ভারতের শক্তি নীতিতে এক বিরাট পরিবর্তন আসতে চলেছে। কেন্দ্রীয় সরকার এখন পারমাণবিক শক্তি খাতে ব্যক্তিগত বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য বিদ্যমান আইনগুলিতে ব্যাপক সংশোধনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পারমাণবিক শক্তি: কেন্দ্রীয় সরকার পারমাণবিক শক্তি খাতে একটি বড় পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সরকার ২০৪৭ সালের মধ্যে ১০০ গিগাওয়াট পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনের মহৎ লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে এবং এটি অর্জনের জন্য ব্যক্তিগত খাতের অংশগ্রহণ বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সরকারি সূত্র অনুযায়ী, এর জন্য পারমাণবিক শক্তি আইন এবং পারমাণবিক ক্ষতির জন্য দায়বদ্ধতা আইনে গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন করা হচ্ছে।
পারমাণবিক শক্তি আইনে পরিবর্তন করে ব্যক্তিগত কোম্পানিগুলিকে এই খাতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে, যখন পারমাণবিক ক্ষতির জন্য দায়বদ্ধতা আইনে সংশোধনের উদ্দেশ্য হলো যন্ত্রপাতি সরবরাহকারীদের দায়িত্ব কিছুটা কম করা, যাতে তারা বিনিয়োগ এবং অংশীদারিত্বের জন্য আরও আগ্রহী হয়।
পারমাণবিক শক্তি আইনে সংশোধনের প্রস্তুতি
সূত্রমতে, সরকার পারমাণবিক শক্তি আইন, ১৯৬২ সালে এমন সংশোধন করার কথা ভাবছে, যাতে ব্যক্তিগত কোম্পানিগুলিকে কেবলমাত্র প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি সরবরাহের অনুমতি দেওয়া না হয়, বরং তারা সংযোজন নির্মাণ এবং পরিচালনার ক্ষেত্রেও অংশগ্রহণ করতে পারে। পাশাপাশি, পারমাণবিক ক্ষতির জন্য দায়বদ্ধতা আইন, ২০১০ সালেও পরিবর্তনের প্রস্তুতি চলছে যাতে যন্ত্রপাতি সরবরাহকারীদের আইনি দায়িত্ব কম করা যায়।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে বিত্তমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ তার বাজেট বক্তৃতায় পারমাণবিক শক্তিকে ব্যক্তিগত খাতের জন্য উন্মুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই সময় এটি স্পষ্ট করা হয়েছিল যে গবেষণা রিঅ্যাক্টর এবং চিকিৎসা-ঔদ্যোগিক ব্যবহারের জন্য ব্যক্তিগত অংশীদারিত্বকে উৎসাহিত করা হবে। তবে সেই ঘোষণার পরে ঠোস বাস্তবায়ন ধীরগতি সম্পন্ন হয়েছে। এখন সরকার সেই ঘোষণাটি জমির উপর বাস্তবায়নের জন্য আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো পরিবর্তনের কথা ভাবছে।
SMR: ছোট রিঅ্যাক্টর থেকে বড় আশা
পারমাণবিক শক্তি মিশনের অধীনে ছোট মডিউলার রিঅ্যাক্টর (SMR) কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সরকারের লক্ষ্য ২০৩৩ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৫ টি স্বদেশী SMR চালু করা। এর জন্য ২০,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। SMR কম খরচে, নিরাপদ এবং নমনীয় রিঅ্যাক্টর, যার বিশ্বব্যাপী চাহিদাও বেড়ে চলেছে।
পারমাণবিক শক্তি বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, ২০৪৭ সালের ১০০ গিগাওয়াট লক্ষ্যের প্রায় ৫০% উৎপাদন সরকারি-ব্যক্তিগত অংশীদারিত্ব (PPP) মডেলের অধীনে করা হবে। এর জন্য আর্থিক মডেলও তৈরি করা হচ্ছে, যাতে সরকারী গ্যারান্টি, ব্যবহারযোগ্যতা ব্যবধান অর্থায়ন (VGF) এবং কর ছাড়ের মতো সুবিধা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আশা
ভারত ২০০৮ সালে ভারত-আমেরিকা অসামরিক পারমাণবিক চুক্তির পর পারমাণবিক সরবরাহকারী গোষ্ঠীর (NSG) ছাড় পেয়েছিল। এর ফলে বিদেশি কোম্পানিগুলি ভারতে পারমাণবিক সংযোজন স্থাপনে আগ্রহ দেখাচ্ছিল। কিন্তু ২০১০ সালের নাগরিক দায়িত্ব আইন তাদের জন্য একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এখন যদি তাতে সংশোধন হয়, তাহলে GE, Westinghouse, Areva-র মতো আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলির জন্য ভারত একটি বড় বাজার হয়ে উঠতে পারে।
সম্প্রতি একটি সংসদীয় কমিটিও পারমাণবিক খাতে ব্যক্তিগত বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য আইনগুলিতে সংশোধনের সুপারিশ করেছে। কমিটি বলেছে, যদি সরকার শক্তি নিরাপত্তা, কার্বন নিরপেক্ষতা এবং আত্মনির্ভরতার লক্ষ্য অর্জন করতে চায়, তাহলে পারমাণবিক শক্তিতে ব্যাপক বিনিয়োগের প্রয়োজন।