গুজরাটের আহমেদাবাদে বৃহস্পতিবার (১২ জুন) একটি মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে, যখন এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার (VT-ANB) সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে উড়ালের সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়।
বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার: গুজরাটের রাজধানী আহমেদাবাদে বৃহস্পতিবারের দিনটি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে, যখন এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়ালের সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়। এই বিমানটি লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল, কিন্তু সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সীমানার কাছে হঠাৎ নিচে নেমে আসে এবং তীব্র ধাক্কায় ধোঁয়ার কালো মেঘে পরিণত হয়। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা ২৪২ জন যাত্রী ও ক্রু সদস্যের জীবন বিপন্ন হয়।
এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনার সময় বিমানে ২ জন পাইলট, ৮ জন ক্রু সদস্য এবং ২৩২ জন যাত্রী ছিলেন। দুর্ঘটনার কয়েক মিনিট আগে পাইলট 'মেডে কল' (Mayday Call) জারি করেছিলেন, যা থেকে বোঝা যায় যে বিমানটি গুরুতর প্রযুক্তিগত সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল।
দুর্ঘটনার শিকার বিমান: VT-ANB ড্রিমলাইনার
দুর্ঘটনার শিকার বিমানটির নিবন্ধন নম্বর VT-ANB এবং এটি এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার ছিল। এই বিমানটি ২০০৪ সালের জানুয়ারীতে এয়ার ইন্ডিয়াকে হস্তান্তর করা হয়েছিল এবং এর প্রথম উড়ান ছিল ১৪ ডিসেম্বর ২০১৩। এর সিরিয়াল নম্বর ৩৬২৭৯ এবং লাইন নম্বর LN-26। এই বিমানটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল এবং দীর্ঘ দূরত্বের ফ্লাইটের জন্য ব্যবহার করা হতো।
ড্রিমলাইনারের বৈশিষ্ট্য: প্রযুক্তি ও আরামের মেলবন্ধন
বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার একটি অত্যাধুনিক বিমান যা প্রযুক্তি এবং যাত্রীদের সুবিধা উভয় ক্ষেত্রেই অগ্রণী। এর বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ:
- যাত্রী ধারণ ক্ষমতা: ২৪৮
- ব্যবসায়িক শ্রেণীর আসন: ১৮
- উইংস্প্যান (পালকের দৈর্ঘ্য): ৬০ মিটার
- দৈর্ঘ্য: ৫৭ মিটার
- উচ্চতা: ১৭ মিটার
- পাল্লা: ৭,৩০৫ নটিক্যাল মাইল (প্রায় ১৩,৫৩০ কিমি)
- ইঞ্জিনের বিকল্প: জেনারেল ইলেকট্রিক GEnx-1B অথবা রোলস-রয়েস ট্রেন্ট ১০০০
এই বিমানটি প্রধানত ইউরোপ, আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার ফ্লাইটের জন্য ব্যবহার করা হতো।
মেডে কল: শেষ সতর্কীকরণ
দুর্ঘটনার কয়েক মিনিট আগে বিমানের পাইলট কন্ট্রোল টাওয়ারে 'মেডে কল' করেছিলেন। 'মেডে' আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলের ভাষায় জরুরি অবস্থাকে নির্দেশ করে। এর অর্থ হল বিমানটি গুরুতর বিপদের মধ্যে রয়েছে এবং অবিলম্বে সাহায্যের প্রয়োজন।
এই কলের পরে বিমানবন্দরের জরুরি ইউনিটগুলি সতর্ক হয়ে ওঠে, কিন্তু কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই বিমানটি টেক-অফের পরে ভারসাম্য হারায় এবং বিমানবন্দরের সীমানার কাছে দ্রুত নিচে নেমে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, একটি জোরালো বিস্ফোরণ হয় এবং ধোঁয়ার একটি বিশাল মেঘ আকাশে ছড়িয়ে পড়ে।
সুরক্ষা ও উদ্ধার কার্যক্রম: এয়ার ইন্ডিয়ার দ্রুত প্রতিক্রিয়া এয়ার ইন্ডিয়া দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে যাত্রীদের আত্মীয়স্বজনদের জন্য একটি হটলাইন নম্বর ১৮০০ ৫৬৯১ ৪৪৪ প্রকাশ করেছে, যার মাধ্যমে তাদের দুর্ঘটনার তথ্য এবং সহায়তা প্রদান করা হবে। জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলা বাহিনী (NDRF) এবং ফায়ার ব্রিগেডের দলগুলি অবিলম্বে ঘটনাস্থলে পৌঁছে। আহতদের নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। नागरिक उड्डयन महानिदेशालय (DGCA) এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং ব্ল্যাক বক্স উদ্ধারের কাজ চলছে।
প্রযুক্তিগত কারণ কী ছিল? তদন্তে ব্যস্ত DGCA
যদিও দুর্ঘটনার পিছনে প্রকৃত কারণ এখনও স্পষ্ট হয়নি, তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ইঞ্জিন বা প্রযুক্তিগত ব্যবস্থায় গুরুতর ত্রুটি ছিল। বোয়িং ৭৮৭-৮ এর GEnx-1B ইঞ্জিনের সাথে আগেও কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যা বিশ্বব্যাপী দেখা দিয়েছে, কিন্তু ভারতে এই ধরণের ঘটনা প্রথমবারের মতো ঘটেছে।
এই দুর্ঘটনাটি আবারও ভারতের বিমান চলাচলের নিরাপত্তা নীতি এবং অবকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুলে ধরেছে। গত কয়েক বছরে অনেক বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে, যা থেকে বোঝা যায় যে প্রশিক্ষণ, পরিদর্শন এবং রক্ষণাবেক্ষণের মতো বিষয়গুলির দিকে আরও মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।