আহমেদাবাদ থেকে লন্ডন যাওয়া একটি এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। দুর্ঘটনায় ২৪১ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে অনেক পরিবার এবং আবেগঘন মানবিক গল্প সামনে এসেছে।
আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা: আহমেদাবাদ থেকে লন্ডন যাওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইট উড্ডয়নের মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। দুর্ঘটনাটি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে বিমানে থাকা ২৪১ জন যাত্রীর সকলেরই ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে। এটি কেবলমাত্র একটি বিমান দুর্ঘটনা নয়, বরং এর সাথে জড়িত অসংখ্য গল্প প্রত্যেকের হৃদয়কে কাঁপিয়ে তুলেছে।
বাঁসওয়াড়ার চিকিৎসক কৌনী ব্যাস এবং তিনটি মাসুম শিশুর মৃত্যু
এই দুর্ঘটনায় বাঁসওয়াড়ার বাসিন্দা ডাঃ কৌনী ব্যাসও তাঁর তিনটি সন্তানকে সাথে নিয়ে জীবনের শেষ যাত্রায় ছিলেন। কৌনী ব্যাস এক মাস আগেই তাঁর চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন যাতে তিনি তাঁর স্বামী ডাঃ প্রদীপ যোশীর সাথে লন্ডনে নতুন করে জীবন শুরু করতে পারেন। ছয় বছর ধরে সংগ্রামের পর তারা তাদের সন্তানদের সাথে লন্ডনে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
উড্ডয়নের আগে তিনি হাসিখুশি শিশুদের সাথে সেলফি তুলেছিলেন। কেউ জানত না যে এটি তাঁদের শেষ হাসি হবে। দুর্ঘটনায় তাঁর পুরো পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে।
ঈদের উৎসবের পর লন্ডনে ফিরছিলেন নফিসাবানুর পরিবার
নফিসাবানু সায়দ তাঁর স্বামী ইনায়ত আলী এবং দুই সন্তানকে সাথে নিয়ে ঈদের ছুটি কাটিয়ে লন্ডনে ফিরছিলেন। তাঁদের পরিবার গুজরাটে তাদের আত্মীয়দের সাথে দেখা করে অত্যন্ত খুশি ছিল। কিন্তু তাঁদের বিমান যখন বিমানবন্দর থেকে উড়ে গেল, কয়েক মিনিটের মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে গেল। বিমানবন্দরের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা তাদের আত্মীয়রা বিস্ফোরণের শব্দ শুনে কাঁপতে শুরু করল। নফিসাবানুর পুরো পরিবার এই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।
গর্ভবতী কন্যার যত্নের জন্য যাচ্ছিলেন মায়ের শেষ যাত্রা
সালমা বেগম একজন মা ছিলেন, যিনি তাঁর গর্ভবতী কন্যার যত্নের জন্য লন্ডনে যাচ্ছিলেন। তাঁর শালী আয়ানাবেন তাঁকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে এসেছিলেন। সালমাবেনের ফ্লাইট যখন উড্ডয়ন করে এবং তারা বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে গেল, তখন দুর্ঘটনার খবর পেয়ে গেলেন। আয়ানাবেন জানিয়েছেন যে সালমাবেনের স্বামীও লন্ডনে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু শেষ মুহূর্তে তিনি তাঁর ভ্রমণ স্থগিত করে দিয়েছিলেন। এই সিদ্ধান্ত তাঁর জীবন রক্ষা করেছে, কিন্তু তাঁর স্ত্রী দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন।
বন্ধুকে বিদায় জানাতে আসা যুবক নিজেই একা থেকে গেল
অভিনব পরিহারের পরিবার লন্ডনে বসতি স্থাপন করেছিল। অভিনব ব্যবসায়িক কাজের জন্য ভারতে এসেছিলেন এবং এখন লন্ডনে ফিরছিলেন। তাকে বিমানবন্দর থেকে বিদায় জানাতে তাঁর বন্ধু কবির দেব এসেছিলেন। উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরেই বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়। কবির অবিলম্বে সিভিল হাসপাতালে গেলেন, এই আশায় যে হয়তো তাঁর বন্ধু বেঁচে আছে, কিন্তু তিনি শুধুমাত্র হতাশা পেলেন।
তীব্র বিস্ফোরণ এবং আগুনের গোলকের মধ্যে পরিণত হল বিমান
এয়ার ইন্ডিয়ার এই ফ্লাইট যখন উড্ডয়নের পর আকাশে উঠল, হঠাৎ করে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে এর ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। বিমানটি মাটিতে আছড়ে পড়ে এবং ভয়াবহ আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, দুর্ঘটনার সময় তীব্র বিস্ফোরণ হয়, যার ফলে আশপাশের এলাকা কেঁপে ওঠে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত উদ্ধারকারীরা আগুন নেভানো এবং লাশ চিহ্নিত করার কাজে ব্যস্ত ছিল।
পরিজনদের কান্নায় ভেঙে পড়া
দুর্ঘটনার পর মৃতদের পরিজনরা তাদের প্রিয়জনদের খোঁজে হাসপাতাল এবং বিমানবন্দরে ছুটে আসেন। কারও মা, কারও বোন, কারও ছেলে, আবার কারও পুরো পৃথিবী এই দুর্ঘটনায় শেষ হয়ে গেছে। চোখে জল এবং মনে আশা নিয়ে পরিজনরা আবারও জিজ্ঞাসা করতে থাকেন - "কোনও কি জীবিত আছে?"