ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডি দিবস, যা প্রতি বছর ৩ ডিসেম্বর পালিত হয়, ১৯৮৪ সালে সংঘটিত এক ভয়াবহ শিল্প দুর্ঘটনার স্মৃতি রক্ষার্থে। এই ট্র্যাজেডিতে ইউনিয়ন কার্বাইড ইন্ডিয়া লিমিটেড (ইউসিসি)-এর প্ল্যান্ট থেকে মিথাইল আইসোসায়ানেট (এমআইসি) গ্যাস লিক হয়েছিল, যার ফলে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছিল। এই ঘটনা ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়।
এক দিনের স্মৃতির চেয়ে বেশি
ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডি দিবস প্রতি বছর শোকসভা এবং প্রতিবাদ-অভিযানের মাধ্যমে প্রাণহানির শিকারদের স্মরণ করা হয়, পাশাপাশি শিল্প নিরাপত্তা এবং পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির দিন হিসেবেও পালিত হয়। এই দিনটি কেবলমাত্র ট্র্যাজেডিতে প্রাণ হারানোদের স্মরণে নয়, বরং এটি একটি লড়াইয়ের দিকেও ইঙ্গিত করে, যেখানে প্রাণহানির শিকাররা এখনও ন্যায়বিচারের আশা করছে। ৩৯ বছর পরেও তাদের ন্যায়বিচারের অপেক্ষা।
ভোপাল গ্যাস কাণ্ডের আইনি লড়াই
ভোপাল গ্যাস কাণ্ডের মামলায় দীর্ঘ আইনি লড়াই চলছে। গত কয়েক বছরে এই মামলার অনেক শুনানি হয়েছে, এবং এখন প্রাণহানির শিকারদের ন্যায়বিচারের আশা আবার জেগে উঠেছে। এই মামলার আসন্ন চূড়ান্ত শুনানি ৬ জানুয়ারী, ২০২৪-এ ভোপাল জেলা আদালতে হবে, যেখানে ডাউ কেমিক্যালসের বিরুদ্ধে রায়ের সম্ভাবনা প্রকাশ করা হয়েছে।
এর আগে, নভেম্বর ২০২৩-এ ডাউ কেমিক্যালসের আইনজীবী আদালতের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, কিন্তু ভোপাল গ্রুপ ফর ইনফরমেশন অ্যান্ড অ্যাকশনের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অবী সিং এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, ২০২৩ সালে মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট এই মামলার এখতিয়ার নিয়ে রায় দিয়েছে।
কোম্পানিকে পাঠানো সামন এবং পরিস্থিতি
৩৯ বছরে, ডাউ কেমিক্যালসকে সাতবার সামন পাঠানো হয়েছিল, যার মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে তামিল করা সামন এই মামলায় নতুন আশা জেগে উঠেছে। প্রথমবার কোম্পানির প্রতিনিধি আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন এবং তাদের পক্ষ তুলে ধরেছিলেন, যার ফলে ইঙ্গিত মিলেছে যে, এই বার মামলাটি একটু ভিন্ন মোড় নিতে পারে।
সংসদ থেকে আন্তর্জাতিক মঞ্চ পর্যন্ত
ভোপাল গ্যাস কাণ্ডের মামলা কেবলমাত্র ভারতেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও উঠে এসেছে। আমেরিকার সংসদেও এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তোলা হয়েছিল, কিন্তু ডাউ কেমিক্যালস সর্বদা তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছে। তবুও, প্রাণহানির শিকার এবং তাদের পরিবারের আইনি লড়াই এখনও চলছে, এবং ছয় জানুয়ারীর শুনানি এই লড়াইয়ের জন্য একটি নির্ণায়ক মোড় হতে পারে।
ন্যায়বিচারের আশা
ভোপাল গ্যাস কাণ্ডে ৩৯ বছর পরেও প্রাণহানির শিকারদের জন্য ন্যায়বিচারের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়নি, কিন্তু এই চূড়ান্ত শুনানির সাথে যুক্ত আশা নতুন উদ্যম জন্ম দিয়েছে। যদি আদালত এই মামলায় ডাউ কেমিক্যালসের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়, তাহলে এটি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হবে যা ট্র্যাজেডির শিকারদের কিছুটা ন্যায়বিচার দিতে পারে।
শেষ পর্যন্ত, ৬ জানুয়ারী ২০২৪-এর শুনানিতে সকলের নজর থাকবে, কারণ এটি প্রাণহানির শিকারদের জন্য ন্যায়বিচারের পথ খুলে দিতে পারে।