দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের উত্তাপের মধ্যে রাজনীতির পারদ চড়ছে। আম আদমি পার্টি (আপ) এবং ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মধ্যেকার বাগ্যুদ্ধ এখন কংগ্রেসকেও এই লড়াইয়ে শামিল করেছে। তবে, এবারের পরিস্থিতি আগের তুলনায় আরও বেশি গুরুতর। আম আদমি পার্টির সূত্র থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, দল কংগ্রেসকে ইন্ডিয়া জোট থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে, যা কংগ্রেসের জন্য সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। আসুন, এই বিষয়টি বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
আপের কৌশল- জোট থেকে কংগ্রেসকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা
সূত্রের খবর, আম আদমি পার্টি এখন ইন্ডিয়া জোট থেকে কংগ্রেসকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করার কথা ভাবছে। দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে, যাতে কংগ্রেসের সঙ্গে বাড়তে থাকা উত্তেজনা কমানো যায় এবং নির্বাচনী কৌশল উন্নত করা যায়।
কিছুদিন আগে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইন্ডিয়া জোটের আহ্বায়ক পদে নিজের দাবি পেশ করেছিলেন, যেখানে কংগ্রেসের সহযোগী দল আরজেডি তাঁকে সমর্থন করেছিল। যদিও, এই বিষয়ে আম আদমি পার্টি নীরবতা বজায় রেখেছিল। এখন, দিল্লি নির্বাচনকে সামনে রেখে আম আদমি পার্টি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করার পরিকল্পনা করছে।
আপের অভিযোগ - কংগ্রেস ও বিজেপির যোগসাজশ
আম আদমি পার্টির অভিযোগ, কংগ্রেস বিজেপির সঙ্গে মিলে কাজ করছে, যার ফলে জোটের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হচ্ছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করার কারণেও আপ নেতাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে। দলের বক্তব্য, কংগ্রেস এবং বিজেপির এই যোগসাজশ এবার সাধারণ মানুষের সামনে আসা উচিত।
আপের এক বর্ষীয়ান নেতা বলেছেন, "কংগ্রেস এবং বিজেপির এই জোট দিল্লির রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলছে। আমরা এই বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে সোচ্চার।" এই বিষয় নিয়ে দলের নেতা, মুখ্যমন্ত্রী আতিশী এবং সঞ্জয় সিং একটি সাংবাদিক সম্মেলন করতে পারেন, যেখানে এই পুরো পরিস্থিতির বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
কংগ্রেসের অভিযোগ - কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রকল্পের অভিযোগ
অন্যদিকে, কংগ্রেসও চুপ করে বসে নেই এবং তারাও আম আদমি পার্টির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে। ২৫শে ডিসেম্বর দিল্লি প্রদেশ যুব কংগ্রেস অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রকল্পের মাধ্যমে দিল্লির নাগরিকদের বিভ্রান্ত করার অভিযোগ করেছে। কংগ্রেস এই বিষয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে।
যুব কংগ্রেসের সভাপতি অক্ষয় লাকড়া বলেছেন, "কেজরিওয়াল তার মিথ্যা এবং প্রতারণামূলক প্রকল্পের মাধ্যমে দিল্লি বাসীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। এটি দিল্লির জনগণের সঙ্গে স্পষ্ট প্রতারণা, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।"
দিল্লি সরকার সম্প্রতি একটি প্রকল্পের ঘোষণা করেছে, যেখানে ১৮ বছরের বেশি বয়সী সকল মহিলাকে প্রতি মাসে ১০০০ টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেসের বক্তব্য, এটি শুধুমাত্র একটি নির্বাচনী স্টান্ট, যার উদ্দেশ্য দিল্লির জনগণকে প্রতারিত করা।
দিল্লি নির্বাচনের আগে বাড়ছে রাজনৈতিক সংঘাত
দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, রাজনৈতিক লড়াই ততই তীব্র হচ্ছে। যেখানে আম আদমি পার্টি এবং বিজেপির মধ্যেকার সংঘাত আগে থেকেই চলছিল, সেখানে কংগ্রেসের অভিযোগ রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এখন তিনটি দলই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের পালা চালাচ্ছে, যার ফলে নির্বাচনী পরিবেশ আরও বেশি উত্তেজনাকর হয়ে উঠেছে।
এবারের দিল্লি নির্বাচনী লড়াইয়ে অনেক নতুন দিক উন্মোচিত হতে পারে। আম আদমি পার্টির কৌশল এখন কংগ্রেসকে জোট থেকে সরিয়ে দেওয়া এবং বিজেপির সঙ্গে মোকাবিলা করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। দল এখন চাইছে দিল্লির রাজনীতিতে কংগ্রেসের ভূমিকা স্পষ্ট হোক, যাতে ভোটাররা সঠিক দিশা খুঁজে পায়।
কংগ্রেস এবং আপের সম্পর্কে কি আরও উত্তেজনা বাড়বে?
দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে আম আদমি পার্টি এবং কংগ্রেসের মধ্যেকার উত্তেজনা যেকোনো মুহূর্তে আরও বাড়তে পারে। দুই দলের মধ্যেকার বিবাদ এবং অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ নির্বাচনী পরিস্থিতিকে নতুন মোড় দিতে পারে। তবে, এটা দেখা আকর্ষণীয় হবে যে আম আদমি পার্টি তাদের কৌশল আরও কঠোর করে তোলে নাকি পরিস্থিতি বদলে যায়।
```
