পহেলগাম সন্ত্রাসবাদী হামলার পর সুরক্ষা সংস্থাগুলি জম্মু ও কাশ্মীরে সক্রিয় ১৪ জন স্থানীয় সন্ত্রাসীর তালিকা তৈরি করেছে। হামলায় জড়িত পাঁচজন সন্ত্রাসীর পরিচয় পাওয়া গেছে, যাদের মধ্যে তিনজন পাকিস্তানি নাগরিক।
জম্মু ও কাশ্মীর: ২০২৫ সালের ২২শে এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর সুরক্ষা বাহিনী একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এই হামলায় ২৬ জন পর্যটক আহত হন, এর পর গোয়েন্দা সংস্থাগুলি জম্মু ও কাশ্মীরে সক্রিয় ১৪ জন স্থানীয় সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করেছে। এই পদক্ষেপ ইঙ্গিত করে যে সুরক্ষা বাহিনী উপত্যকায় সন্ত্রাসবাদের সমস্যা সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ।
সন্ত্রাসবাদী সংগঠন এবং তাদের যোগসূত্র
সূত্র মতে, এই ১৪ জন সন্ত্রাসীর পাকিস্তান সমর্থিত তিনটি প্রধান সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সাথে যোগসূত্র রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে হিজবুল মুজাহিদিন (এইচএম), লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি) এবং জইশ-ই-মোহাম্মদ (জেএম)। এই সন্ত্রাসীদের মধ্যে ৩ জন হিজবুল মুজাহিদিনের, ৮ জন লস্কর-ই-তৈয়বার এবং ৩ জন জইশ-ই-মোহাম্মদের সাথে যুক্ত। এই সন্ত্রাসীদের তালিকা প্রকাশ করে গোয়েন্দা সংস্থাগুলি আরও জানিয়েছে যে তারা পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদীদের সহায়তা এবং স্থানীয় স্তরে সমর্থন প্রদান করছিল।
হিট লিস্টে থাকা সন্ত্রাসীরা
এই ১৪ জন সন্ত্রাসীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নামগুলি হল:
- আদিল রহমান ডেন্টু (২১) - লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্য এবং সোপোর জেলার কমান্ডার।
- আসিফ আহমদ শেখ (২৮) - জইশ-ই-মোহাম্মদের জেলা কমান্ডার, অবন্তীপোরা।
- আহসান আহমদ শেখ (২৩) - লস্করের সদস্য, পুলওয়ামা।
- হারিস নাজির (২০) - লস্করের সদস্য, পুলওয়ামা।
- আমির নাজির ওয়ানি (২০) - জইশ-ই-মোহাম্মদের সদস্য, পুলওয়ামা।
- ইয়াবার আহমদ ভাট (২৪) - জইশ-ই-মোহাম্মদের সদস্য, পুলওয়ামা।
- শাহিদ আহমদ কুটে (২৭) - লস্কর এবং টিআরএফ-এর সদস্য, শোপিয়ান।
- আমির আহমদ দার - লস্করের সদস্য, শোপিয়ান।
- জুবায়ের আহমদ ওয়ানি (৩৯) - হিজবুল মুজাহিদিনের অপারেশনাল কমান্ডার, অনন্তনাগ।
- হারুন রশিদ গানি (৩২) - হিজবুল মুজাহিদিনের সদস্য, অনন্তনাগ।
- নাসির আহমদ ওয়ানি (২১) - লস্করের সদস্য, শোপিয়ান।
- আদনান সাফি দার - লস্কর এবং টিআরএফ-এর সদস্য, শোপিয়ান।
- জাকির আহমদ গানি (২৯) - লস্করের সদস্য, কুলগাম।
সুরক্ষা বাহিনীর অপারেশন এবং অভিযানের সূচনা
এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সুরক্ষা বাহিনী সমগ্র দক্ষিণ কাশ্মীরে, বিশেষ করে অনন্তনাগ এবং পুলওয়ামা জেলায় বিশেষ অভিযান শুরু করেছে, যেখানে এই সন্ত্রাসীদের সক্রিয় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এই অভিযান এই সন্ত্রাসীদের নেটওয়ার্ক ধ্বংস করার এবং ভবিষ্যতে সন্ত্রাসবাদী হামলা রোধ করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে উপত্যকায় শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরে আসে।
পহেলগাম হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীদের ওপর পুরস্কার
পহেলগাম হামলায় জড়িত তিনজন পাকিস্তানি সন্ত্রাসী – আসিফ ফৌজি, সুলেমান শাহ এবং আবু তালহা – এর ওপর ২০ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও, অন্যান্য স্থানীয় সহযোগী যেমন আদিল গুরি এবং আহসানের ওপরও পুরস্কার রাখা হয়েছে। এই সন্ত্রাসীদের পরিচয় শনাক্তকরণ এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এনআইএ এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ যৌথভাবে তদন্ত করছে। এই পদক্ষেপটি পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার প্রক্সি সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) হামলার দায় স্বীকার করার পর গ্রহণ করা হচ্ছে।
আগামী পদক্ষেপ এবং আশা
এনআইএ এবং অন্যান্য সুরক্ষা সংস্থা এই সন্ত্রাসীদের নেটওয়ার্ক নির্মূল করার জন্য সম্পূর্ণরূপে সক্রিয়। এই সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করা এবং তাদের দ্বারা সংঘটিত হামলার দায়িত্ব নির্ধারণ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যাতে সন্ত্রাসবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা যায়। এছাড়াও, এই পদক্ষেপ উপত্যকায় সন্ত্রাসীদের লজিস্টিক নেটওয়ার্ক ধ্বংস করতে এবং ভবিষ্যতে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড রোধ করতে সহায়ক হবে।