টয়লেটে যাওয়ার জন্য ২.৬৫ লক্ষ টাকার ক্ষতি! ইন্ডিগোর অবহেলার শিকার ব্র্যান্ডিং কনসালট্যান্ট

টয়লেটে যাওয়ার জন্য ২.৬৫ লক্ষ টাকার ক্ষতি! ইন্ডিগোর অবহেলার শিকার ব্র্যান্ডিং কনসালট্যান্ট
সর্বশেষ আপডেট: 07-06-2025

জয়পুর বিমানবন্দর থেকে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে বিখ্যাত ব্র্যান্ডিং কনসালট্যান্ট চয়ন গার্গকে শুধুমাত্র টয়লেটে যাওয়ার কারণে ২.৬৫ লক্ষ টাকার ক্ষতি স্বীকার করতে হয়েছে — এবং ফিরে এসে তিনি দেখলেন যে ফ্লাইটটি উড়ে গেছে।

ব্যবসা: দেশের সবচেয়ে বড় এয়ারলাইন বলে পরিচিত ইন্ডিগো আবারও তাদের গ্রাহক সেবার জন্য প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এবার ঘটনাটি ঘটেছে একজন ব্র্যান্ডিং কনসালট্যান্ট চয়ন গার্গের সাথে, যার ফ্লাইট শুধুমাত্র টয়লেটে যাওয়ার কারণে মিস হয়ে গেছে — এবং ফিরে এসে তিনি জানতে পারলেন যে বোর্ডিং গেট বন্ধ হয়ে গেছে।

চয়ন গার্গ জয়পুর থেকে মুম্বাই একটি অত্যন্ত জরুরী ব্যবসায়িক বৈঠকের জন্য যাচ্ছিলেন। তিনি সকাল ৪:৪০ টায় বিমানবন্দরে পৌঁছে গিয়েছিলেন এবং ৫:১০ টার মধ্যে তার সিকিউরিটি চেকও শেষ হয়ে গিয়েছিল। বিমানবন্দরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর ইন্ডিগোর একজন কর্মী তাকে জানালেন যে বোর্ডিং ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে শুরু হবে। এদিকে চয়ন টয়লেটে গেলেন। কিন্তু ১২ মিনিট পর যখন তিনি ফিরে এলেন, তখন বোর্ডিং গেট বন্ধ হয়ে গেছে এবং তার ফ্লাইট উড়ে গেছে।

বোর্ডিং বন্ধ, কোনো কল নেই, কোনো ঘোষণা নেই

সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হলো, বোর্ডিং বন্ধ হওয়ার কোনো ঘোষণা করা হয়নি এবং চয়নকে কোনো কলও করা হয়নি। যখন তিনি এর কারণ জিজ্ঞাসা করলেন, তখন তাকে বলা হলো যে জয়পুর বিমানবন্দর একটি ‘নীরব বিমানবন্দর’। অর্থাৎ, এখানে কোনো ঘোষণা করা হয় না। কিন্তু চয়ন দাবি করেছেন যে তিনি একই বিমানবন্দরে দেহরাডুন যাওয়ার ফ্লাইটের জন্য ঘোষণা শুনেছিলেন। এতে ইন্ডিগোর নীরবতা আরও বেশি বিরক্তিকর মনে হয়েছে। এয়ারলাইন কর্মীরা কোনো বিকল্প ব্যবস্থা করতে পারেনি, কোনো রিফান্ড দেননি এবং কোনো সহযোগী আচরণও দেখাননি।

মুম্বাইয়ের বৈঠক বাতিল, বড় ক্লায়েন্ট হাতছাড়া

চয়নের কথা, মুম্বাইয়ের বৈঠকটি তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। একজন বড় ক্লায়েন্ট তাকে প্রথমবার দেখা করার কথা ছিল এবং এই দেখা করার উপর তার প্রায় ২.৬৫ লক্ষ টাকার একটি চুক্তি নির্ভর ছিল। ফ্লাইট মিস হওয়ার কারণে তিনি বৈঠকে যোগ দিতে পারেননি এবং ক্লায়েন্ট চুক্তিটি বাতিল করে দিয়েছে। তিনি এই ঘটনার জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং এয়ারলাইনের অবহেলাকে এর কারণ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, "এটি শুধুমাত্র একটি ফ্লাইট মিস করার ব্যাপার নয়, এটি পেশাদার দায়িত্ববোধ এবং মানবতার অভাবের এক উদাহরণ।"

লিঙ্কডইনে অভিজ্ঞতা শেয়ার, পোস্ট ভাইরাল

চয়ন এই পুরো ঘটনাটি লিঙ্কডইনে একটি পোস্টের মাধ্যমে শেয়ার করেছেন, যা দ্রুত ভাইরাল হচ্ছে। তিনি পোস্টে লিখেছেন: কি এটাই ভারতের নম্বর ওয়ান এয়ারলাইনের সেবা নীতি? আমরা গ্রাহক অভিজ্ঞতার বড় বড় কথা বলি, কিন্তু যখন একজন আসল গ্রাহকের সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তখন সিস্টেম পুরোপুরি গায়ব থাকে। কোনো সংবেদনশীলতা নেই, কোনো বুদ্ধিমত্তা নেই, শুধুমাত্র প্রক্রিয়া এবং কঠোরতা।

লোকেরা এই পোস্টে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। অনেক ব্যবহারকারী চয়নের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন, অন্যদিকে কেউ কেউ এয়ারলাইনের নীরব বিমানবন্দর নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

‘নীরব বিমানবন্দর’ নাকি সিস্টেমের ত্রুটি?

জয়পুর বিমানবন্দরকে ‘নীরব বিমানবন্দর’ বলে ঘোষণা না করাটা যদিও নীতির আওতায় পড়ে, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের ঘটনায় যাত্রীকে ব্যক্তিগতভাবে অবহিত করা এয়ারলাইনের দায়িত্ব। একজন জ্যেষ্ঠ বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞের মতে, যদি যাত্রী সিকিউরিটি চেকের পর গেট এলাকায় থাকে, তাহলে এয়ারলাইনকে তাকে শেষ সময় পর্যন্ত ডাকা উচিত, বিশেষ করে যদি সে কাছেই উপস্থিত থাকে। কল বা মেসেজের মাধ্যমে যোগাযোগ করা একটি মৌলিক গ্রাহক সেবা অনুশীলন।

ইন্ডিগোর পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া নেই

এই পুরো ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ইন্ডিগোর পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া চয়নের পোস্টেরও কোনো উত্তর দেওয়া হয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের ঘটনা শুধুমাত্র একজন যাত্রীর সমস্যা নয়, এটি ভারতের বিমান চলাচল খাতের একটি বড় দুর্বলতা তুলে ধরে — যেখানে প্রক্রিয়া মানবতার উপর ভারী পড়ে।

Leave a comment