সুপ্রিম কোর্টের রায়: বেঙ্গালুরু ইসকনের পক্ষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

সুপ্রিম কোর্টের রায়: বেঙ্গালুরু ইসকনের পক্ষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
সর্বশেষ আপডেট: 16-05-2025

ইসকন মুম্বাই ও ইসকন বেঙ্গালুরুর মধ্যে চলমান বিরোধের উপর ভারতের সর্বোচ্চ আদালত, সুপ্রিম কোর্ট গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে। আদালত স্পষ্ট করেছে যে, বেঙ্গালুরুর হরে কৃষ্ণ হিল টেম্পল ইসকন বেঙ্গালুরুর অধিকারে থাকবে।

নয়াদিল্লি: দেশের প্রধান ধর্মীয় সংগঠন ইসকনের দুটি প্রধান কেন্দ্র, মুম্বাই ও বেঙ্গালুরুর মধ্যে সম্পত্তি ও সংগঠনগত অধিকার নিয়ে চলমান বিরোধের উপর সুপ্রিম কোর্ট চূড়ান্ত রায় দিয়ে বিষয়টির অবসান ঘটিয়েছে। এই বিরোধে কর্ণাটক হাইকোর্টের রায় উল্টে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বেঙ্গালুরু ইসকনের পক্ষে বড় রায় দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করেছে যে, বেঙ্গালুরু হরে কৃষ্ণ হিল টেম্পল ইসকন বেঙ্গালুরুর মালিকানায় থাকবে এবং মুম্বাই ইসকনের দাবি খারিজ করা হয়েছে।

ইসকন বিরোধের পটভূমি

এই বিরোধ শুরু হয় যখন ইসকন মুম্বাই দাবি করে যে, ইসকন বেঙ্গালুরু কেবলমাত্র তাদের একটি শাখা (ব্রাঞ্চ) এবং এই কারণে বেঙ্গালুরুতে থাকা সম্পত্তিসহ সকল অধিকার মুম্বাই ইসকনেরই। মুম্বাই ইসকনের বক্তব্য ছিল বেঙ্গালুরু সমাজ ও মন্দিরের পরিচালনা মুম্বাইয়ের অধীনে থাকা উচিত কারণ তারা একই সংগঠনের অংশ। অন্যদিকে, ইসকন বেঙ্গালুরু বলেছে যে, তারা বহু বছর ধরে স্বাধীনভাবে কাজ করছে এবং তাদের মন্দির ও সম্পত্তি তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের রায়

সুপ্রিম কোর্ট তাদের রায়ে বলেছে যে, ইসকন বেঙ্গালুরুর সমাজ ও মন্দিরের সম্পত্তি সম্পূর্ণরূপে তার অধিকার ক্ষেত্রে থাকবে। আদালত কর্ণাটক হাইকোর্টের আদেশ উল্টে দিয়ে মুম্বাই ইসকনের দাবি খারিজ করেছে। আদালত বলেছে যে, বেঙ্গালুরু ইসকন একটি স্বাধীন ইউনিট এবং তার পরিচালনা মুম্বাই থেকে আলাদা।

ইসকন বেঙ্গালুরুর অধ্যক্ষের প্রতিক্রিয়া

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ইসকন বেঙ্গালুরুর অধ্যক্ষ মধু পণ্ডিত দাস তাদের আনন্দ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, "এই রায় হরে কৃষ্ণ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীল প্রভুপাদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। শ্রীল প্রভুপাদ ১৯৭৭ সালে মহা সমাধি লাভ করেছিলেন। এর পর থেকে তাঁর শিষ্যরা এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। মুম্বাই ইসকনের চেষ্টা ছিল শুধুমাত্র শ্রীল প্রভুপাদকে একমাত্র গুরু মনে করার ব্যক্তিদের সংগঠনে রাখা এবং অন্যদের বহিষ্কার করা। তারা বেঙ্গালুরু ইসকনের সম্পত্তির উপর দাবিও জানিয়েছিল, যা আজ সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দিয়েছে।"

মধু পণ্ডিত দাস আরও বলেছেন যে, সুপ্রিম কোর্টের এই রায় সংগঠনের ইতিহাস ও ধর্মের সত্যতা অক্ষুণ্ণ রাখবে এবং বেঙ্গালুরু ইসকন তার স্বাধীন অস্তিত্ব নিয়ে এগিয়ে যাবে।

বিরোধের প্রধান বিষয়গুলি

  • মুম্বাই ইসকনের দাবি: বেঙ্গালুরু ইসকন কেবলমাত্র মুম্বাই ইসকনের শাখা। বেঙ্গালুরুর সম্পত্তিও মুম্বাই ইসকনের অধিকারে থাকা উচিত।
  • বেঙ্গালুরু ইসকনের পক্ষ: তারা বহু বছর ধরে স্বাধীনভাবে পরিচালনা করছে। বেঙ্গালুরু মন্দিরের সম্পত্তি ও সংগঠনের উপর তাদের পূর্ণ অধিকার রয়েছে।
  • কর্ণাটক হাইকোর্টের আদেশ: আগে হাইকোর্ট মুম্বাই ইসকনের পক্ষে রায় দিয়েছিল, কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট তা উল্টে দিয়েছে।

এই বিরোধের সামাজিক ও ধর্মীয় প্রভাব

ইসকন এর মত ধর্মীয় সংগঠনে এই ধরণের বিরোধ বেশ সংবেদনশীল কারণ এতে কেবলমাত্র সম্পত্তির বিষয় নয়, বরং ভক্তদের আবেগগত যুক্ততা ও গুরু-শিষ্য পরম্পরার বিষয়ও জড়িত। সুপ্রিম কোর্টের এই রায় স্পষ্ট করে যে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও আইনত স্পষ্ট সংগঠনগত সীমা থাকা উচিত। এই রায় দিয়ে ইসকনের দুটি প্রধান কেন্দ্রের মধ্যে স্পষ্টতা এসেছে এবং ধর্মীয় কাজে বাধা কমবে।

Leave a comment