মুডি'সের ধাক্কায় আমেরিকার ক্রেডিট রেটিং AAA থেকে AA1-এ নেমে গেল

মুডি'সের ধাক্কায় আমেরিকার ক্রেডিট রেটিং AAA থেকে AA1-এ নেমে গেল
সর্বশেষ আপডেট: 17-05-2025

বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে পরিচিত আমেরিকা বড় ধাক্কা পেয়েছে। বিখ্যাত ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি Moody’s আমেরিকার ক্রেডিট রেটিং AAA থেকে কমিয়ে AA1 করেছে। ১৯১৭ সালের পর এটিই প্রথমবার যখন Moody’s আমেরিকাকে ‘পারফেক্ট’ ক্রেডিট স্কোর থেকে বাদ দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কেবলমাত্র আমেরিকার বাজার নয়, বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদেরও চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।

AAA রেটিং থেকে নিচে কেন নেমে গেল আমেরিকার স্বাধীনতা?

Moody’s-এর মতে, আমেরিকার সরকারি ঋণ এবং সুদের পরিমাণ গত এক দশকে বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা একই রেটিংযুক্ত অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেক বেশি। এজেন্সিটি আরও বলেছে যে আগামী বছরগুলিতে আমেরিকার ঋণ আরও বৃদ্ধি পাবে, যার ফলে দেশের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যের উপর দীর্ঘমেয়াদী চাপ পড়তে পারে।

এজেন্সিটির অনুমান, ২০৩৫ সালের মধ্যে আমেরিকার মোট সরকারি ঋণ তার GDP-এর ১৩৪% পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা বর্তমানে প্রায় ৯৮%। এর অর্থ হল, আমেরিকার উপর ঋণের বোঝা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে।

আমেরিকার ক্রেডিট রেটিং এর আগেও আঘাত পেয়েছিল

Moody’s-এর আগে S&P (২০১১) এবং Fitch Ratings (২০২৩)ও আমেরিকার AAA রেটিং কমিয়েছে। এখন তিনটিই বৃহৎ রেটিং এজেন্সি আমেরিকাকে AAA থেকে নিচের রেটিং দিয়েছে, যা বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ অর্থনীতির দুর্বল হয়ে পড়া অর্থনৈতিক স্বাধীনতার স্পষ্ট ইঙ্গিত।

এর সাধারণ আমেরিকান এবং বিশ্ববাজারে কী প্রভাব পড়বে?

প্রতিবেদন অনুসারে, Moody’s-এর এই পদক্ষেপের ফলে আমেরিকান ট্রেজারি ইয়েল্ডস (সরকারি বন্ডের উপর সুদের হার) বৃদ্ধি পেতে পারে। এর সরাসরি প্রভাব সাধারণ মানুষের উপর পড়বে কারণ হোম লোন, কার লোন এবং ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার বৃদ্ধি পেতে পারে। ইতিমধ্যেই মূল্যবৃদ্ধি, ট্যারিফ এবং অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে থাকা আমেরিকানদের জন্য এটি আরও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

কেবলমাত্র আমেরিকা নয়, বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীরাও এই সিদ্ধান্তের পর সতর্ক হয়ে উঠেছে। যদি আমেরিকার ঋণ ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়, তবে এর প্রভাব বিশ্বব্যাপী আর্থিক বাজারেও দেখা যেতে পারে।

ওয়াইট হাউস এবং রাজনৈতিক বিতর্ক

Moody’s-এর এই সিদ্ধান্ত আমেরিকায় রাজনৈতিক বিতর্ককে আরও উত্তাপ দিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের মুখপাত্ররা বাইডেন প্রশাসনের উপর দুর্বল নীতির অভিযোগ আনেন এবং বলেন যে তারা ‘বিগ ব्यूটিফুল বিল’-এর মাধ্যমে সরকারি ব্যয় এবং অপচয় বন্ধ করে পরিস্থিতি উন্নত করার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে, বাইডেন প্রশাসন এই রেটিং নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছে যে তারা পূর্ববর্তী সরকারের ভুলত্রুটি সংশোধন করার চেষ্টা করছে।

আমেরিকার অর্থনীতিতে বর্তমান অবস্থা

২০২৪ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে আমেরিকার অর্থনীতি ০.৩% সংকুচিত হয়েছে।

সরকারি ব্যয় হ্রাস এবং আমদানি বৃদ্ধির ফলে দেশীয় উৎপাদন প্রভাবিত হয়েছে।

বর্ধিত ট্যারিফের আশঙ্কায় অনেক কোম্পানি স্টক জমা করেছে, যার ফলে ট্রেড ঘাটতি বেড়েছে।

আগামীতে কী হতে পারে?

Moody’s-এর সতর্কবার্তার পর আমেরিকার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল তার ঋণ নিয়ন্ত্রণে আনা। যদি তা না করা হয়, তবে কেবলমাত্র দেশীয় বাজার নয়, বিশ্ব অর্থনীতির উপরও এর প্রভাব পড়বে। বিনিয়োগকারী এবং সাধারণ নাগরিকদের এখন আরও সচেতন থাকতে হবে এবং তাদের আর্থিক সিদ্ধান্তে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

Leave a comment