মথুরা-বৃন্দাবনে বানকে বিহারী মন্দির করিডর: বিতর্ক ও পুনর্বাসনের আশ্বাস

মথুরা-বৃন্দাবনে বানকে বিহারী মন্দির করিডর: বিতর্ক ও পুনর্বাসনের আশ্বাস
সর্বশেষ আপডেট: 10-06-2025

মথুরা-বৃন্দাবন নগর নিগম ঠাকুর বানকে বিহারী মন্দিরের জন্য ৫ একর জমিতে করিডর প্রস্তাব পাস করেছে। এটি তীর্থযাত্রীদের সুবিধা দেবে, কিন্তু কুঞ্জ গলির রূপ নিয়ে বিতর্ক। সরকার পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়েছে।

বানকে বিহারী মন্দির করিডর: মথুরা-বৃন্দাবনে ঠাকুর বানকে বিহারী মন্দিরের চারপাশে করিডর নির্মাণের প্রস্তাব সম্প্রতি মথুরা-বৃন্দাবন নগর নিগম পাস করেছে। এই সিদ্ধান্ত কেবলমাত্র মন্দির দর্শন আরও সহজ করে তুলবে না, বরং বৃন্দাবনের প্রাচীন সংস্কৃতি এবং আধুনিক উন্নয়নের মধ্যে ভারসাম্য স্থাপনের চেষ্টাও। কিন্তু, এই প্রস্তাব নিয়ে কিছু বিতর্কও সামনে এসেছে। আসুন, এই বড় সিদ্ধান্তের প্রতিটি দিক সহজ ভাষায় বুঝে নেই।

কী বানকে বিহারী মন্দির করিডর পরিকল্পনা?

ঠাকুর বানকে বিহারী মন্দির, বৃন্দাবনের একটি ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় স্থান, যেখানে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী দর্শনার্থী আসেন। বর্ধমান জনসাধারণের কথা বিবেচনা করে মথুরা-বৃন্দাবন নগর নিগম মন্দিরের চারপাশে প্রায় পাঁচ একর জমিতে করিডর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই করিডরের উদ্দেশ্য হল মন্দির অঙ্গন আরও ব্যবস্থাপিত করা, তীর্থযাত্রীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো এবং দর্শন সহজ করা।

এই প্রস্তাব উত্তর প্রদেশ সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা ধর্মীয় স্থানগুলিকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যুক্ত করে পর্যটনকে উৎসাহিত করতে চায়। করিডর নির্মাণের ফলে মন্দিরের চারপাশের সংকীর্ণ গলির জনাকীর্ণতা কমবে এবং তীর্থযাত্রীরা নিরাপদ এবং সুবিধাজনক দর্শনের অভিজ্ঞতা পাবেন।

নগর নিগমের বৈঠকে কী হয়েছিল?

সোমবার মথুরা-বৃন্দাবন নগর নিগমের বৈঠকে এই করিডর প্রস্তাবে তীব্র হট্টগোলের মধ্যে অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে মেয়র বিনোদ আগ্রওয়াল, নগর আয়ুক্ত জগপ্রবেশ এবং সকল ওয়ার্ডের পার্ষদ উপস্থিত ছিলেন। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-এর সাথে যুক্ত পার্ষদরা এই পরিকল্পনার সমর্থন করেছিলেন, অন্যদিকে বিরোধী পার্ষদরা এর বিরোধিতা করেছিলেন।

বিরোধী পার্ষদদের দাবি, করিডর নির্মাণের ফলে বৃন্দাবনের প্রাচীন কুঞ্জ গলির রূপ নষ্ট হতে পারে। এছাড়াও, এই নির্মাণের ফলে শত শত স্থানীয় লোক এবং ব্যবসায়ী প্রভাবিত হতে পারেন। অন্যদিকে, মেয়র আশ্বাস দিয়েছেন যে সরকার সমস্ত প্রভাবিত ব্যক্তির পুনর্বাসন করবে এবং কারও ক্ষতি হতে দেবে না।

কেন করিডর নির্মাণ প্রয়োজন?

ঠাকুর বানকে বিহারী মন্দিরে প্রতি বছর তীর্থযাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে উৎসব এবং বিশেষ অনুষ্ঠানে মন্দির অঙ্গনে প্রচুর ভিড় হয়, যার ফলে তীর্থযাত্রীদের দর্শনে অসুবিধা হয়। মেয়র বিনোদ আগ্রওয়াল জানিয়েছেন যে এই করিডর উচ্চতম ন্যায়ালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী নির্মিত হবে। এর প্রধান উদ্দেশ্য হল মন্দির অঙ্গন ব্যবস্থাপিত করা এবং তীর্থযাত্রীদের উন্নত সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা।

করিডর নির্মাণের ফলে কেবল দর্শন সহজ হবে না, বরং মন্দিরের চারপাশের এলাকাও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং ব্যবস্থাপিত হবে। এতে বৃন্দাবনে পর্যটনও উৎসাহিত হবে, যা স্থানীয় অর্থনীতির জন্য উপকারী হতে পারে।

বিতর্কের পেছনে কী?

প্রতিটি বড় পরিবর্তনের সাথে কিছু বিতর্ক জড়িত থাকে এবং বানকে বিহারী মন্দির করিডরের প্রস্তাবও এর ব্যতিক্রম নয়। কংগ্রেস পার্ষদ ঘনশ্যাম চৌধুরী এই পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তাঁর দাবি, করিডর নির্মাণের ফলে বৃন্দাবনের বিখ্যাত কুঞ্জ গলি, যা এই শহরের সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক পরিচয়, নষ্ট হতে পারে।

এছাড়াও, স্থানীয় বাসিন্দা এবং ব্যবসায়ীরা তাদের জমি এবং জীবিকা হারানোর আশঙ্কা করছেন। অনেকে মনে করেন, এই ধরণের বৃহৎ নির্মাণের ফলে বৃন্দাবনের প্রাচীন আকর্ষণ কমে যেতে পারে। তবে, মেয়র এই আশঙ্কা দূর করার চেষ্টা করেছেন এবং বলেছেন যে সরকার সমস্ত প্রভাবিত ব্যক্তির দিকে নজর রাখবে।

সরকারের আশ্বাস: সবার সম্মতিতে পরিকল্পনা তৈরি হবে

মেয়র বিনোদ আগ্রওয়াল স্পষ্ট করেছেন যে করিডর নির্মাণ গোস্বামী সমাজের দাবি এবং স্থানীয় মানুষের প্রয়োজনীয়তা মাথায় রেখে করা হবে। তিনি বলেছেন যে সরকার কারও ক্ষতি হতে দেবে না। প্রভাবিত ব্যক্তিদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে এবং ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্মতিতে করিডরের চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করা হবে।

এছাড়াও, সরকার দাবি করেছে যে এই করিডর বৃন্দাবনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা করে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে তুলবে। এতে কেবল তীর্থযাত্রীরা উপকৃত হবে না, বরং বৃন্দাবনের পর্যটনও নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।

করিডর থেকে কী পরিবর্তন আসবে?

বানকে বিহারী মন্দির করিডর নির্মাণের ফলে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। সবচেয়ে বড় সুবিধা হল মন্দিরের চারপাশের জনাকীর্ণতা কমে যাবে। তীর্থযাত্রীরা কোনও সমস্যা ছাড়াই দর্শন করতে পারবেন। এছাড়াও, করিডরের ফলে মন্দির অঙ্গনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাও উন্নত হবে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্য এটি একটি সুযোগ হতে পারে, কারণ আরও পর্যটক আসার ফলে তাদের আয় বাড়তে পারে। একই সাথে, বৃন্দাবন একটি আধুনিক এবং ব্যবস্থাপিত ধর্মীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি পাবে।

Leave a comment