পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র তুরস্কে বর্তমানে বিশ্বের সর্বোচ্চ সুদের হার (interest rates) বিরাজ করছে। তুরস্কের অর্থনৈতিক সংকট শুরু হয়েছিল ১০ আগস্ট, ২০১৮ সালে। সেই সময় আমেরিকার সাথে চলমান বিরোধের কারণে তুরস্কের মুদ্রা লিরা তীব্রভাবে পতনশীল হয়েছিল।
তুরস্ক: একদিকে যেখানে ভারত সহ বিশ্বের অনেক দেশে সুদের হার কমছে, সেখানে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র তুরস্ক গভীর অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত। তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হার (পলিসি রেট) বর্তমানে ৪৬%, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। এই সংখ্যা ভারতের ৫.৫% হারের প্রায় নয় গুণ বেশি। তুরস্কের এই দুর্দশা ২০১৮ সাল থেকে চলছে, যখন আমেরিকার সাথে রাজনৈতিক উত্তেজনার পরে এর মুদ্রা 'লিরা' তীব্রভাবে ধ্বসে পড়েছিল। তখন থেকেই এই দেশ অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য ক্রমাগত সংগ্রাম করে চলেছে এবং বিপর্যয়করভাবে তার 'ভাই' পাকিস্তানও একই পথে চলতে চলতে দেউলিয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।
তুরস্কে সংকটের সূচনা: আমেরিকার সাথে ঝগড়া ভেঙে দিল কমর
তুরস্কের অর্থনৈতিক পতন শুরু হয় ১০ আগস্ট, ২০১৮ সালে, যখন তৎকালীন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প তুরস্কের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। কারণ ছিল তুরস্ক কর্তৃক আমেরিকান ভূখণ্ডে একজন পাদ্রীর গ্রেফতার। ট্রাম্প তুরস্কের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের উপর ট্যারিফ বৃদ্ধি করেন, যার পরে তুরস্কের মুদ্রা 'লিরা'র তীব্র অবমূল্যায়ন হয়। মাত্র ৪৭ দিনের মধ্যে লিরা ডলারের তুলনায় ৩৫% নেমে যায়। এর পর থেকে তুরস্ক আর কখনো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারেনি।
এই সংকট তুরস্কের সাধারণ মানুষের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। মূল্যস্ফীতি আকাশছোঁয়া, বেকারত্ব বেড়েছে এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। আজ তুরস্কে সুদের হার এত উচ্চ যে কোন ব্যবসায়ী বা সাধারণ মানুষ ঋণ নিতে ভয় পায়।
বিশ্বে সুদের হারের অবস্থা: তুরস্ক সর্বোচ্চ, ভারতের অবস্থা উন্নত
তুরস্ক (৪৬%) এর পর বিশ্বে সর্বোচ্চ সুদের হার আর্জেন্টিনার (২৯%), যা দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিক অস্থিরতার সাথে লড়াই করে চলেছে। এরপর রাশিয়ার (২০%) নাম আসে, যা ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি। ব্রাজিল (১৪.৭৫%), মেক্সিকো (৮.৫%) এবং দক্ষিণ আফ্রিকা (৭.২৫%) উচ্চ সুদের হারের দেশগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
এর বিপরীতে, ভারতে রিজার্ভ ব্যাংক সম্প্রতি রেপো রেটে ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমানোর ফলে তা ৫.৫% এ নেমে এসেছে। এই হার আমেরিকা (৪.৫%), ব্রিটেন (৪.২৫%) এবং সৌদি আরব (৫%) এর চেয়ে সামান্য বেশি। চীন (৩%), জাপান (০.৫%) এবং সুইজারল্যান্ড (০.২৫%) এর মতো দেশে সুদের হার অত্যন্ত কম, যা তাদের স্থিতিশীল অর্থনীতিকে প্রতিফলিত করে।
কি পাকিস্তানও তুরস্কের পথে?
তুরস্কের মতো পাকিস্তানও গুরুতর অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানের মুদ্রা 'রুপি' ক্রমাগত অবমূল্যায়নের সম্মুখীন হচ্ছে এবং দেশটি দেউলিয়ার দ্বারপ্রান্তে। পাকিস্তান তুরস্কের সাথে শক্তিশালী রাজনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে, কিন্তু উভয় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা একই রকম। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) থেকে সাহায্য পাওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না।
