মহারাষ্ট্রে মারাঠি ভাষা নিয়ে আবারও রাজনৈতিক ঝড় উঠেছে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর প্রবীণ নেতা ভাইয়াঁজি যোশীর একটি বক্তব্য রাজ্যে মারাঠি অস্মিতার প্রশ্নে আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে। শিবসেনা (ইউবিটি)-এর প্রধান উদ্ধব ঠাকরে ভাইয়াঁজি যোশীর বক্তব্যকে মহারাষ্ট্রের সম্মানের উপর আক্রমণ বলে আখ্যায়িত করে দেশদ্রোহের মামলা দায়েরের দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে, মানসের প্রধান রাজ ঠাকরেও তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এই বিষয়ে বিজেপিকে স্পষ্টীকরণ দিতে বলেছেন।
ভাইয়াঁজি যোশী কী বলেছিলেন?
সম্প্রতি ঘাটকোপারে অনুষ্ঠিত একটি অনুষ্ঠানে ভাইয়াঁজি যোশী বলেছিলেন, "মুম্বাইয়ে থাকার জন্য মারাঠি শেখা বাধ্যতামূলক নয়। এখানে গুজরাটি ভাষাভাষীরাও সহজেই তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারেন।" তার এই বক্তব্যের পর মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে হইচই পড়ে গেছে।
উদ্ধব ঠাকরের তীব্র আক্রমণ
উদ্ধব ঠাকরে এই বক্তব্যের জন্য ভাইয়াঁজি যোশীকে কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, "যদি মারাঠি মহারাষ্ট্রে প্রয়োজনীয় না হয়, তাহলে কোথায় প্রয়োজনীয় হবে? যারা আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে হালকাভাবে দেখার চেষ্টা করছে, মহারাষ্ট্রের জনতা তাদের উত্তর দেবে।" তিনি আরও বলেছেন, "ভাইয়াঁজি যোশীর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা দায়ের করা উচিত, কারণ এই বক্তব্য মহারাষ্ট্রের অস্মিতা ও এর গৌরবের উপর সরাসরি আঘাত।"
রাজ ঠাকরে বিজেপিকে প্রশ্ন করেছেন
মানসের প্রধান রাজ ঠাকরেও এই বিতর্কিত বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিজেপিকে ঘেরাও করেছেন। তিনি বলেছেন, "যদি এই একই বক্তব্য অন্য কোনও রাজ্যে দেওয়া হতো, তাহলে সেখানকার সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলি চুপ থাকত না। মহারাষ্ট্রে বিজেপি কেন এ ব্যাপারে চুপ থাকে? তারা কি ভাইয়াঁজি যোশীর এই মতামতের সমর্থন করে?"
রাজ ঠাকরে ভাইয়াঁজি যোশীকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন, "যদি সাহস থাকে, তাহলে বেঙ্গালুরু, চেন্নাই অথবা কলকাতায়ও এই একই বক্তব্য দিক, তাহলে আসল প্রতিক্রিয়ার আন্দাজ পাওয়া যাবে।"
মুখ্যমন্ত্রী ফড়নবিসের বক্তব্য
এই বিতর্ক নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিসও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, "মহারাষ্ট্রের ভাষা মারাঠিই এবং এটি শেখা প্রয়োজন। এখানে সকল ভাষার সম্মান করা হয়, কিন্তু মারাঠির গুরুত্ব কমানো যাবে না।" তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন যে, সরকার মারাঠি ভাষাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং মহারাষ্ট্রের সংস্কৃতির রক্ষা করা হবে।
মারাঠি অস্মিতা নিয়ে নতুন রাজনৈতিক সংগ্রাম
ভাইয়াঁজি যোশীর এই বক্তব্য মহারাষ্ট্রে মারাঠি অস্মিতার লড়াইকে আবার জোরদার করেছে। শিবসেনা (ইউবিটি), মানসে এবং মহাভিকাস আঘাড়ির নেতারা এটিকে মহারাষ্ট্রের অস্মিতার উপর আক্রমণ বলে অভিহিত করেছে এবং বিজেপির কাছে এই ব্যাপারে স্পষ্ট স্ট্যান্ড নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, বিজেপি কি এই বিষয়ে খোলাখুলি ভাবে তাদের মতামত জানাবে নাকি এই বিতর্ক আরও গভীর হবে।
