষণার' সমতুল্য বলে অভিহিত করেছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেছেন, যদি ভারত জল সরবরাহে বাধা দেয়, তাহলে পাকিস্তান 'পরমাণু প্রতিক্রিয়া' দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশকে সংযমী থাকার এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে। আমেরিকার পররাষ্ট্র বিভাগ জানিয়েছে যে তারা ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের সাথেই যোগাযোগে রয়েছে এবং একটি 'দায়িত্বশীল সমাধান'-এর দিকে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে।

Leave a comment