সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর থেকেই ঠাকুর বানকেবিহারী মন্দিরের করিডোর নির্মাণ নিয়ে যোগী সরকার স্পষ্ট নির্দেশ পেয়েছে। আদালতের আদেশকে তীর্থযাত্রীদের সুবিধা এবং ভিড় ব্যবস্থাপনার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করে সরকার এই প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
বানকে বিহারী করিডোর: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশাবলীর পর বানকে বিহারী মন্দির করিডোর নির্মাণ নিয়ে যোগী সরকারের উদ্যম বেড়েছে। এদিকে, শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের উপদেষ্টা এবং সাবেক জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা অবনীশ কুমার অবস্থী মন্দির সেবায়তদের সাথে সাক্ষাৎ করে করিডোর প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করেন। যেখানে একদিকে সেবায়তরা করিডোর নির্মাণে নীতিগত সম্মতি জানিয়েছে, অন্যদিকে সরকার কর্তৃক প্রস্তাবিত মন্দির ন্যাস গঠনকে তারা তীব্র প্রতিবাদ করেছে।
সেবায়তদের উদ্বেগের প্রধান বিষয় হল সরকার ন্যাসের মাধ্যমে পূজা-পদ্ধতি এবং তাদের ঐতিহ্যগত অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে চায়। যদিও সরকারের দাবি, ন্যাস কেবল ব্যবস্থাপনার জন্য হবে, কিন্তু সেবায়তদের অবস্থান স্পষ্ট— 'পূজার অধিকারে কোনো আপোষ হবে না।'
সেবায়তদের অবস্থান পরিবর্তন, কিন্তু ন্যাস নিয়ে অটুট প্রতিবাদ
শুক্রবার অবনীশ অবস্থী মন্দির সেবায়ত শৈলেন্দ্র গোস্বামীর গদ্দীতে যান, যেখানে গোস্বামী সমাজের সাথে সম্পৃক্ত সেবায়তদের সাথে গভীর আলোচনা হয়। সকাল পর্যন্ত যারা করিডোরের বিরোধিতা করছিলেন, তারা সন্ধ্যার মধ্যে কিছুটা নমনীয়তা দেখিয়েছেন এবং বলেছেন যে যদি ব্যবসায়ী এবং ব্রজবাসী সম্মত হন তাহলে তারা করিডোরের বিরোধিতা করবে না। কিন্তু তারা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে মন্দির ন্যাস গঠন কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়।
সেবায়তদের ধারণা, ন্যাস গঠনের নামে সরকার ধীরে ধীরে পূজা-অধিকারে হস্তক্ষেপ করবে। সেবায়তদের যুক্তি, এটি কেবল ধর্মীয় নয়, বরং সামাজিক ও ঐতিহ্যগত ঐতিহ্যের বিষয়। বানকে বিহারী মন্দিরের সেবা হযরত স্বামী হরিদাস জীর বংশধরদের দ্বারা করা হয়, যিনি নিজেই ঠাকুরজীকে প্রকাশ করেছিলেন।
সরকারের আশ্বাস: 'সেবায়তদের অধিকার রক্ষা করা হবে'
বৈঠকের পর মিডিয়ার সাথে কথা বলে অবস্থী বলেন যে রাজ্য সরকার ভক্তদের উন্নত সুযোগ-সুবিধা দিতে চায় এবং করিডোরের ফলে কেবলমাত্র দর্শন সহজ হবে না, বরং ব্যবসা ও পর্যটনও বাড়বে। তিনি আশ্বস্ত করেছেন যে সেবায়তদের ঐতিহ্যগত অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হবে না এবং পূজা-পদ্ধতি আগের মতোই থাকবে।
অবস্থী স্পষ্ট করে বলেছেন যে ন্যাস কেবলমাত্র ব্যবস্থাপনার জন্য প্রস্তাবিত, ধর্মীয় ঐতিহ্য হস্তান্তরের জন্য নয়। তিনি সেবায়তদের কাছে লিখিত পরামর্শও চেয়েছেন যাতে সকল পক্ষের সম্মতিতে সমাধান করা যায়।
করিডোর নির্মাণ সংক্রান্ত স্থানীয় উদ্বেগ
এই প্রকল্পের আওতায় বৃন্দাবনের পরিক্রমা পথে কালীদহ থেকে কেশীঘাট পর্যন্ত বিশ্রামস্থল এবং করিডোর তৈরির কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু যাদের সম্পত্তি এই করিডোরের আওতায় পড়ছে, তাদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। বৈঠকে কিছু প্রভাবিত নাগরিক বলেছেন যে তারা প্রজন্ম ধরে সেখানে বসবাস করছেন, এমতাবস্থায় তাদের উচ্ছেদ অবিচার হবে।
ডিএম সিপি সিং স্পষ্ট করেছেন যে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী করিডোর তৈরি করতে হবে, এখন ভালো ক্ষতিপূরণের কথা বলা যেতে পারে। এতে রেগে কিছু লোক বৈঠক থেকে বেরিয়ে গেছে, অন্যদিকে কিছু লোক সমর্থনও করেছে।
সেবায়তদের পরামর্শ
সেবায়তরা পরামর্শ দিয়েছেন যে সাবেক ডিজিপি সুলখান সিংহের রিপোর্টকে ভিত্তি করে তিন ধাপে মন্দিরের ব্যবস্থা উন্নত করা যেতে পারে। এতে দর্শনের সময় বাড়ানো, অনলাইন নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করা, স্থানীয় ট্রাস্টের অধীনে করিডোর পরিচালনা করা ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। তারা বলেছেন যে যদি সরকার এই ব্যবস্থাগুলি বাস্তবায়ন করে, তাহলে বিরোধের সমাধান হতে পারে।
সেবায়তরা এটাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে যখন আগের সপা সরকার মন্দির অধিগ্রহণের কথা বলেছিল, তখন যোগী আদিত্যনাথ নিজেই সাংসদ থাকাকালীন তার বিরোধিতা করেছিলেন। এমতাবস্থায় এখন তাঁরই আমলে ন্যাস গঠনের কথা বলা কিছুটা বিরোধী মনে হয়।