বিহারের রাজনীতিতে অভিযোগ-প্রত্যভিযোগের ধারা থামার নাম নিচ্ছে না। সাম্প্রতিক ঘটনা বিহার বিধান পরিষদের সাথে জড়িত, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাবড়ী দেবীর মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডার সময় ‘বিন্দি’ উল্লেখের ফলে হইচই পড়ে গেছে। এই ঘটনার পরে বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব মুখ্যমন্ত্রীর উপর তীব্র আক্রমণ চালিয়ে তাকে রাজনীতি ছেড়ে ‘সন্ন্যাস’ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন।
পাটনা: বিহার বিধান পরিষদে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাবড়ী দেবীর মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডার সময় ‘বিন্দি’ নিয়ে বিবাদ দেখা দেয়। বিরোধী দল এটিকে নারীদের অপমান বলে দাবি করে এবং সদনে হুলস্থুল করে। তেজস্বী যাদব মুখ্যমন্ত্রীর উপর আক্রমণ চালিয়ে বলেন যে, এখন তাকে রাজনীতি ছেড়ে সন্ন্যাস গ্রহণ করা উচিত। তিনি অভিযোগ করেন যে, নীতীশ কুমার বিষয় এড়িয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ করছেন। এই বিবাদ বিহারের রাজনীতিতে নতুন মোড় নিয়ে এসেছে।
বিন্দি নিয়ে বিতর্ক বেড়েছে, সদনে জমে উঠেছে হইচই
বুধবার বিহার বিধান পরিষদে সরকার দল এবং বিরোধী দলের মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডা দেখা গেছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাবড়ী দেবী সরকারের নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, যার জবাবে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার পাল্টা আক্রমণ করেন। এই সময় তিনি রাবড়ী দেবীর দিকে ইঙ্গিত করেন, যা বিরোধী দল ‘বিন্দি নিয়ে মন্তব্য’ হিসেবে দেখে এবং হইচই শুরু হয়। এক্ষুনি সদনের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং বিরোধী দলের সদস্যরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
তেজস্বীর পাল্টা আক্রমণ: ‘নীতীশজী এখন আর রাজনীতির যোগ্য নন’
সদনের বাইরে তেজস্বী যাদব মিডিয়ার সাথে কথা বলে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের উপর তীব্র আক্রমণ চালান। তিনি বলেন, “নীতীশ কুমার এখন বিষয় নিয়ে আলোচনা এড়িয়ে চলেন এবং বিতর্কের বদলে ব্যক্তিগত আক্রমণ শুরু করেছেন। যখন তিনি যুক্তিতে দুর্বল হন, তখন বিরোধীদের উপর অযথা মন্তব্য করতে থাকেন। এখন তাকে রাজনীতি ছেড়ে সন্ন্যাস গ্রহণ করা উচিত এবং কোনও আশ্রমে গিয়ে ধ্যান করতে হবে।”
তেজস্বী বলেন, এটি প্রথমবার নয় যখন মুখ্যমন্ত্রী কোনও নারীর পোশাক বা বিন্দি নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, “নীতীশ কুমারের মানসিকতা নারীবিরোধী। এর আগেও তিনি একজন নারী মন্ত্রীর বিন্দি নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন।”
‘বিহার সরকার এখন সামলানোর অবস্থায় নেই’
তেজস্বী যাদব আরও বলেন, নীতীশ কুমার এখন বিহার সরকার সামলানোর অবস্থায় নেই। তিনি বলেন, “এখন বিহারে সরকার নামে কিছু নেই। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও বুঝতে পারছেন যে তিনি এখন জনতার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবেন না।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যদি মুখ্যমন্ত্রী সদনে এ ধরনের বিষয়ে মনোযোগ দেন, তাহলে বিহারের উন্নয়ন কীভাবে হবে? জনতা মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব এবং শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে উত্তর চায়, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বিন্দি ও পোশাক নিয়ে মন্তব্য করছেন।”
‘লालू প্রসাদ এবং নীতীশ কুমারের কোনও তুলনা নেই’
তেজস্বী যাদব নীতীশ কুমারের রাজনীতির উপর আক্রমণ চালিয়ে বলেন যে, তাঁর সাথে লালু প্রসাদ যাদবের তুলনা করা বৃথা। তিনি বলেন, “লালুজী অনেক প্রধানমন্ত্রী তৈরি করেছেন, কিন্তু নীতীশ কুমার নিজের সরকার চালানোর জন্য বারবার এদিক-ওদিক যান। তাঁর কাছে কোন নীতি নেই, কোন নীতি নেই।”
‘নীতীশ কুমারের রাজনীতি এখন দিশাহীন’
তেজস্বী যাদব নীতীশ কুমারের উপর ক্ষমতার জন্য যেকোনো সীমা অতিক্রম করার অভিযোগ এনে বলেন যে, তিনি ক্ষমতার জন্য যখন তখন দল বদলাতে পারেন। তিনি বলেন, “নীতীশ কুমার এখন সম্পূর্ণ অস্থির হয়ে পড়েছেন। তিনি কখন কোন দিকে চলে যাবেন, কেউই বলতে পারে না। বিহারের জনতাকে এ ব্যাপারে গুরুত্ব সহকারে ভাবা উচিত।”
কি বিন্দি বিতর্ক থেকে রাজনৈতিক উত্তাপ বৃদ্ধি পাবে?
এই ঘটনার পর বিহারের রাজনীতিতে আন্দোলন তীব্র হয়েছে। যেখানে বিরোধী দল এটিকে নারীদের সম্মানের বিষয় হিসেবে সরকারের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে, সেখানে সরকার দল এটিকে অযথা বিতর্ক বলে দাবি করছে। এখন দেখার বিষয় হলো, এই বিতর্ক বিহারের রাজনীতিকে কোন দিকে নিয়ে যাবে এবং এর প্রভাব আগামী নির্বাচনে কতটা পড়বে।