কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামৈয়া সম্প্রতি চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে সংঘটিত দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য ঘোষিত ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়েছেন।
কর্ণাটক: বেঙ্গালুরুতে সম্প্রতি সংঘটিত ভয়াবহ দুর্ঘটনায় সমগ্র কর্ণাটক থমকে দাঁড়িয়েছে। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে আইপিএল জয় উৎযাপনের সময় হঠাৎ করেই জনতার ঢেউয়ের মধ্যে ১১ জনের মৃত্যু হয় এবং কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়। এই দুঃখজনক ঘটনার পর কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামৈয়া মৃতদের পরিবারের জন্য ঘোষিত ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পূর্বে যেখানে মৃতদের পরিবারকে ১০-১০ লক্ষ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, এখন সেই পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ২৫ লক্ষ টাকা।
জনসমাগমের ভয়াবহতা এবং ঘটনার কারণ
চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা প্রায় ৩৫,০০০ দর্শকের, কিন্তু সেদিন সেখানে প্রায় ২ থেকে ৩ লক্ষ মানুষ জড়ো হয়েছিল। এই অপ্রত্যাশিত জনসমাগমের সংখ্যা এত বেশি ছিল যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছিল। মানুষ ভেতরে ঢোকার জন্য ধাক্কাধাক্কি করতে শুরু করে, যার ফলে জনসমাগমের পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং লোকজন ভিড়ের নিচে পিষ্ট হয়। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আবারও জনসমাগম ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপত্তার বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছে।
মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামৈয়া জানিয়েছেন যে সরকার এবং ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন এই বিশাল সংখ্যার প্রত্যাশা করেনি। তিনি আরও বলেছেন যে, যদি এত জনতার সমাবেশ বিধানসৌধ জাতীয় উন্মুক্ত স্থানে হতো, তাহলে পরিস্থিতি ভালো হতো, কারণ সেখানে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা সহজ। কিন্তু স্টেডিয়ামের ভেতরে পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হয়ে পড়ে যে মানুষের প্রাণ গেছে।
ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বৃদ্ধি
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো ১১ জনের পরিবারের জন্য এখন ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ২৫ লক্ষ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পূর্বে ১০ লক্ষ টাকার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, যা এখন দ্বিগুণেরও বেশি করা হয়েছে। এতে মৃতদের পরিবার আর্থিক সাহায্য পাবে এবং এই দুঃখের মধ্যে কিছু সান্ত্বনা অনুভব করতে পারবে।
আহতদের চিকিৎসার খরচও সরকারের পক্ষ থেকে বহন করা হচ্ছে। উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি.কে. শিবকুমার হাসপাতালে গিয়ে আহতদের সাথে দেখা করে তাদের খোঁজখবর নিয়েছেন। তিনি জনতার কাছে আবেদন করেছেন ভবিষ্যতে সর্বজনীন অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা নিয়মাবলী কঠোরভাবে পালন করার জন্য যাতে এ ধরণের দুর্ঘটনা রোধ করা যায়।
ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তের নির্দেশ
মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামৈয়া এই ঘটনার গভীর তদন্তের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এই তদন্তে জনসমাগমের কারণগুলি নির্ণয় করা হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে তদন্ত প্রতিবেদন ১৫ দিনের মধ্যে সরকারকে জমা দেওয়া হবে। তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেছেন যে রাজনৈতিক চাপ বা বক্তব্য তদন্ত প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করবে না এবং নিরপেক্ষ তদন্ত করা হবে।
জনসমাগমে যাদের পরিবার প্রিয়জনকে হারিয়েছে তারা গভীর শোকে আচ্ছন্ন। অধিকাংশ মৃতই ছিলেন তরুণ, যারা তাদের প্রিয় দলের জয় উৎসব পালন করতে এসেছিল। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা অনেক পরিবারের জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে। আহতদের চিকিৎসা চলছে এবং তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য চিকিৎসকরা পুরোদমে চেষ্টা শুরু করে দিয়েছেন।