মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার আক্রমণাত্মক ট্যারিফ নীতি নিয়ে একটি বড়ো ঘোষণা করেছেন। ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে ট্যারিফ থেকে প্রাপ্ত অর্থ আমেরিকার সামরিক ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত উৎপাদনকে শক্তিশালী করতে ব্যবহার করা হবে, উপভোক্তা পণ্য যেমন জুতা (স্নিকার্স) এবং পোশাক (টি-শার্ট) নয়।
ট্রাম্প বলেছেন যে তার লক্ষ্য আমেরিকায় অস্ত্র, চিপস, কম্পিউটার, এআই সরঞ্জাম, ট্যাঙ্ক এবং জাহাজের মতো উচ্চ-প্রযুক্তির পণ্যের ঘরোয়া উৎপাদন বৃদ্ধি করা। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, "আমরা স্নিকার্স এবং টি-শার্ট তৈরি করতে চাই না, আমরা শক্তিশালী সামরিক সরঞ্জাম এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগত পণ্য তৈরি করতে চাই।"
ট্রাম্প নিউ জার্সিতে এয়ার ফোর্স ওয়ানে উঠার আগে এই বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি আমেরিকার ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্টের সেই বক্তব্য পুনরাবৃত্তি করেছেন, যেখানে বলা হয়েছিল যে আমেরিকাকে একটি বৃহৎ বস্ত্র শিল্পের প্রয়োজন নেই। তবে, আমেরিকার ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ টেক্সটাইল অর্গানাইজেশনস এই অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করেছে।
ট্যারিফ নীতি থেকে ট্রাম্পের বড়ো পরিকল্পনা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই পদক্ষেপটিকে তার দ্বিতীয় মেয়াদে প্রস্তুত করা আক্রমণাত্মক অর্থনৈতিক নীতির অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তিনি ভারত সহ অনেক দেশে ট্যারিফ আরোপ করেছেন। তবে, কিছু ট্যারিফ অস্থায়ীভাবে স্থগিত করা হয়েছে, তবে তা বাতিল করা হয়নি।
ট্রাম্প শুক্রবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের উপর ১ জুন থেকে ৫০% শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়ে তার আক্রমণাত্মক ব্যবসায়িক অবস্থান আরও শক্তিশালী করেছেন। তিনি আমেরিকায় বিক্রি হওয়া সমস্ত আমদানি করা আইফোনের উপর ২৫% ট্যারিফ আরোপের হুমকি দিয়েছেন। ট্রাম্প বলেছেন যে যদি কোম্পানিগুলি আমেরিকায় উৎপাদন ইউনিট স্থাপন না করে, তাহলে তাদের উপর প্রচুর ট্যাক্স আরোপ করা হবে।
ফোন কোম্পানিগুলিকে হুঁশিয়ারি
ট্রাম্প সরাসরি অ্যাপল এবং অন্যান্য স্মার্টফোন কোম্পানিগুলিকে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন যে আমেরিকায় বিক্রি হওয়া স্মার্টফোনের উৎপাদন আমেরিকাতেই হতে হবে, চীন, ভারত বা অন্য কোনও দেশে নয়। ট্রাম্প দাবি করেছেন যে তিনি এই বিষয়ে অ্যাপলের সিইও টীম কুকের সাথেও কথা বলেছেন।
'গোল্ডেন ডোম' ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পের ঘোষণা
ট্রাম্প তার পরিকল্পনায় একটি উচ্চাভিলাষী 'গোল্ডেন ডোম' ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থারও ঘোষণা করেছেন। এই ব্যবস্থার অধীনে ১৭৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে উপগ্রহের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করা হবে, যা রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া এবং ইরানের মতো দেশ থেকে আসা পারমাণবিক এবং ঐতিহ্যগত হুমকির মোকাবেলা করার জন্য মহাকাশ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে পারবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই ঘোষণা তাঁর নীতির স্পষ্ট ছবি তুলে ধরে—আমেরিকাকে আবার বিশ্বব্যাপী উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা এবং উচ্চ প্রযুক্তি এবং সামরিক সরঞ্জামে আত্মনির্ভরশীল হওয়া। এই পদক্ষেপ ভারত সহ সেইসব দেশের জন্যও একটি বড়ো ইঙ্গিত, যারা আমেরিকার বাজারে তাদের পণ্য বিক্রি করে।