পাহালগাম হামলার ছায়ায় মোদীর মিথিলাঞ্চল সফর: শোক, প্রতিজ্ঞা ও রাজনৈতিক বার্তা

পাহালগাম হামলার ছায়ায় মোদীর মিথিলাঞ্চল সফর: শোক, প্রতিজ্ঞা ও রাজনৈতিক বার্তা
সর্বশেষ আপডেট: 24-04-2025

২০২৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের জন্য মিথিলাঞ্চল থেকে শুরু হওয়া "জয়ঘোষ কর্মসূচী"তে এখন পাহালগাম আতঙ্কবাদী হামলার গভীর প্রভাব দেখা দিতে শুরু করেছে। যে কর্মসূচীটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ব্যাপক উৎসাহের সাথে উদ্বোধন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছিল, সেটিতে এখন সংবেদনশীলতার আড়াল দেওয়া হয়েছে।

PM Modi statement on Pahalgam terror attack: জম্মু-কাশ্মীরের পাহালগামে সম্প্রতি সংঘটিত আতঙ্কবাদী হামলার বেদনা সারা দেশ অনুভব করেছে, কিন্তু এখন সেই বেদনার প্রতিধ্বনি বিহারের মিথিলাঞ্চলেও পৌঁছে গেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৃহস্পতিবার ঝাঁঝারপুর আগমন কেবলমাত্র একটি সরকারি সফর নয়, বরং জাতীয় শোক, দায়িত্ববোধ এবং আতঙ্কবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় সংগ্রামের জনসাধারণের কাছে ঘোষণা।

এবার না ঢোল বাজবে, না স্বাগত-সম্মানের পরম্পরা পালন করা হবে। মিথিলাঞ্চলের মাটিতে প্রথমবারের মতো এমন ঘটনা ঘটবে যে, প্রধানমন্ত্রীর আগমনে মখানার মালা, ঐতিহ্যবাহী পাগড়ি এবং সম্মানসূচক চাদর প্রতীকীভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কেবলমাত্র পাহালগাম হামলার প্রতি সহানুভূতির প্রতীক নয়, বরং আতঙ্কবাদের বিরুদ্ধে দেশের ঐক্য এবং গুরুত্বের জনসাধারণের কাছে বার্তা।

না কোলাহল, না উৎসব— শুধুমাত্র প্রতিজ্ঞা

ঝাঁঝারপুরের ঐতিহাসিক ময়দানে বৃহস্পতিবার আয়োজিত এই জনসভা এখন ‘শোকসভা’র রূপ ধারণ করেছে। গান-বাজনা, সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা, রঙিন পোস্টার—এ সবের জায়গায় এখন নীরব শ্রদ্ধাঞ্জলি, সাধারণ মঞ্চ এবং গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা স্থান পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই সফর এখন কেবলমাত্র একটি প্রশাসনিক আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং অনুভূতির তীব্রতা এবং প্রতিজ্ঞার উচ্চতার উদাহরণ হয়ে উঠেছে।

প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর সম্বোধনের শুরুতেই পাহালগামের শহীদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'এই সময় উৎসবের নয়, প্রত্যুত্তর দেওয়ার। আতঙ্কের উত্তর উন্নয়ন এবং ঐক্যের মাধ্যমে দেওয়া হবে। মিথিলাঞ্চলের এই পবিত্র ভূমি থেকে আমি আতঙ্কবাদীদের স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছি, ভারত নিশ্চুপ থাকবে না।

সাধারণ কর্মসূচী, অসাধারণ বার্তা

প্রধানমন্ত্রী মোদী এখানে পঞ্চায়েতী রাজ সংক্রান্ত কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন, যার মধ্যে মখানা বোর্ড গঠন, জল-জীবন মিশনের অধীনে নতুন প্রকল্প এবং মনরেগার অধীনে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ উল্লেখযোগ্য। বন্যার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জন্য বিশেষ ত্রাণ প্যাকেজ হিসেবে ১২,০০০ কোটি টাকার প্রস্তাবের কথাও জানানো হয়েছে।

এছাড়াও, ‘নমো ভারত এক্সপ্রেস’ অর্থাৎ বন্দে মেট্রোকে সরলভাবে সবুজ পতাকা দেখিয়ে রওনা করা হয়েছে। মঞ্চে কোনও ফুল-মালা, বাদ্যযন্ত্র বা বিশেষ সাজসজ্জা ছিল না—শুধুমাত্র একটি সাধারণ পতাকা এবং জনতার নীরব সম্মতি।

সুরক্ষার মধ্যে প্রতিজ্ঞা

এই জনসভার সুরক্ষা ব্যবস্থাও পূর্বের চেয়ে অনেক কঠোর ছিল। স্থানীয় প্রশাসন, কেন্দ্রীয় সুরক্ষা সংস্থা এবং বিশেষ বাহিনী পুরোপুরি সতর্ক ছিল। কিন্তু এর মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী মোদীর আত্মবিশ্বাস এবং জনতার আস্থার কোনো কমতি হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সুরক্ষা কেবলমাত্র অস্ত্র দিয়ে নয়, উদ্দেশ্য দিয়ে হয়। এবং ভারতের উদ্দেশ্য আজ পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি স্পষ্ট এবং অটুট।

রাজনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ সফর

যদিও পাহালগামের ঘটনার কারণে এই জনসভা শোকসভার রূপ নিয়েছে, তবে এর রাজনৈতিক গুরুত্বও কম নয়। মিথিলাঞ্চলের ৬০টি বিধানসভা আসন বিহারের নির্বাচনী গণিতে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে। ২০২০ সালে এই আসনগুলির মধ্যে ৪০টিতে এনডিএর কব্জা ছিল। মিশন ২০২৫-এর অধীনে এবার বিজেপি-জেডিইউ জোটের লক্ষ্য মিথিলাঞ্চলের সম্পূর্ণ বিজয়।

বিশেষ করে সীতামড়ি, শিবহর, মধুবনী, দরভঙ্গা জেলায় যেখানে এনডিএ এবং আরজেডি-র সরাসরি লড়াই— সেখানে এই জনসভা ভাবগত সংযোগ এবং সুরক্ষা নিয়ে আস্থা স্থাপন করা প্রধান লক্ষ্য ছিল।

Leave a comment