ইলাহাবাদ হাইকোর্ট বহুবিবাহ সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি চালিয়ে মুসলিম পুরুষদের একাধিক বিবাহ করার প্রবণতার উপর কঠোর মন্তব্য করেছে। আদালত বলেছে, “মুসলিম পুরুষরা তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ ও সুবিধার জন্য বহুবিবাহের আশ্রয় নিচ্ছে।”
উত্তরপ্রদেশ: ইলাহাবাদ হাইকোর্ট মুসলিম বহুবিবাহ সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানিতে স্পষ্ট ও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। বিচারপতি অজয় কুমার শ্রীবাস্তবের একক বেঞ্চ বলেছে, “কুরআন কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতি ও কঠোর শর্তের আওতায় বহুবিবাহের অনুমতি দিয়েছে, কিন্তু আজকের সময়ে মুসলিম পুরুষরা তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ, সুবিধা ও ইচ্ছাপূরণের জন্য এই প্রবণতার অপব্যবহার করছে।”
মামলাটি কী ছিল?
আবেদনকারী একজন মুসলিম নারী ছিলেন, যিনি তার স্বামীর বিরুদ্ধে আবেদন দায়ের করে অভিযোগ করেছিলেন যে তার স্বামী তার অনুমতি ছাড়া ও যথাযথ কারণ দেখানো ছাড়া দ্বিতীয় বিবাহ করতে যাচ্ছেন। নারীটি আদালতের কাছে দ্বিতীয় বিবাহ বন্ধ করার ও ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছিলেন। নারীপক্ষের দাবি ছিল, তিনি ইতোমধ্যেই তার স্বামীর সাথে আইনি দাম্পত্য সম্পর্কে আবদ্ধ এবং তার স্বামী তাকে তালাক দেননি, কিংবা কোন ধর্মীয় বা সামাজিক কারণ দেখাননি যার ভিত্তিতে তিনি দ্বিতীয় বিবাহ করছেন।
হাইকোর্টের তীব্র মন্তব্য
আদালত শুনানির সময় বলেছে, কুরআন বিশেষ পরিস্থিতিতে বহুবিবাহের অনুমতি দিয়েছে—যেমন যুদ্ধ অথবা দুর্যোগের সময় যখন সমাজে বিধবা ও অসহায় নারীর সংখ্যা বেড়ে যায়। সেই পরিস্থিতিতে সামাজিক ভারসাম্য ও সুরক্ষার জন্য এটিকে বিকল্প হিসেবে রাখা হয়েছে, ব্যক্তিগত ইচ্ছা পূরণের জন্য নয়।
আদালত আরও বলেছে যে, কুরআন একাধিক বিবাহের অনুমতি দিয়েছে, কিন্তু তার সাথে ন্যায়, সমতা ও পারিবারিক দায়িত্বের কঠোর শর্ত জুড়েছে। যদি কোন পুরুষ সেসব শর্ত পূরণ করতে না পারে, তাহলে বহুবিবাহের অনুমতি ধর্মীয় ছাড় নয়, বরং সামাজিক অন্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে।
কী রায় হয়েছে?
ইলাহাবাদ হাইকোর্ট আবেদনকারী নারীর পক্ষে রায় দিয়ে স্পষ্ট করে বলেছে যে, প্রথম স্ত্রীর সম্মতি ছাড়া ও যথাযথ সামাজিক-ধর্মীয় কারণ ছাড়া দ্বিতীয় বিবাহ করা শরীয়তের আত্মা ও সংবিধানের চেতনা— উভয়েরই বিরুদ্ধে। আদালত স্বামীকে দ্বিতীয় বিবাহ করতে নিষেধ করেছে এবং তাকে পারিবারিক দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছে।
আদালত আরও বলেছে যে, এখন সময় এসেছে যখন মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে এই বিষয়ে উন্মুক্ত আলোচনা হোক এবং ধর্মীয় শিক্ষাগুলিকে সঠিক প্রেক্ষাপটে বোঝা যাক, তাদের ব্যবহার ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য বিকৃত করা না যাক।
প্রতিক্রিয়া
এই রায়ের পর দেশজুড়ে সামাজিক সংগঠন, নারী অধিকার গোষ্ঠী ও ধর্মীয় পণ্ডিতদের মধ্যে আন্দোলন দেখা গেছে। অখিল ভারতীয় মুসলিম মহিলা সংঘের সভাপতি শাবনম পারভীন বলেছেন, এটি একটি ঐতিহাসিক রায়। এটি মুসলিম নারীদের অধিকারকে সুসংহত করে এবং কুরআনের প্রকৃত শিক্ষার দিকে সমাজকে ফিরে আসার সুযোগ দেয়।
অন্যদিকে, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের মুখপাত্র বলেছেন, “আদালতের রায় সামাজিক চেতনাকে জাগ্রত করার মতো, কিন্তু এটাও জরুরি যে, ধর্মীয় রীতিনীতির সাংবিধানিক ব্যাখ্যা সংবেদনশীলতার সাথে করা হোক।”
ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে কুরআন কী বলে?
কুরআনের আয়াত ৪:৩ এ বলা হয়েছে, যদি তোমরা ন্যায় করতে পারো তবেই একাধিক বিবাহ করো, অন্যথায় একজন স্ত্রী রাখো। এর অর্থ হল, বহুবিবাহ কোন মৌলিক অধিকার নয়, বরং সামাজিক পরিস্থিতিতে ন্যায়ের সাথে গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা।