‘কাঁকা’ vs ‘বাবা’: রাজস্থানের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়

‘কাঁকা’ vs ‘বাবা’: রাজস্থানের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়
সর্বশেষ আপডেট: 16-06-2025

রাজস্থানের রাজনীতিতে যেখানে এতদিন ‘বাবা’ অর্থাৎ মন্ত্রী কিশোরীলাল মীণার নাম আলোচনায় ছিল, সেখানে এখন নতুন এক নাম দ্রুত সাফল্যের শিখরে উঠছে, মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা, যাঁকে তাঁর সমর্থকরা ভালোবাসায় ‘কাঁকা’ বলে ডাকছে।

জয়পুর: রাজস্থানের রাজনীতিতে নতুন এক নাম সোশ্যাল মিডিয়ার শিরোনামে রয়েছে ‘কাঁকা’। এটি কোন সাধারণ ডাকনাম নয়, বরং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মাকে উদ্দেশ্য করে দেওয়া নতুন নাম, যা ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP) নিজেই প্রচার করেছে। যেখানে তাঁর সমর্থকরা তাঁকে কাঁকা রাম-রাম বলে জননেতা হিসেবে উপস্থাপন করছেন, সেখানে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিরোধীদের বাহিনীও মোকাবেলা শুরু করে দিয়েছে।

এই নতুন রাজনৈতিক পরিচয় একদিকে যেমন বিজেপি কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ বাড়িয়েছে, অন্যদিকে সরকারের নীতি নিয়ে ক্ষুব্ধ তরুণরাও এ সুযোগে তাদের বিষয়গুলো জোরেশোরে তুলে ধরতে শুরু করেছে।

‘মুখ্যমন্ত্রী কেমন হোক? ভজনলালের মতো হোক’—ভিডিওতে উত্তেজনা বৃদ্ধি

রবিবার রাত প্রায় ১০:২৮ টায়, বিজেপির রাজস্থানের অফিসিয়াল হ্যান্ডেল থেকে মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মার একটি প্রচারমূলক ভিডিও শেয়ার করা হয়। এতে তাঁকে ‘কাঁকা’ বলে সম্বোধন করা হচ্ছে এবং স্লোগান দেওয়া হচ্ছে—মুখ্যমন্ত্রী কেমন হোক? ভজনলালের মতো হোক! ভিডিওর ক্যাপশনে আবেগাপূর্ণ আবেদন করে লেখা হয়েছে, জনতার প্রেম, আশীর্বাদ এবং আন্তরিকতা… মুখ্যমন্ত্রী ভজনলালের জন্য জনসেবা সর্বোচ্চ।

এই ভিডিওটি ৪৮ হাজারের বেশি ভিউ পেয়েছে এবং প্রতিক্রিয়াও তেমনি তীব্রতার সাথে এসেছে। সমর্থকদের জন্য এটি ছিল আবেগের মুহূর্ত, অন্যদিকে সমালোচকদের জন্য এটি ছিল সরকারকে ঘিরে ধরার আরও একটি সুযোগ।

‘বাবা’র পর এখন ‘কাঁকা’: নামের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়

রাজস্থানের রাজনীতিতে এর আগে ‘বাবা’ উপাধির বেশ চল ছিল, যা বিজেপি নেতা এবং মন্ত্রী কিশোরীলাল মীণার জন্য ব্যবহার করা হতো। এখন মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মার জন্য ‘কাঁকা’ শব্দটি ব্যবহার করা হচ্ছে, এটিকে রাজনৈতিকভাবে একটি নতুন ব্র্যান্ডিং প্রচেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই নামকরণ অভিযান জনসংযোগ কৌশলের অংশ, যা জনগণের সাথে আবেগগত সম্পর্ক বাড়ানোর উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে। ‘কাঁকা’ শব্দটি রাজস্থানের গ্রামীণ এবং পারিবারিক পরিবেশে বিশ্বাস ও স্নেহের প্রতীক বলে মনে করা হয়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রলিং এবং তীব্র প্রতিক্রিয়া

বিজেপির এই প্রচার ভিডিওটি প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথেই X (পূর্বে টুইটার) এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বিরোধী ও ব্যবহারকারীদের তীব্র প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে।

  • ব্যবহারকারী @sunil_seervi01 কটাক্ষ করে লিখেছেন, প্রেম, আন্তরিকতা এবং সমন্বয় তো আপনার দলের মধ্যেই অনুপস্থিত।
  • @callingbharat মন্তব্য করেছেন, আমরা বিজেপির ভোটার ছিলাম, কিন্তু এবার ভোট পাবেন না।
  • @8PMnoCM পরামর্শ দিয়ে লিখেছেন, এমন সংবেদনশীল সময়ে কমেন্ট সেকশন বন্ধ করে ভিডিওটি আপলোড করা উচিত ছিল।
  • এই প্রতিক্রিয়া থেকে স্পষ্ট যে ‘কাঁকা’র জনপ্রিয়তা যত দ্রুত বেড়েছে, ততই তীব্রতার সাথে প্রতিবাদও উঠেছে।

ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি: RAS এবং প্রথম শ্রেণীর বিষয় হয়ে উঠেছে

  • এই ভিডিওর সাথে আরেকটি বড় বিষয় সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠে এসেছে—ভর্তি পরীক্ষার অনিশ্চয়তা।
  • হাজার হাজার তরুণ টুইটারে #RAS_MAINS_স্থগিত_করো, #First_Grade_স্থগিত_করো ইত্যাদি হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করছে।
  • প্রতিযোগী ছাত্রদের অভিযোগ, সরকার RAS মেইন্স পরীক্ষা এবং অন্যান্য নিয়োগের সময়সূচীতে স্বচ্ছতা দেখায়নি।
  • হনুমান বেনিওয়ালের মতো বিরোধী নেতারাও এই বিষয়টি জোরেশোরে তুলে ধরছেন এবং রাজধানীতে ধর্ণায় বসেছেন।
  • এই রাজনৈতিক ভিডিওর সুযোগে তরুণরা সরকারের প্রতি তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করার একটি বড় মঞ্চ পেয়েছে।

আবেগের রাজনীতি নাকি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা?

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ‘কাঁকা’ ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে বিজেপি একটি আবেগগত বর্ণনা তৈরি করতে চায়, যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সাথে যোগাযোগ বাড়ানো যাবে। কিন্তু এই প্রচেষ্টা তখনই সফল হবে যখন সরকার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বিশেষ করে বেকারত্ব এবং শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে ठोस পদক্ষেপ নেবে। অন্যদিকে, বিরোধীরা এই ব্র্যান্ডিংকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে দৃষ্টি সরানোর একটি উপায় বলে মনে করছে। তাদের মতে, যদি মুখ্যমন্ত্রী সত্যিই ‘জনতার কাঁকা’ হন, তাহলে তাঁকে প্রথমে তরুণদের কথা শুনতে হবে।

Leave a comment